চিকিৎসক জিজ্ঞেস করলেন: ‘ভারতীয় হকির ভবিষ্যৎ কী?’ বিশ্ব হকির চিরশ্রেষ্ঠ নায়কের ছোট্ট উত্তর: ‘অন্ধকার!
তিনি তখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের বিছানায় শুয়ে। ১৯৭৯-র নভেম্বর মাসের এক বিকেল। চিকিৎসক জিজ্ঞেস করলেন: ‘ভারতীয় হকির ভবিষ্যৎ কী?’ বিশ্ব হকির চিরশ্রেষ্ঠ নায়কের ছোট্ট উত্তর: ‘অন্ধকার!’ পরের প্রশ্ন, ‘কেন এরকম হল?’ এবার ধ্যানচাঁদ: ‘আমাদের ছেলেরা শুধু খেতে জানে, খাটতে জানে না।’ শেষ জীবনে হকি নিয়ে ধ্যানচাঁদের হতাশাটা ছিল এরকমই।
মৃত্যুর মাস ছয়েক আগের আরেকটি ঘটনা। ঝাঁসির প্রেমগঞ্জের বাড়িতে ভগ্নদেহে ধ্যানচাঁদ। পন্ডিত বৈদ্যনাথ শর্মা তাঁর পুরনো বন্ধু। তিনি দেখতে গিয়েছেন ধ্যানচাঁদকে। বৈদ্যনাথের মনে হল, বন্ধুকে বিদেশে কোথাও পাঠানো দরকার। চিকিৎসা ও বিদেশে ঘুরে মন ভালো করা — দুটোই হবে। তিনি ধ্যানচাঁদকে আমেরিকা ও ইউরোপে যাবার প্রস্তাব দিলেন। কেটে ফেললেন বিমান টিকিটও। ধ্যানচাঁদের প্রবাসী কিছু বন্ধুও ওখানে সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেললেন। তাঁরা বললেন, এতে বিদেশে থাকা ধ্যানচাঁদ-ভক্তদের মধ্যে আবার নতুনভাবে তাঁর স্মৃতি জাগিয়ে তোলা যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদেশে যাননি ধ্যানচাঁদ।
বন্ধুদের যাবতীয় অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘স্মৃতি জাগানোর জন্য বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। আমি জানি, বিদেশে হকিপ্রেমীদের আমার প্রতি ভালোবাসা কত গভীর। আমি এটাও জানি, আমার মৃত্যুর পর তাঁরা কাঁদবেন। কিন্তু চোখ থেকে এক ফোঁটা জলও পড়বে না ভারতীয়দের। এদের আমি ভালোভাবে চিনি।’ নিজের দেশ নিয়ে হকির জাদুকরের হতাশাটা তখনই তীব্র।
কিন্তু এসব তো জীবনের শেষ কয়েক মাসের ঘটনা। আগে তাঁর জীবন-দর্শন ছিল একেবারেই অন্যরকম। হৃদয় জুড়ে ছিল শুধুই ভারত আর হকি। এত হতাশা। এত অভিমান। তবু হকি কখনও তাঁর হৃদয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। তিনি কখনও দেননি তাঁর ‘ধর্ম’ বিসর্জন। ১৯৭৯-র ৩ ডিসেম্বর ভোর ৪টে ২৫ মিনিটে বিশ্ব হকির চিরকালের সেরা