সম্প্রতি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে খাসি ষ্টুডেন্টস ইউনিয়নের এক সমদলে অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে
আজ থেকে চার বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের পয়লা নভেম্বর তিনসুকিয়া জেলার ধলা বিছনিমুখ গ্রামে সন্দেহ জনক আলফা সদস্য পাঁচ জন হিন্দু বাঙালিকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। এই চার বছরেও বিজেপি সরকার হত্যাকারী দের গ্রেপ্তার করতে পারে নি। অবশ্য সরকার প্রয়োজন বোধ করে নি।
রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা ২০১৫ সালের সম্ভবত ১০ই এপ্ৰিল বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন। রাজ্যে তখন প্রয়াত তরুণ গগৈর সরকার। অসম বিধানসভার বাজেট অধিবেশন চলছিলো। যদিও ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা বাজেট অধিবেশনে কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলেন।
সারা বিশ্বে এতো বড় বড় রাষ্ট্র থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন, তা আজও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। অবশ্য অনেকের ধারণা, ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা বিজেপি দলে যোগদান করার আগে বাংলাদেশে তিনি হিন্দু বাঙালির মনস্তত্ব অধ্যয়ন করতে গিয়েছিলেন। কারণ অসমের হিন্দু বাঙালির শেকড় হচ্ছে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ।
তাই অসমের হিন্দু বাঙালিদের সমর্থন আদায় করতে হলে তাঁদের দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে হবে। অর্থাৎ হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যত বেশি বিভাজন তৈরি করা যাবে, ততোই বিজেপি-র লাভ হবে। নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন, হিমন্তবিশ্ব শর্মার মুখে মুসলমানের বিরুদ্ধে উগ্র মুসলিম বিরোধী বক্তব্য শুনে অসমের হিন্দু বাঙালিরা সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়া পরিলক্ষিত হয়।
এখানে শিক্ষিত বা অশিক্ষিতের কোনো ভেদাভেদ থাকার কথা নয়। বিপরীতে, যে কোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাই গত চার বছর ধরে পয়লা নভেম্বর কিছু সংখ্যক হিন্দু বাঙালি সংগঠন তথা ব্যাক্তি জিকির দিয়ে ওঠা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মা গতকাল আলফা প্রধান পরেশ বরুয়াকে মূল স্রোতে ফিরে আসার প্রেক্ষিতে আত্মসমৰ্পণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এটা খুব ভালো পদক্ষেপ। রাজ্যের আপামর জনগন শান্তি কামনা করেন। কিন্তু বিজেপি সরকার এনডিএফবি-র দুর্ধর্ষ নেতা রঞ্জন দৈমারি ও আলফা প্রধান পরেশ বরুয়ার মধ্যে দ্বিচারিতা প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধলা কাণ্ডে পঞ্চ শহিদের হত্যা কারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারার দরুণ কী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কেউ পথে নেমে আন্দোলন করেছে? সাধারণত রাজনৈতিক দলেরও একটা স্বকীয় দুর্বলতা থাকে। সেটা হচ্ছে “ভোট”।
বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক থেকে কোন ব্যাক্তি বা সংগঠন হিন্দু বাঙালিকে সরিয়ে আনতে পেরেছে? তাহলে কেন সর্বানন্দ সোনোয়াল বা হিমন্তবিশ্ব শর্মা শুধু শুধু আলফাকে গ্রেপ্তার করতে যাবে? হিন্দু বাঙালির বিরুদ্ধে অন্যায় অবিচার করার পাশাপাশি রাজনৈতিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা দেখে যদি হিন্দু বাঙালিরা হিন্দুত্ব রক্ষার স্বার্থে বিজেপি দলকেই অন্ধের মতো ভোট দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, তাহলে এই জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধান করতে এমন বলিষ্ঠ নেতা ভূ ভারতে জন্মগ্ৰহণ করেন নি বলে অনেকেই মনে করেন।
ওদিকে, সম্প্রতি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে খাসি ষ্টুডেন্টস ইউনিয়নের এক সমদলে অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। রাজ্যের বেকারত্ব বৃদ্ধি ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে এই ছাত্র সংগঠনটি পথে নেমেছিলো। মেঘালয়ের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে এনপিপি, ইউডিএফ ও বিজেপি দল। উত্থাপিত অভিযোগ অনুসারে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মেঘালয় বিধানসভায় বর্তমানে সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হচ্ছে এনপিপি, দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ দল ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও বিজেপি দল মিলে শাসন শাসন করছে। যদিও গত সাড়ে চার বছরে সরকার এমন কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ করে নি, যার সুবাদে আগন্তুক নির্বাচনে জনগনের কাছে ভোট চাইতে যেতে পারে এই সরকার।
বরঞ্চ, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার দরুণ খাসি ও গারো সম্প্রদায়ের মধ্যে যথেষ্ঠ অসন্তুষ্টি দানা বেঁধে উঠেছিলো। এ ছাড়াও রাজ্যে সাত হাজার পদ খালি পড়ে রয়েছে যদিও সরকার ওই শূণ্য পদগুলি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওদিকে, মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেস দল আগামি নির্বাচনে বেকারত্বের এই জ্বলন্ত ইস্যু টিকে কাজে লাগিয়ে খাসি সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করে তুলেছিলো বলে জানা গেছে।
সরকার বিরোধী এমন এক পরিস্থিতি তে ভোট মেরুকরণের স্বার্থে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। অথচ বাঙালি ভেবে যাঁদের মারধর করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই অসমিয়া ও খাসি সম্প্রদায়ের মানুষও রয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। অবশ্য পরবর্তীতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আপাততঃ আহত ব্যাক্তিরা সবাই বিপদ মুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই সাম্প্রদায়িক উস্কানির ঘটনায় এনপিপি ও ইউডিএফ নিজ নিজ ক্ষেত্রে ট্রাইবেল ভোট আসন্ন নির্বাচনে তাদের সপক্ষে মেরুকরণ করতে সক্ষম হওয়ার বিপরীতে নন ট্রাইবেল ভোট বিজেপি-র পক্ষে টানতে পারবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। যার দরুন, সারা ভারতে এই ঘটনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া সত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখে কুঁলুপ এঁটে বসে আছেন।
মেঘালয়ের অনাকাঙ্খিত ঘটনা সম্পর্কে একটিও বিবৃতি এখন পর্যন্ত দেন নি। এমন কী, এখন পর্যন্ত একজন অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নি, যেমন ধলা কাণ্ডের অপরাধীকেও গ্রেপ্তার করা হয় নি। কারণ, তাঁরা জানেন যে মেঘালয়ের হিন্দু বাঙালিরা বিজেপি দলকেই ভোট দেবেন।
শুধু অসম কিংবা মেঘালয়ই নয়, সমগ্র উত্তরপূর্বের হিন্দু বাঙালিদের অধিকার খর্ব করে ক্রীতদাস বানাতে চাইছে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদীর নয়নের মণি বিজেপি দল ও সরকার। এমন কথাও এখন রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।