যারা শিক্ষক তারা এই বিষয়টা নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠিত
শিলচর: প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি চালু করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে। অথচ কেউ মুখ খুলে কিছু বলছেন না। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে গণিত ও বিজ্ঞান ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে হবে। এখন মাতৃভাষায় বাংলা বা অসমীয়ায় গণিত ও বিজ্ঞান পড়ানো যাবে না ক্লাস সিক্স থেকে। অনেকেই সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, যে অন্ততপক্ষে ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি ভাষাটা ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করতে পারবে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিক থেকে ইংরেজি উঠিয়ে যা সর্বনাশ করেছিল সে রাজ্যের। সেটা এখনো সেই রাজ্যের মানুষ ভুলতে পারছেন না।তাই আসাম সরকার প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি চালু করায় অনেকেই খুশি হয়েছেন। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা হল একটা ছাত্র ক্লাস ওয়ান থেকে বাংলা পড়ে আসছে। হঠাৎ যদি তার বিজ্ঞান বা গণিতের বিষয়টা ইংরেজি হয়ে যায় তাহলে কি হবে। একটা সময় যারা মেট্রিক বাংলা মাধ্যমে পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হতেন এবং কলেজে গিয়ে দেখতেন ইংরেজি মাধ্যম।
তখন ইংরেজি রপ্ত করতে গিয়ে অনেক অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হতো । তবে মেট্রিক পাশ করার পর মোটামুটি একটা পরিণত বোধ এসে যায়। কিন্তু ক্লাস সিক্সের একটি ছেলে নেহাতই ছোট। নাক দিয়ে সর্দি ঝরছে। তারপক্ষে কঠিন কঠিন ইংরেজি পরিভাষাগুলো আয়ত্ত করা এক কথায় অসম্ভব। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ান এমন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হল। তারা যা জানালেন সেটা শুনে রীতিমতো উৎকন্ঠা জাগল।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা তো ক্লাস সিক্সের বাচ্চাদের ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়িয়ে নেব। কিন্তু তারা তো সেটা গ্রহণ করতে পারছে না। অংকটা তাও চালিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞানের পরিভাষাগুলো ,শব্দগুলো এত কঠিন যে হঠাৎ করে বাংলা মাধ্যমের কোন বাচ্চা সেটা রপ্ত করতে পারে না। বাচ্চাদের বুঝালেই তো শুধু হবে না তাদেরও বুঝতে হবে। এই সমস্যা সাংঘাতিকভাবে দিয়েছে বাংলা মাধ্যমে স্কুলগুলোতে।
যেহেতু এখন বাংলা মাধ্যমে গরীবের ছেলে মেয়েরাই বেশি পড়াশোনা করে তাই সমস্যাটা ততটা সামনে আসছে না। যে শিক্ষক তাকে পড়াচ্ছেন ক্লাস ওয়ান থেকে সেই শিক্ষক ভালোই বুঝতে পারছেন ,তার ছাত্রটা হঠাৎ করে ইংরেজি মাধ্যমে বিজ্ঞানের ক্লাস কিছুই বুঝতে পারছে না। অনেক শিক্ষক আক্ষেপ করে বললেন এভাবে চললে তো এসব ছাত্ররা বড় হয়ে সমস্যায় পড়ে যাবে। কিভাবেই বা পাশ করবে ক্লাস সিক্সে। তাই বিষয়টা নিয়ে অনেক কিছু ভাবার আছে।
এ সমস্যাটা নিয়ে কেউই কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না।শিক্ষকও জানেন না ব্লক এলিমেন্টারি এডুকেশন অফিসার জানেন না, কেউ জানেন না। কিন্তু যারা পড়াচ্ছেন তারা ঠিকই টের পাচ্ছেন কি হচ্ছে। কোন কিছু পরিকল্পনা আর বাস্তবের মাটিতে সেটার প্রয়োগ করার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক সেটা ঠিকই বোঝা যাচ্ছে। যারা শিক্ষক তারা এই বিষয়টা নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠিত। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সমাধানটা কি জানেন না কেউ।