হিমন্তের উদ্যোগে বরাক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন পারে নতুন কোনও বাঙালি মুখ!

4 - মিনিট |

রাজনীতিতে কোনও স্থায়ী “শত্রু” বা স্থায়ী “মিত্র” নেই। আজ যে ব্যক্তি চোখের বালি,কাল সেই ব্যক্তি হয়ে যায় অত্যন্ত কাছের মানুষ

অজয় গুপ্ত

দিলীপকুমার পাল “জুজু” তাড়া করে ফিরছে না তো কাছাড় বিজেপির একাংশ নেতাকে?
শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপকুমার পালের ফের বিজেপিতে ঢোকার পথ প্রশস্ত হতে পারে! এই আতঙ্কে এখন প্রায় দিশেহারা কাছাড় জেলা বিজেপির একাংশ শীর্ষ নেতা! মুখে সরাসরি কিছু না বললেও অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। আলোচনাও করেছেন আড়ালে -আবডালে বসে। দলে ফের এন্ট্রি নিলে কতটা লাভ , কতটা ক্ষতি হতে পারে, সেই বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দর মহলে।


বস্তুত এবারের বন্যার সময় দেখা যায়, বরাকের জলে হাবুডুবু খেতে থাকা শহরের নাগরিকদের পাশে দাঁড়ান শিলচরের প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপকুমার পাল। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই তিনি নামেন ত্রান সামগ্রী বিলি করার কাজে! তাঁকে পাবলিক স্কুল রোড এলাকায় ত্রান সামগ্রী বিলি করে ফিরে আসার সময় দেখতে পান মুখ্যমন্ত্রী ড.হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী তো রীতিমতো জড়িয়ে ধরে সৌজন্য বিনিময় করেন দিলীপ বাবুর সঙ্গে! দু’জনের নৈকট্যের ছবিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! দিলীপ বাবুর অনুগামীরা এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করে পোস্ট করেছেন। কমেন্ট করেছেন “টাইগার জিন্দা হ্যায়!”

এখানেই শেষ নয়,গত 21 জুলাই গুয়াহাটিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে 1লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে। দু’জনের মধ্যে হয় আলাপ-আলোচনাও। কিন্তু কি নিয়ে আলোচনা হলো দু’জনের মধ্যে? তা খোলাশা হয় নি! তবে এটা সত্য যে শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী এবং সাংসদ ডা.রাজদীপ রায়কে বন্যার সময়ে যতটা সক্রিয় হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল,ততটা সক্রিয় হিসেবে দেখতে পান নি মুখ্যমন্ত্রী! এ কথা কিন্তু শিলচরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বুঝিয়ে দেন বন্যার সময় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে তাঁর কাছে 1500-র বেশি হোয়াটসঅ্যাপ এবং মোবাইল ফোনে কল গেছে বলে মেনে নিয়ে।

এ ছাড়াও বন্যার পর পর মুখ্যমন্ত্রীর শনবিল সফরের একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। এই ভিডিওতে দেখা যায় করিমগঞ্জের দুই বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল এবং বিজয় মালাকারকে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন,”বাপরে! শিলচরের মানুষের কতটা রাগ জমে আছে জন প্রতিনিধিদের ওপর,তা টেরই পেতাম না সরেজমিনে না আসলে। অনেক কষ্টে আমি সামাল দিয়েছি পরিস্থিতি!”
সব মিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট,ড.হিমন্তবিশ্ব শর্মা এখন পছন্দ করতে শুরু করেছেন দিলীপকুমার পালকে। তাই মুখ্যমন্ত্রী ত্রান তহবিলে তাঁর দেওয়া অনুদানের চেক গ্রহন করে নিজেই সেই ছবি আপলোড করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়!

Advertisement


রাজনীতিতে কোনও স্থায়ী “শত্রু” বা স্থায়ী “মিত্র” নেই। আজ যে ব্যক্তি চোখের বালি,কাল সেই ব্যক্তি হয়ে যায় অত্যন্ত কাছের মানুষ! দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসার পর থেকেই দিলীপকুমার পাল বেজায় তৎপর হয়ে পড়েছেন শিলচরে তাঁর জনসংযোগ নতুন করে ঝালিয়ে নিতে! শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ম করে যাচ্ছেন রোজ। কথা বলছেন,সুখ- দুঃখের খবর নিচ্ছেন। আর এইসব কাজ করে তা আপলোড করে যাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

Advertisement

For enquiries in NE India and West Bengal write to- krcfoundation@gmail.com

এই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখার পরই শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দর মহলে ব্যাপক চর্চা! মানসিক ভাবে তাঁর পক্ষে থাকা বিজেপি ক্যাডাররা আনন্দে রয়েছেন,উল্টো দিকে যারা তাঁকে সহ্য করতে পারেন না, তাঁরা টেনশন করতে শুরু করে দিয়েছেন। দিলীপকুমার পাল শিলচরের নতুন পুরনিগমের মেয়র হতে পারেন, এমনটাও শোনা যাচ্ছে! ফলে বিজেপির অন্দর মহলে যারা এবার পুরনিগমের ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী, এবং দিলীপকুমার পালের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে নেই, তাঁরাই বেশি উদ্বিগ্ন! দিলীপকুমার পালকে সামনে রেখে পুরনিগমের ভোট হলে অনেকেই ছিটকে যেতে পারেন পছন্দ-অপছন্দের দোলাচলে! কেননা দিলীপকুমার পাল চাইবেন নিজের পছন্দের লোক নিয়ে নতুন পুরনিগমের বোর্ড গঠন করতে।

দলত্যাগ করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে 2021সালের ভোটে দাঁড়ানোর অভিযোগে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল দিলীপকুমার পালকে। এখন কেমন করে তিনি দলে “এন্ট্রি “নেবেন? এ নিয়ে কোন বার্তা যাবে দলের কর্মীদের মধ্যে? এসব নিয়ে আলোচনাও বিক্ষিপ্তভাবে চলছে দলের কাছাড় জেলা কমিটির অফিস চত্বরে!

এ বিষয়ে কি বলছেন কাছাড় জেলা বিজেপির সভাপতি বিমলেন্দু রায়‌‌‌?

বিমলেন্দু রায়ের বক্তব্য,” এখন পর্যন্ত প্রদেশ বিজেপির তরফে কোনও নির্দেশ আসেনি দিলীপকুমার পালকে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। তিনি এখন আমাদের দলের সাধারণ সদস্যও নন। ফলে এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!”


বিমলেন্দু রায়‌‌‌ অস্বীকার করলেও কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা আলাদা। ইতিমধ্যেই কাছাড় জেলা বিজেপির অফিস বেয়ারার মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে প্রদেশ বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফণী শর্মার নির্দেশে। প্রদেশ সভাপতি ভবেশ কলিতাও এই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী। এর ওপর এবার বিজেপির কেন্দ্রীয় কর্ণধার সমিতির সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল। সর্বানন্দ সানোয়াল আবার বেজায় পছন্দ করেন স্বচ্ছভাবমূর্তি থাকা দিলীপকুমার পালকে। এটাও প্লাস পয়েন্ট দিলীপকুমার পালের বিজেপিতে ঢোকার জন্য।

এখানেই শেষ নয়, বিজেপি সূত্রেই জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও কাছাড়ের ডলু চা বাগানের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর শিলচরের সাংসদ ডা রাজদীপ রায়ের ভূমিকায় বীতশ্রদ্ধ! সাংসদের নির্দেশে যে রিপোর্ট দিসপুরে পাঠিয়েছিল কাছাড়ের জেলা প্রশাসন,তা ছিল ভুল! বাগানের শ্রমিকরা যে সরকারের ওপর হাড়ে হাড়ে চটা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর,তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট হতেই তিনি বিরক্ত শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়ের ওপর। ফলে সাংসদ ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে মুখ্যমন্ত্রীর বিষ নজরে পড়েছেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীও। আগামী দিনে এই দুজনের চলার পথে অস্বতি বাড়াতে তাই দিলীপকুমার পালকে সামনে আনতে চাইছেন কৌশলী রাজনীতিবিদ ড.হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এছাড়াও আগামী দিনে আরও সর্বজন গ্রাহ্য অন্য দলের কোনও বড় মাপের বাঙালি হিন্দু নেতাকে বিজেপিতে এনে আরও বড় সড় চমকও দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী!

Advertisements | 5E For Success

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news