জলসেচ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে বরাকের সন্তান
শিলচর: বরাকের সন্তান গোপাল সানা রাজকুমার জলসেচ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন এমাসে। বহু বছর পর বরাকের কোন ব্যক্তি রাজ্যের কোন সরকারি বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। তাই এক্ষেত্রে তাকে নিয়ে অবশ্যই গর্ব করতে পারেন বরাকের মানুষ। সোনাইর চান্দপুরে জন্ম। নিত্য গোপাল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা তারপর আরইসি। সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রির করার পর সেচ বিভাগে চাকরি।
চাকরিজীবনে দীর্ঘ পরিক্রমার পর শেষ পর্যন্ত সেচ বিভাগের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত বরাকের এই সন্তান। এনামুল হক লস্করের পর দীর্ঘ ১২ বছর পরে বরাকের কেউ এই পদে বসলেন। এই পরিক্রমা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। কি ভাবছেন বরাক নিয়ে?বরাকের প্রতি যে তার আবেগ আছে দায়বদ্ধতা আছে সে কথা অকপটে স্বীকার করলেন। যদিও সারা রাজ্যের দায়িত্ব তার কাঁধে ।কিন্তু তাই বলে নিজের জন্মভূমিকে অবহেলা করতে পারেন না।
বললেন বরাকে জলসেচে যে মেগা প্রজেক্ট ,সেটা হল রুকনি ব্যারেজ। সোনাইয়ে রুকনি নদীতে একটি বাঁধ দিয়ে এই এলাকায় জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত করা এটাই ছিল এই প্রজেক্টের মূল লক্ষ। মিজোরাম সরকারের কাছ থেকে ফরেস্ট এনভারমেন্ট ক্লিয়ারেন্স পেয়ে গেলে এই প্রকল্প হয়ে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেড় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সোনাই ও ধলাই এলাকায় জল সেচে একটা বিপ্লব ঘটবে।
তার কার্যকালে এই কাজ তিনি শেষ করতে চান অথবা এগিয়ে রাখতে চান। একইভাবে পাথারকান্দিতেও একটি ব্যারেজ লংগাই নদীর উপর করার জন্য ডিপিআর তৈরি করতে সিপিডাব্লিউডিকে দেওয়া হবে। এ নিয়ে মূলত তৎপর হয়েছেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এখন তার লক্ষ্য। জলসেচের জন্য সৌর ও বিদ্যুৎ চালিত কূপ নির্মাণের যে প্রকল্প গুলি বরাকে রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার কাজও তিনি এগিয়ে নিতে চান।এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি এগুচ্ছেন। কথা প্রসঙ্গে এসে গেল বেতুকান্দির প্রসঙ্গ।
বেতুকান্দির সঙ্গে সেচ বিভাগের কি সম্পর্ক। বললেন এখানে একটা প্রকল্প ২০১২ সালে মঞ্জুর হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মহিসাবিলের জল বরাকে ফেলে দেওয়া। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে এ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। যার জন্য বেতুকান্দি বাধ নষ্ট হওয়ার জলসেচ বিভাগের ভূমিকার কথা এসে যায়। তবে বেতুকান্দি বাঁধভাঙ্গা বা মেরামত এসব কোন কিছুর সঙ্গে সেচ বিভাগ কোনোভাবে যুক্ত নয় বলে তিনি জানান। মহিসা বিলের জল যে বরাকে ফেলা উচিত সম্পর্কে তিনি একমত। এটা ঘটনা যে মহিসাবিলের জল নিষ্কাশন হয়ে গেলে শহরে বন্যার প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে।
এভাবে বরাকের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন তার রয়েছে। তবে কৃষি জমিতে জল সেচের যদি পরিসংখ্যান দেখা যায় তাহলে বরাক উপত্যকা অনেক পিছিয়ে এই কথা তিনি স্বীকার করেন। যেখানে সারা রাজ্যে কুড়ি শতাংশ কৃষি জমি জলসেচের আওতায় এসেছে সেখানে বরাকে এই সংখ্যা অনেক কম । যার ফলে কৃষির উৎপাদন বাড়ছে না। একই জমিতে বারবার চাষ করার যে সুযোগ সেটা হচ্ছে না জলসেচ পর্যাপ্ত না থাকায়।
এই ব্যবস্থাটাকে বদলাতে গেলে জলসেচ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হয়। এই কাজটা কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সেটাই হলো বড় কথা। এবং এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে তিনি নিতে চান। তবে আপাতত তার লক্ষ হল দেড় হাজার কোটি টাকার রুকনি ব্যারেজ প্রকল্প। সেটাকে যেকোনোভাবে বাস্তবায়িত করা। তিনি যখন এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তখন থেকেই তিনি এটার পেছনে লেগেছিলেন। তাই তার আশা বরাকের সন্তান হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারবেন।