চুক্তি মতে এই কাজ তিন বছরের ভেতর শেষ করতে হবে – কাজ শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৫-১-২৬সাল
শুভ্র কান্তি ভট্টাচার্য : স্বপ্নের মহাসড়ক বাস্তবায়িত হবে কবে? ২০০৪ সালে শিলান্যাস হয়েছিল মহাসড়কের। কিন্তু এখনো চালু হলো না স্বপ্নের এই মহাসড়ক।কবে হবে মহাসড়ক ,মানে যার পোশাকি নাম ইস্ট ওয়েস্ট করিডোর।গত দুই দশক থেকে এই একটাই প্রশ্ন বরাকের মানুষের। মহাসড়ক নিয়ে আসলে হচ্ছে টা কি এখনো স্পষ্ট নয়। সাংসদ রাজদীপ রায় জানিয়েছেন বালাছড়া থেকে হারেঙ্গাজাও অবধি মহাসড়কের কাজ ২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। আগে বলা হয়েছিল এই কাজ শেষ হবে মার্চে। যাই হোক মার্চ আর ডিসেম্বরে খুব একটা ব্যবধান নেই। হলেই বাঁচা গেল। কিন্তু হারেঙ্গাজাও অবধি হলে তো আর হবে না।
আরো বহু পথ যেতে হবে। এর পরবর্তী অংশটা তিনি বলছেন অর্থাৎ হারেঙ্গাজও থেকে নরিমবাংলো অবধি রাস্তার কাজের টেন্ডার দেওয়া হচ্ছে নতুন করে। ৪২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু যে নির্মাণ সংস্থা কে বরাত দেওয়া হয়েছিল তারা কাজ করেনি ।তাই আবার নতুন করে টেন্ডার করতে হচ্ছে।
এদিকে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী মেমোরিয়াল স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান হারান দে কে একটি চিঠিতে জানিয়েছে, নরিমবাংলো থেকে জাটিংগা আর জাতিঙ্গা থেকে হারেঙ্গাজাও পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই রাস্তার জন্য ২০১২ সালে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে কাজ হয়নি। পরে নির্মাণ সংস্থা কাজ করতে চায়নি। যার ফলে এই অংশের কাজ হয়নি।
এখন নতুন করে টেন্ডার করা হবে দুটি অংশের। দুটি অংশে রাস্তার কাজ এবার একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সিঙ্গেল কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ২৬ -১-২৩ সাল থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। চুক্তি মতে এই কাজ তিন বছরের ভেতর শেষ করতে হবে। কাজ শেষ করার সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৫-১-২৬সাল। ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের ভেতরে হারেঙ্গাজাও থেকে নরিমবাংলো পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ শেষ হবে। এটাই বলছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি।
কিন্তু আদৌ কি এই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এই পুরো রাস্তাটাই ধস প্রবন। এক্ষেত্রে নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি দিয়ে কি সম্ভব ধস থেকে রক্ষা পাওয়া । বড়াইলের পাহাড়ে গত কয়েক দশকে যেভাবে নির্বিচারে বৃক্ষ ছেদন হয়েছে তাতে পাহাড়ে মাটি এক জায়গায় থাকে না। মাটি ধরে রাখার মত গাছ নেই। যদিও রাস্তা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে গাছ লাগানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই মহাসড়ক নিয়ে অনেক আশা কথা শোনা গেলেও এটা যে আদৌ হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
তবে আশার কথা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এখন বলছে ২০২৬ সালের মধ্যে নমরিমবাংলো পর্যন্ত রাস্তা হয়ে যাবে। এই অংশটুকুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা হয়ে গেলে মহাসড়ক বাস্তবায়িত হতে পারে। এমন আশা করা যেতেই পারে। তবে বোরাকের মানুষের রাস্তার কপালটা ভালো নয়।
স্বাধীনতার পর থেকে রাস্তা নিয়ে ধুকতে হচ্ছে। একটা বিশাল জনপদ এভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে বছরের পর বছর।
সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না। কোন সময় বন বিভাগের ছাড়পত্র নেই, কোন সময় উগ্রপন্থীর উৎপাত, কোন সময় বাজে আবহাওয়া, এভাবে নানা কারণ দেখিয়ে গত কুড়ি বছর থেকে আটকে আছে এই মহাসড়ক। পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের জন্য আটকে রইলো আরো কয়েক বছর। যাই হোক এখন সবকিছু শেষ হয়েছে। দেখা যাক কি হয়। যাতে আবার কোন নতুন বাধা না দাঁড়ায় এটাই এখন দেখার কথা।