৩১ হাজার হিন্দু ভোট কমছে শিলচরে

2 - মিনিট |

মুসলমান ভোট সমানই থাকছে

কেআরসি টাইমস বারাক ভ্যালি ব্যুরো

শিলচর: ডিলিমিটেশন খসড়ায় শিলচরের বিধানসভা আসনের চিত্রটা কি দাঁড়াচ্ছে। এ নিয়ে এখন চলছে শহর জুড়ে জোর চর্চা। যদিও গত মাসের ২১ তারিখ এই তালিকা বেরিয়েছে কিন্তু এতটা দিন হয়ে গেল, মানুষ এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না শিলচরের চিত্রটা কি দাঁড়াবে। সাধারণভাবে শিলচর বিধানসভা আসনটি প্রবলভাবে হিন্দু অধ্যুষিত আসন। এখন এই আসনের আশি শতাংশ ভোটারই হিন্দু।

কিন্তু বহু চর্চিত এই ডিলিমিটেশনের পরে শিলচর আসন কি প্রবলভাবে হিন্দু অধ্যুষিত থাকবে?এই প্রশ্ন কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে । এই আলোচনায় যাওয়ার আগে একবার দেখে নেওয়া যাক শিলচর যে বর্তমান যে শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রটি রয়েছে তার কোন অংশটা বাদ যাচ্ছে আর কোন অংশ অন্য বিধানসভা এলাকা থেকে যুক্ত হচ্ছে।

শিলচরের কোন কোন এলাকা বাদ যাচ্ছে:

১) শিলচর পুরসভা এলাকা থেকে উধারবন্দে যুক্ত হচ্ছে এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ড । এর মধ্যে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড রংপুর অবশ্য আগেই উধারবন্দে ছিল। রংপুরের পাচ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিলে বাকি ছয়টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা ৩০ হাজার। এখানে দুই তিন হাজার বাদ দিলে সবই হিন্দু ভোট। অর্থাৎ এই ৩০ হাজার হিন্দু ভোট শিলচর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

২) শিলচর ব্লক বা বর্তমান শিলচর বিধানসভা এলাকা থেকে থেকে বাদ যাচ্ছে বেরেঙ্গা জিপি নিয়াইরগ্রাম বাগপুর জি পি, বাগাডহর বরজুয়াই জিপি। এইগুলি মুসলমান অধ্যুষিত গ্রাম পঞ্চায়েত। ভোটারের সংখ্যা ধরে নেওয়া যায় ১৫ হাজার।

৩) এছাড়া ভজন্তিপুর জিপি থেকে বাদ যাচ্ছে জয়ফারপুর ভজন্তিপুর পার্ট ওয়ান ভজন্তিপুর ,নতুন কাঞ্চনপুর পশ্চিম বিরনীহাওর। এসব এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। ভোটারের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবে না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে শিলচর বিধানসভা আসন থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভোট চলে যাচ্ছে অন্য বিধানসভা আসনে। আর এর মধ্যে ৩৫ হাজার হিন্দু ভোট ,১৫ হাজার মুসলমান ভোট।

এবার দেখা যাক কোন কোন এলাকা শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রে ঢুকছে এবং জনবিন্যাসটা কি।

১) শিলচরে অন্তর্ভুক্ত হবে বড়খলা ব্লক থেকে বদরপুর মাছিমপুর জিপি বদরপুর পার্ট ওয়ান বদরপুর পার্ট টু, মাসিমপুর পার্ট ওয়ান ,মহিনিপুর।এসব এলাকার আশি শতাংশই মুসলমান ভোটার। ভোটারের সংখ্যা পাঁচ হাজার।

২) শালচাপড়া ব্লক থেকে কৃষ্ণপুর ভৈরবপুর জিপি ।এটা মুসলমান প্রধান।ভোটার ৫ হাজার। বুড়িবাইল জিপির বুড়ি বাইল পার্ট থ্রি প্রতাপিপাড়া।মুসলমান এলাকা ভোটার তিন হাজার।

৩) কুমারপাড়া নিজ জয়নগর জিপির কুমার পাড়া বলিঘাট নিজ জয়নগর দ্বিতীয় খন্ড রাজনগর জিপির রাখাল পার্ট ওয়ান শ্রীকোনা জিপির রাখালপার পার্ট টু শিলচরের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এসব এলাকায় ৭০ শতাংশ মুসলমান ৩০ শতাংশ হিন্দু। ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এছাড়া সোনাই থেকে আসছে উত্তর কৃষ্ণপুর জিপির পার্ট ওয়ান সিটি। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২০০০।

হিন্দু ভোটারের সংখ্যা বেশি। তাহলে শেষমেষ চিত্রটা কি দাঁড়ালো? পঞ্চাশ হাজার ভোট শিলচর বিধানসভা এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ৩৫ হাজার হিন্দু ভোট ও ১৫ হাজার মুসলমান ভোট। আর শিলচরে অন্য বিধানসভা কেন্দ্র থেকে যুক্ত হচ্ছে ১৯ হাজার ভোট। এর মধ্যে ১৫ হাজার মুসলমান ভোট আর চার হাজার হিন্দু ভোট।

৩৫ হাজার হিন্দু ভোট চলে যাওয়ার পর যুক্ত হয়েছে চার হাজার হিন্দু ভোট । যদিএই চার হাজার বাদ দেওয়া হয় তাহলে মোট ৩১ হাজার হিন্দু ভোট কমছে শিলচর বিধানসভা এলাকা থেকে। আর মুসলমান ভোট ১৫ হাজার কমে গেলেও যুক্ত হবে আরো ১৫ হাজার। অর্থাৎ মুসলমান ভোট সমান
রইল।

শতাংশের যদি হিসাব করা যায় তাহলে হিন্দু ভোট শিলচর বিধানসভা আসনে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যাচ্ছে। তখন হিন্দু ভোট দাঁড়াবে ৬০ শতাংশ। তাই এই আসনটা যে পুরোপুরি হিন্দুদের জন্য সুরক্ষিত রইল এমন ভাবার কোন কারণ নেই। দুজন শক্তিশালী হিন্দু প্রার্থী এখান থেকে যদি দাঁড়িয়ে যান তাহলে কিন্তু সংখ্যালঘু যে কোন প্রার্থী জয়ী হতে পারবেন।

অতএব শিলচর আসনকে যেভাবে হিন্দুদের জন্য নিরাপদ ভাবা হতো সেই নিরাপদ রইল না। শিলচর এখনো হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন থাকলেও এখনকার মতো প্রবলভাবে কিন্তু হিন্দু গরিষ্ঠ থাকবে না। অন্ততপক্ষে যদি এই লিমিটেশন খসড়া কার্যকর হয় তাহলে এই চিত্রটাই দাঁড়াবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *