৭১ সালের পক্ষে আদালতে আসু জমিয়ত আমসু সিআরপিসি
৫১ না ৭১ কোনটি হবে এন আর সির ভিত্তি বর্ষ? এনিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রথমত একটা ঐকমত্যে যেতে চাইছে । আজ দিল্লিতে এনআরসি ভিত্তিবর্ষ সংক্রান্ত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার বাদী ও বিবাদী দিয়ে দুই পক্ষকেই বলেছে বিষয়টা নিয়ে প্রথমে আপনারা নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করে নিন কি করতে হবে। এই আলোচনার ব্যবস্থাটা করার জন্য আদালত সলিসিটর জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে। আর পরবর্তী শুনানি ১০ জানুয়ারি ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আপাতত আজকের শুনানি নিয়ে এটাই হলো মোদ্দা কথা।
ভিত্তিবর্ষ একান্ন করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে সম্মিলিত মহা সংঘ। তারা বলেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ৬( ১) ধারায় ১৯৭১ সালকে আসামে ভিত্তি বর্ষ করা বেআইনি। সারা দেশের জন্য এক আইন আর আসামের জন্য কেন আলাদা আইন হবে। কারণ তাদের মতে ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বর্ষ মানা হলে কয়েক লক্ষ অনুপ্রবেশকারীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
যা মেনে নেওয়া যায় না বা সংবিধান বিরোধী। এই মামলায় আসাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী আসু একটি হলফনামা দিয়ে ১৯৭১ সালকে ভিত্তি বর্ষ করার পক্ষে যুক্তি দাখিল করেছে। আসু ১৯৭১ সালের সমর্থনে আছে একথা স্পষ্টভাবে আদালতকে জানিয়ে দিয়েছে। একইভাবে সারা আসাম সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থাও ১৯৭১ সালের পক্ষে রয়েছে। এছাড়াও ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বর্ষ করার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে জমিয়ত উলেমা হিন্দ ও সিআরপিসি।
আদালতে তারাও আলাদা আলাদা হলফনামা দাখিল করেছে। সিআরপিসি সাধারণ সম্পাদক সাধারণ পুরকায়স্থ জানান, তারা ১৯৭১ সালকে ভিত্তি বর্ষ করার পক্ষে রয়েছে ন। কারণ আসাম চুক্তি মতে ১৯৭১ সাল কে ভিত্তি বর্ষ ধরা হয়েছে। এই ভিত্তি বর্ষের অদল বদল করা তারা কোন অবস্থায় মেনে নেবেন না। আদালত তাদের আজকের শুনানিতে সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে একটা সমাধান সূত্র বের করার কথা বলেছে। তবে এটা আদৌ কতটুকু সম্ভব হবে এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়ার মত নয়। ২০১৬ সালে যখন এনআরসি চালু হয়েছিল তার আগেই মহা সংঘ এনআরসির ভিত্তি বর্ষ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল । তারা সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছিল।
কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ১৯৭১ সাল কে ভিত্তি বছর রেখেই এন আর সি করার নির্দেশ দেন। সেই মতে এনআরসি চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয় গত ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট। কিন্তু এরপর এনআরসি প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। এখন সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটি সম্পর্কে ফের শুনানি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আদালত এনআরসির ক্ষেত্রে আসাম ও ত্রিপুরার জন্য আলাদা শুনানির ব্যবস্থা করেছে। ঠিক এরকম একটা পরিস্থিতিতে দুপক্ষ বসে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এটা দূরাশা।তবুও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা একটা সুযোগ দিতে চেয়েছেন দুই পক্ষকে। দশ জানুয়ারি শুনানির আগে আদালত এসম্পর্কে দুপক্ষের অবস্থান জানতে চায়।
শুনানিতে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো দিল্লিতে মোটামুটি ৭১ পন্থীরা হাজির ছিলেন। জমিয় ত আমসুও সিআরপিসি নেতারা সকাল থেকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে । সবাই এই মামলার একটি পার্টি। তাই সে দিক থেকে ৫১ সালকে প্রতিরোধ করতে একটা আইনি লড়াই চলছে। সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল একাত্তরের পক্ষে আছেন। এই আইনি লড়াইটা আসামের লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্ত বাঙ্গালীদের জন্য একটা অস্তিত্বের সংগ্রাম। কারণ ১৯৫১ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত সময়সীমার ভেতরে দেশভাগের বলি উদ্বাস্তুরা এদেশে এসেছিলেন।
তাই ৫১ সাল যদি কোনো কারণে ভিত্তিবর্ষ হয়ে যায় তাহলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি নাগরিকত্ব হারাবেন। তবে আশ্চর্যের কথা এই মামলায় বাঙালি উদ্বাস্তুদের হয়ে কোন পক্ষ নেই। আমসু জমিয়ত উলেমার মত সংগঠনরা ৭১ সালের পক্ষে না দাঁড়ালে আজ সমস্যা পড়তে হতো উদ্বাস্তুদের। তাই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয় আপাতত। তবে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এটা অসম্ভব বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।