লক্ষ্মী বনাম অলক্ষ্মী

2 - মিনিট |

কালীপুজোর দিনে দীপান্বিতা লক্ষ্মীর সঙ্গে অলক্ষ্মীর পুজো হতে দেখেছি। অলক্ষ্মীর পুজো করে তবেই লক্ষ্মীর পুজোয় হাত দেবার রীতি

তৃষ্ণা বসাক

ঘটিবাড়িতে কোজাগরী পুজোর চল নেই। তবে আমাদের বাড়িতে কালীপুজোর দিনে দীপান্বিতা লক্ষ্মীর সঙ্গে অলক্ষ্মীর পুজো হতে দেখেছি। অলক্ষ্মীর পুজো করে তবেই লক্ষ্মীর পুজোয় হাত দেবার রীতি। খুব ভালো কিন্তু এক আসনে নয় কেন? বাড়ির বাইরে, খোলা নর্দমার ধারে কলার পেটোতে পিটুলির তৈরী অলক্ষ্মী গড়ে এক খাবলা সিঁদুর দিয়ে মাথা আঁচড়ে চুলের নুড়ি আর গোবরের ওপর ভাঙা মোমবাতি জ্বেলে তাকে নামকোয়াস্তে দুটুকরো ফল, বাতাসা দিয়ে পুরুত যেন বিদেয় করতে পারলেই বাঁচে। লক্ষ্মীর পুজোয় শাঁখ ছাড়া কিছুই বাজেনা কিন্তু অলক্ষ্মী বিদেয় কালে চাটাই পেটানো হয় আর বলা হয় অলক্ষ্মী দূর হ’, ঘরের লক্ষ্মী ঘরেই থাক। এই বলে অলক্ষ্মীকে ত্যাগ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রধান পুজোয় সামিল হতেন সবাই। সেখানে মহা ধুম। ষোড়শ উপচার। আমার খুব কষ্ট হত সেই অলক্ষ্মীর বিদেয় বেলায়। ভাবতাম সমাজে, ঘরে ঘরে এমন কত মেয়েরাই অনাদরে কাল কাটায়। অছ্যুত, নীচু, ঝিমাগী, পাগলী, ডাইনি, বাঁজা আর বিধবা এরা কি তবে সবাই একঘরে? অলক্ষ্মীর দলে? কেন এমন হবে? কেউ উত্তর দিতে পারত না বিশ্বাস করুন। আমার মতে সবাই তো আমরা কন্যাশ্রী। শ্রী শব্দের অর্থ লক্ষ্মী। তার সঙ্গে বাচ্ছা হল কি না হল বা স্বামী মারা গেল কি না গেল জাতপাঁত কি হল এসব কেন দেখব? সধবাই কেন সিঁদুর খেলবে? বিধবারা কেন সিঁদুর দেবেনা? টিপ পরবে না? মাছ খাবেনা, লাল পরবে না এসব দোলাচলে জর্জরিত হতে হতে এই অবধি এসেছি।

এবার আসি আজকের যুগে দাঁড়িয়ে অলক্ষ্মীর সত্যি ডেফিনিশনে।

আচ্ছা বলুন তো আজকের সমাজে যে মেয়েগুলো বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে পান থেকে চুন খসলে মিথ্যে ৪৯৮ এর মিস ইউজ করে? ফাঁসিয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেককে? ভেঙে ফেলে সংসার আর আইনের কারসাজিতে টাকা আদায় করে বিয়ের বন্ধনে রণে ভঙ্গ দেয় তারা কেমন লক্ষ্মী?
আনাচেকানাচে সত্যি রেপকেসের ফাঁকেফাঁকে যেসব মেয়েরা মিথ্যে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গ্রামেগঞ্জে unnecessary হ্যারাস করে পুরুষকে? সেগুলোর কথা ভাবব না আজ? সেই মেয়েগুলো কি লক্ষ্মীমেয়ে?
আর সারাজীবন কপাল ঢেলে সিঁদুর পরে, লক্ষ্মীর ঘট পেতে দুলে দুলে পাঁচালী পড়া সেই মেয়েগুলো? যারা ঘরে শান্তশিষ্ট স্বামীনামক গৃহপালিতের চোখে ধুলো দিয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে স্বামীর প্রতি বেইমানি করে? ওপরে সাজানো সংসার আর নীচে পরকীয়ার কেত্তন গায়? নিজের স্বার্থসিদ্ধির আশায়? এরাও মা লক্ষ্মী? যে মেয়েগুলো “মি টু” বদনাম দিয়ে আপিসের বসের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা দাবী করে চাকরী থেকে ইস্তফা দেয়? সেই মেয়েরাও লক্ষ্মী ? আর ওপরে শান্তশিষ্ট ল্যাজবিশিষ্ট সেই রমণী? যার পরণে লাল পাড় শাড়ি, কপালে সিঁদুর, লক্ষ্মীপুজো করে সে গদগদভাসি। ঘরের লক্ষ্মী শ্বাশুড়িমা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে অথবা সপরিবারে বেড়াতে চলে যায় শাশুড়িমা কে একটি ঘরে জল, বিস্কুট দিয়ে তালা বন্ধ করে রেখে? সে ও মা লক্ষ্মী তো? আর গ্রামেগঞ্জের মেয়েরা তো আজকাল শহরের এককাঠি ওপরে । ৪৯৮ বাদ দিন। বিয়ের একবছরের মধ্যে বাচ্ছা পেটে না এলে নীরিহ গোবেচারা বরটিকে ” ধ্বজভঙ্গ” বলে ফাঁসিয়ে লক্ষটাকা দাবী করে বসে। শুধু বাপেরবাড়ির মা লক্ষ্মীটির প্ররোচনায়? এরাও মা লক্ষ্মী কি?
আর সর্বোপরি যে মেয়েগুলো শ্বশুরবাড়ির প্ররোচনায় বোকার মত নিজের পেটের কন্যাভ্রূণটিকে চুপুচুপি ওষুধ খেয়ে ন্যাকড়া জড়িয়ে বনের মধ্যে বা নর্দমায় ফেলে আসে? সেই মেয়েগুলো কেমন লক্ষ্মী? এদের নিজেদের কোনো সম্বিত নেই? কোনো বুদ্ধিশুদ্ধি নেই? এযুগে দাঁড়িয়ে এই সব ধরণের অলক্ষ্মীদের আজ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তাই মা লক্ষ্মীর কাছে এইসব অলক্ষ্মীদের শুভবুদ্ধির জন্য প্রার্থনা করছি…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *