পাবলো পিকাসো

2 - মিনিট |

জীবনের প্রতি পর্যায়ে নিজেক নতুন করে গড়েছেন পিকাসো। কোনও সময়ই একঘেয়ে হতে দেননি তাঁর সৃষ্টিকে। এটা তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ

শ্রীজীব

বিংশ শতাব্দীর এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের নাম পাবলো পিকাসো। তাঁর যেন জন্মই হয়েছিল তুলি হাতে নিয়ে!তাঁর বাবা জোসে রুইজই ব্লাঙ্কোর ছিলেন একজন পেন্টার। তিনিও চেয়েছিলেন স্পেনের কোনও বড় শহরে বা প্যারিসে গিয়ে ভালো করে পেন্টিং শিখতে। কিন্তু অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। তিনি ছিলেন স্থানীয় মিউজিয়ামের কিউরেটর ও স্থানীয় ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস স্কুলের শিক্ষক। জোসে যখন দেখেন যে, পাবলো মাত্র আট বছর বয়সেই বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারার মতো ছবি আঁকতে শুরু করেছে, তখন আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি। ছেলেকে বড় শিল্পী হতেই হবে। এটা তিনি মনস্থির করে ফেলেছিলেন। বার্সোলোনার লা লোঞ্জায় শিক্ষকতার সুযোগ পাওয়া মাত্রই জোসে গোটা পরিবার নিয়ে চলে যান বার্সোলোনায়। কিন্তু সমস্যা হল, বাবা যেভাবে এগোবেন ভাবছেন, ছেলে পাবলো ভাবছে ঠিক তার উলটো! শিল্পক্ষেত্রে বিশেষত ছবি আঁকা ও ভাস্কর্যের প্রতি পাবলোর আগ্রহ প্রায় তাঁর জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। হাতেখড়ি তাঁর বাবার কাছেই। ছবি আঁকার একেবারে গোড়ার দিকের খুঁটিনাটি। যেমন, ফিগার ড্রয়িং, অয়েল পেন্টিং এসবকিছুই পাবলো তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখে ফেলেছেন। বার্সোলোনায় পৌঁছে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে নিজের প্রতিভাকে তিনি আরও শানিয়ে নেন। কিন্তু গোলমাল বাধে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিয়া ডি সান ফার্নান্দোয় ঢোকা মাত্র একবছর পরেই তাঁর মনে হয় ওখানে শেখার কিছু নেই, তাই পাবলো কলেজ ছেড়ে দেন।

পাবলো বার্সোলোনায় থাকাকালীনই স্থানীয় কাফে এলস কোয়াত্রে গাতস-এ অনেক সময় আড্ডা দিতে যেতেন। সেখানে বার্সোলোনার বিখ্যাত শিল্পীরা, আর্ট ডিলাররা জমায়েত হতেন। এই কাফেতে আসা ও সেখানকার আলোচনা শোনা পিকাসোর শিল্পীজীবনকে খুবই প্রভাবিত করেছিল।পিকাসোর প্রথম এগজিবিশন হয় বার্সোলোনায়। তখন পাবলোর বয়স মাত্র উনিশ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। আর সেই কারণে শিল্পী পিকাসোকে নাম-যশ-অর্থের জন্য কথনও মাথা খুঁড়ে মরতে হয়নি। পেন্টিং হোক বা ভাস্কর্য,উঁচুদরের শিল্পযোদ্ধা ও শিল্পক্রেতা চিরকালই উচ্চবিত্তরা। তখনকার দিনে তো মিডিয়ার এত দাপাদাপি ছিল না। ফলে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য যেকোনও শহরের উঁচুতলার যোগাযোগ বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। মুখে মুখে শিল্পীর নাম ছড়াত। বুদ্ধিমান পিকাসো এই রাস্তাটা প্রথম থেকেই ধরতে পেরেছিলেন। এরপর পিকাসো রাশিয়ান ব্যালে নর্তকী ওলগা খকলোভাকে বিয়ে করেন। পিকাসোর বিখ্যাত হয়ে ওঠার পিছনে ওলগারও প্রচুর অবদান আছে। উনিই প্যারিসের উচ্চবিত্ত মহলের সঙ্গে পিকাসোর যোগাযোগ করিয়ে দেন। এভাবে খ্যাতি, অর্থ পাওয়ার রাস্তাটা তাঁর সামনে খুলে যায়।

জীবনের প্রতি পর্যায়ে নিজেকে নতুন করে গড়েছেন পিকাসো। কোনও সময়ই একঘেয়ে হতে দেননি তাঁর সৃষ্টিকে। এটা তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ। পিকাসো খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছন অ্যাবস্ট্রাকশনিজমের জনক হিসাবে।জর্জ ব্রাকের সঙ্গে কিউবিজমকেও জনপ্রিয় করেন তিনি। শিল্পমাধ্যম নিয়েও তিনি ভাঙচুর চালিয়েছেন। পেন্টিং থেকে শুরু করে সেরামিকস,ভাস্কর্য, নানা মাধ্যম নিয়ে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে গেছেন।

প্রতিভা নিয়ে সকলেই জন্মায়। সেই প্রতিভাকে আরও ক্ষুরধার কের তুলতে সাহায্য করে শিক্ষা। আর তার সঙ্গে যদি মেশে বাস্তববুদ্ধি ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করার ক্ষমতা, তখন খ্যাতির শীর্ষে ওঠার রাস্তাটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল পাবলো পিকাসো।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *