হারিয়ে যাচ্ছে গড়ের মাঠ। বড় অসুস্থ কলকাতার ফুসফুস। এখনই যদি যথেষ্ঠ সতর্ক না হই, এই ময়দানকে বাঁচানো যাবে না
হারিয়ে যাচ্ছে গড়ের মাঠ। বড় অসুস্থ কলকাতার ফুসফুস। এখনই যদি যথেষ্ঠ সতর্ক না হই, এই ময়দানকে বাঁচানো যাবে না। মঙ্গলবার কলকাতায় এক আলোচনাচক্রে এ সব ফুটে উঠল বিভিন্ন রকম মানুষের প্রশ্নে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ভারতীয় জাদুঘরে ময়দানের ঐতিহ্য, পরিবেশ, স্বাস্থ্য নিয়ে আয়োজিত হয় এই আলোচনা।
জাদুঘরের অধিকর্তা রাজেশ পুরোহিত আলোচনার শুরুতে বলেন, আমাদের সতর্কতার অভাবে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি। আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে ময়দানের আরও সবুজায়ন, জৈববৈচিত্র্যর উন্নয়নের দিকে জোর দেওয়া দরকার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর তথা ঐতিহ্য়প্রেমী ডঃ জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, “হাজার রকম কাঠামো ময়দানের সবুজকে চিড়ে ফেলেছে। গড়ের মাঠের তুলনায় লন্ডনের হাইড পার্ক গাড়ি চালানোর জন্য অনেক বেশি স্বস্তিকর। ময়দানকে আন্তর্জাতিক মানের একটা দ্রষ্টব্য স্থান করা যায়। তবে, তার জন্য অনেক আন্তরিকতা, যত্ন আর পরিকল্পনা দরকার।”
‘ইন্টাক’-এর সংরক্ষণবিদ অঞ্জন মিত্র ময়দানের উদ্ভব ও পরবর্তীকালের নানা সময়ের বিবর্তনের ছবি ‘মাইন্ডস্কেপস অফ ময়দান’ পর্দায় তুলে ধরেন। প্রায় ১১৭৮ বিঘা জমির ওপর কীভাবে ব্রিটিশরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে ময়দানের পরিকল্পনা করেছিলেন, কীভাবে হুগলি নদী, চাঁদপাল ঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট, চৌরঙ্গীর মাঝে তৈরি হয়েছিল এই বিস্তীর্ণ সবুজ— গল্পের মত তুলে ধরেন সেই আলেখ্য। বললেন, পুরনো কেল্লার বদলে নয়া দূর্গ তৈরির জন্য গোবিন্দপুরে শেঠ-বসাকদের সংলগ্ন ৫৭ বিঘা জমি অধিগ্রহণ, পাঁচটি জলাশয় খনন, ইওরোপীয় মডেলে তৈরি হল কলকাতার ফুসফুস। ১৮১৯-এ ময়দানের দক্ষিণে প্রথম ‘দখল’ রেসকোর্স। এর পর দু’শ বছর ধরে চলছে সেই দখল আর অপরিকল্পনার হরেক নিদর্শন।
মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ প্রিজার্ভেশন সোসাইটির কর্ণধার সন্দীপ নওলাখা থেকে আন্তর্জাতিক পতাকা বিশেষজ্ঞ শেখর চক্রবর্তী— নানা বয়সের, নানা পেশার পুরুষ ও মহিলা অংশ নেন প্রশ্নোত্তরে। নানা রকম প্রস্তাব রাখেন সভায়। সবারই ছিল এক সুর— আমরা বুঝি ময়দানকে ভালবাসার জায়গা থেকে ব্রাত্য করে ফেলেছি।