যৌবনে প্রবেশের যাত্রার অসামান্য রূপায়ণের জন্য
আমরা আমাদের হৃদয়, মন, অন্তরাত্মা সমস্ত কিছু নিয়ে পূর্ণোদ্যমে চলচ্চিত্রের উদযাপন করছি। আমাদের আইএফএফআই-এর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারক মন্ডলী এই মহান শিল্পকর্মে আনন্দ আস্বাদনে নিজেদের নিমজ্জিত করতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরুন। ভালো, স্মরণীয় এবং প্রশংসাযোগ্য ছবি আমরা আপনাদের উপহার দিয়েছি, বিচারক মন্ডলী তার থেকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করেছেন।
স্প্যানিশ চলচ্চিত্র ‘আই হ্যাভ ইলেক্ট্রিক ড্রিসম’ শ্রেষ্ঠ ছবির শিরোপা পেয়েছে। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য সম্মানীয় স্বর্ণ ময়ূর সম্মান পাচ্ছে স্প্যানিশ চলচ্চিত্র। Tengo sueñoseléctricos / ‘আই হ্যাভ ইলেক্ট্রিক ড্রিমস’। বিচারক মন্ডলী এই ছবিটিকে বর্তমান এবং আগামীদিনের ছবির ভবিষ্য হিসেবে নির্বাচন করেছেন। কোস্টারিকার চলচ্চিত্র নির্মাতা ভ্যালেন্টিনা মরেল-এর পরিচালিত এই ছবিতে ১৬ বছরের একটি মেয়ে ইভা’র যৌবনের যাত্রাপথকে চিত্রিত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র বয়স বাড়া নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও বৃহৎ পরিমন্ডল।
বস্তুতপক্ষে বলতে গেলে জীবনের যে জটিলতার এক সৎ চিত্রায়ন এই ছবিতে ফুটে ওঠে। বিচারক মন্ডলীর বক্তব্য হিংসা, অনুগ্রহ, ক্রোধ এবং অন্তরঙ্গতা এই সবকিছু যেন এতে সমার্থক হয়ে উঠেছে। বিচারক মন্ডলী বলেছেন, “এর অমোঘ আকর্ষণ এতই উজ্জীবক যে ছবি দেখতে গিয়ে আমরা যেন নিজেদেরকে আবিষ্কার করেছি এবং তা আমাদের মধ্যে শিহরণ তৈরি করেছে।” ইরাণীয় লেখক এবং পরিচালক নাদের সেইভারগেতস্ ‘নো এন্ড’ ছবি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য রৌপ্য ময়ুর পেয়েছে। ইরানের পশ্চাদমুখী সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম জাদুকরী চিত্রায়ণ ঘটেছে এই ছবিতে।
তুরস্কের ছবি ‘নো এন্ড/ Bi Payan’- এ ইরানের এক গুপ্তচর পুলিশের ষড়যন্ত্র এবং কৌশল এই ছবিতে চিত্রায়িত হয়েছে। পরিচালক নাদের সেইভার শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে রৌপ্য ময়ূর পাচ্ছেন। ছবিটিতে এক নীরব সততার এক ব্যক্তিত্ব আয়াজ তার নিজের বাড়ি রক্ষা করার শেষ অবলম্বন হিসেবে গুপ্তচর ওই পুলিশের সঙ্গে যুক্ত এক মিথ্যার পথে পা বাড়ান। এরপর যখন প্রকৃত গুপ্তচর পুলিশ রঙ্গমঞ্চে পদার্পন করে ঘটনা তখন জটিলতা পায়। সর্বসম্মতিক্রমে এটি পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিচারক মন্ডলী জানান, জাদুকরী সূক্ষ বিবরণের মধ্য দিয়ে সর্বতো পশ্চাদমুখী ইরানের সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থা এতে চিত্রায়িত হয়েছে যা আমাদের অন্তর্গত চেতনাকে আলোড়িত করেছে।
নো এন্ড-এর মুখ্য অভিনেতা ভাইদ মোবাসেরি পুরুষদের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে রৌপ্য ময়ূর পাচ্ছেন। অনুভূতির জটিলতার সার্থক রূপায়ণ এই অভিনেতার অভিনয়ে মূর্ত রূপ পেয়েছে। বিচারক মন্ডলীর সর্বসম্মতিক্রমে নো এন্ড ছবিতে আয়াজ-এর চরিত্রকে অপূর্ব অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য ভাইদ মোবাসেরিকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
চরিত্রকে মূর্ত রূপ দিতে তাঁর সাবলীল অভিনয় এবং বিভিন্ন আবেগ তার মুখে এবং শারীরিক ভাষায় যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা এক কথায় অনবদ্য। এই প্রতিবাদধর্মী চলচ্চিত্রটি দর্শক মন্ডলীর মনে ইরানের একজন সাধারণ নাগরিকের অসহায়তা ও তার অন্তর্গত বিরোধ নিয়ে অনুরণন তৈরি করে।
শ্রেষ্ঠ আই হ্যাভ ইলেক্ট্রিক ড্রিমস-এর মুখ্য চরিত্র হিসেবে ড্যানেয়েলা মারিন নেভারো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে সিলভার পিকক পাচ্ছেন। আই হ্যাভ ইলেক্ট্রিক ড্রিমস- এই ছবিতে ১৯ বছর বয়সী ড্যানেয়েলা মারিন নেভারো ১৬ বছরের একটি মেয়ে ইভা-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা পান। বিচারক মন্ডলী বলেছেন, “অভিনেত্রী চরিত্রের বাস্তব রূপদান করেছেন। নিজে কিশোরী হয়েও জটিল এই চরিত্রের বাস্তব রূপদান সমস্ত কৃতকূশলতাকে ছাপিয়ে গেছে।”
ফিলিপিন্সের চলচ্চিত্রকার দেব দিয়াজ তাঁর হোয়েন দ্য ওয়েবস আর গন/ Kapagwalanangmgaalon-এর জন্য স্পেশাল জুরি পুরস্কার পাচ্ছেন।
৫৩তম আইএফএফআই-এ স্পেশাল জুরি সম্মান পাচ্ছেন ফিলিপিন্সের চলচ্চিত্রকার দেব দিয়াজের ছবি হোয়েন দ্য ওয়েবস আর গন। বিচারক মন্ডলী বলেছেন, এই ছবিতে অল্প কথার মধ্যে আবেগ, রাগ, অনুভূতি এই সমস্ত কিছুর সার্বিক প্রতিফলন ঘটেছে। বিহাইন্ড দ্য হেস্ট্যাকস ছবির জন্য আসিমিনা প্রোদ্রৌ-র শ্রেষ্ঠ প্রথম ছবি পুরস্কার পাচ্ছে। এথেন্স থেকে আসা এই চলচ্চিত্রকারের প্রথম ছবি এবারের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।
সিনেমা বান্দির জন্য বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছে প্রবীন কান্দ্রেগুলা।
লেখক, পরিচালক এবং সিনেমাটোগ্রাফার প্রবীন কান্দ্রেগুলা তাঁর সিনেমা বান্দি ছবির জন্য বিচারক মন্ডলীর বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে এক দরিদ্র অটো ড্রাইভার ঘটনাচক্রে একটি দামি ক্যামেরা হাতে পান। এরপর অটো ড্রাইভার থেকে চলচ্চিত্রকার হিসেবে তাঁর পথ পরিক্রমাকে এই ছবিতে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচারক মন্ডলী নেতৃত্ব দেন ইজরায়েলের লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্দেশক নাদাভ লাপিদ। বিচারক মন্ডলীর অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার প্রযোজক জিঙ্গো গোতো, ফরাসী চলচ্চিত্র এডিটর পাস্কেল সাভানসে, ফরাসী তথ্যচিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সমালোচক জেভিয়ার আঙ্গুলো বার্তুরেন এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সুদীপ্ত সেন।