ধন্দ কাটল না কারা-ঐতিহ্য সংরক্ষণ নিয়ে

2 - মিনিট |

বছর ঘুরতে চলল। এখনও চূড়ান্ত হল না আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলের ঐতিহ্য সংরক্ষণের নকশা। বন্দি স্থানান্তরের কাজও চলছে ধীর গতিতে

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

বছর ঘুরতে চলল। এখনও চূড়ান্ত হল না আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেলের ঐতিহ্য সংরক্ষণের নকশা। বন্দি স্থানান্তরের কাজও চলছে ধীর গতিতে। 

নেতাজি, অরবিন্দ থেকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু সেনানীর স্মৃতি বিজড়িত এই দুই সংশোধনাগারই সরে যাচ্ছে বারুইপুরে। রাজ্য কারা দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে আলিপুর সংশোধনাগারকে সরানোর কাজ হবে। তার পর ধাপে ধাপে সরবে প্রেসিডেন্সি। গত জুলাই মাসে আলিপুর সংশোধনাগারের বন্দিদের অন্য জেলে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আলিপুর থেকে বন্দিদের সরানো শেষ করতে বলা হয়েছিল এক বছর আগে। গত বছর বর্ষার কারণে তা সাময়িক স্থগিত ছিল। সূত্রের খবর, সেই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি।

কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অতিরিক্ত কমিশনার সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, “কারার ঐতিহ্যের পরিকল্পিত সংরক্ষণ করে গোটা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে একটা তীর্থক্ষেত্র করে তোলা সম্ভব। বিপ্লবীদের ছবি, স্মৃতি— এ সব নিয়ে ওখানে আঢ়ো ও ধ্বণি প্রকল্প করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে এ শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংবেদনশীল কিছু মানুষ উদ্যোগী হয়েছেন। আমি ওঁদের সঙ্গে সহমত পোষন করছি। বাংলার সেকালের দুই দামাল কন্যা শান্তি-সুনীতি কারাবন্দি ছিলেন। সুনীতি চৌধুরীর মেয়ে ভারতী সেন ওখানে গিয়ে সব দেখে এসেছেন। ঐতিহাসিক ওই জায়গায় প্রোটিংয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হোক স্মৃতি সংরক্ষণে।” দুই সংশোধনাগারই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বহন করছে। তাই এই স্থানান্তর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  কারা আধিকারিকরা জানান, ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, দুই সংশোধনাগারের এমন বেশ কিছু জায়গা সংরক্ষণ করতে চায় রাজ্য সরকার। কিন্তু ঐতিহ্য সংরক্ষণের নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। 

১৯০৮-এর মে মাস। আলিপুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষকে কারাদণ্ড দিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯০৮-এর ২ মে থেকে ১৯০৯-এর ৯ মে প্রায় এক বছর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের বন্দি ছিলেন তিনি। এই সেলে বসেই লেখা ‘দ্য লাইফ ডিভাইন’। অরবিন্দর ‘ঋষি’ হয়ে ওঠার ইতিহাস জড়িয়ে এই সেলের সঙ্গে। এর বেশ কয়েক বছর পর ১৯৪০-এ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেরই ইউরোপিয়ান ব্লকের দোতলার একটি সেলে কয়েক মাস (২ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর) বন্দি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও বেশ কয়েক মাস বন্দি থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেটা ১৯৩০-এর জানুয়ারি। এখানে অন্তরীন ছিলেন বীণা দাস, সুহাসিনী গঙ্গোপাধ্যায়, কমলা দাশগুপ্ত, লীলা রায়, উজ্জ্বলা মজুমদারের মত  বিপ্লবীরা। 

আলিপুর জেলের স্মরণীয় বন্দিতালিকায় আছেন দুখু মিয়াঁ (মুহসিনুদ্দিন আহমেদ ১৮১৯-১৮৬২)। ‘ফারাইজি’ (কৃষক) বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ইংরেজদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। সক্রিয় অংশ নেন ১৮৫৭-র বিদ্রোহে। জন্ম ফরিদপুরে, মৃত্যু ঢাকায়। এ ছাড়াও এখানে বন্দি ছিলেন  প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী (১৯২৬), কে কামরাজ (১৯৩০), বিধান চন্দ্র রায়, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, চারু মজুমদার প্রমুখ।  কারা দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের নেতাজি ও অরবিন্দ সেল এবং আলিপুর সংশোধনাগারের নেতাজি সেল ও নেহরু ভবনকে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওই দফতরের কর্তারা। 

জানা গিয়েছে, নেতাজি, নেহরু, অরবিন্দের সেলের পাশাপাশি দুই সংশোধনাগারের ফাঁসির মঞ্চও সংরক্ষণ করা হতে পারে। ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞরা সেগুলি ঘুরে দেখেছেন। আলিপুর সংশোধনাগারের ফাঁসির মঞ্চে অনন্তহরি মিত্র, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরী, দীনেশ গুপ্ত, দীনেশ মজুমদার, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসরা শহিদ হয়েছিলেন। আর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগে ফাঁসি হয়েছিল কানাইলাল দত্ত (১৯০৮), সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৯০৮), চারুচরণ বসু (১৯১০), বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্ত (১৯১০), গোপীমোহন সাহা (১৯২৪)-র।  আগে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার পরিচিত ছিল পুরোনো আলিপুর জেল নামে। ১৮৬৪-তে বাংলার প্রথম কেন্দ্রীয় জেলের তকমা পায় এটি। এখনও প্রতি বছর ৩০ জানুয়রি শহিদ দিবসে দুই সংশোধনাগারে ফাঁসির মঞ্চে শহিদদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। তাই সংশোধনাগারগুলি সরলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের সেনানীদের স্মরণে ওই জায়গাগুলিকে বিশেষ ভাবে সংরক্ষণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news