সমাপন সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সম্মানিত অতিথি শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, শিলচর এনআইটি-র ডিরেক্টর। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় ও শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর।
শেষ হল ‘বরাক বইমেলা-২০১৯’। বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শহর শিলচরের সার্কিট হাউস রোডের বিপিন পাল সভাস্থলে আয়োজিত এই মেলার সমাপ্তিসভায় আয়োজকদের মন বিষাদে ভরে উঠেছিল। গত ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আজ ২৪ নভেম্বর, দশ দিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলের উদ্যোক্তারা।
বইমেলা সাধারণত প্রকাশকরা আয়োজন করেন, এতে থাকে ব্যবসায়িক লাভ-লোকসানের অঙ্ক। প্রকাশকদের আয়োজিত মেলায় থাকে সরকারি অনুদান। বরাক বইমেলার আয়োজক বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন (বরাকবঙ্গ) নিজে প্রকাশনা সংস্থা নয়, বইমেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনও সরকারি অনুদানও পায় না। তবু আয়োজকদের মেলাকে সফল করতে আন্তরিকতার কোনও ছিল না। বরাকবঙ্গ বইমেলা আয়োজনকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা হিসাবে মেনে নিয়েছে। দশদিনের বইমেলা উদ্বোধনের মুখ্য অতিথি তথা উদ্বোধক এবং বিশেষ অতিথির বক্তব্য এতটাই পরিমিত এবং পরিণত ছিল যে শুরুতেই ২০১৯-এর বইমেলা উঁচু মাত্রায় পৌঁছে গিয়ে বিরাট প্রত্যাশা তৈরি করেছিল।মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথা-সাহিত্যিক সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্যামল ভট্টাচার্য এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা ঋষিকেশ গোস্বামী। বইমেলায় বেশ কয়েকটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অসমের বর্তমান অস্থিরতা ও অস্তিত্বের সংকট, বরাকের অর্থনীতির দিশা অন্বেষণ বিষয়ক ইত্যাদি। বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মবছর উপলক্ষ্যে সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় বইমেলায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বক্তা হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিষয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনা জানা এবং অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া বহুভাষিক কবি সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সাহিত্য উপসমিতির আহ্বানে বাংলা, নেপালি, হিন্দি, অসমিয়া-সহ বহুভাষিক কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে দশদিনের বইমেলার অনুষ্ঠানে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার জন্য বিশাল পুরকায়স্থকে অনুরূপা বিশ্বাস স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়। বইমেলার মুক্তমঞ্চ প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আশিস গুপ্তের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
মেলায় ছিল না কোনও প্রবেশমূল্য। ছাত্রছাত্রীদের বই কেনার জন্য উৎসাহিত করতে নানাবিধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে দুশো টাকার পছন্দের বই কেনার কুপন দেওয়া হয়। মহিলাদের মেলামুখি করতে রন্ধন প্রতিযোগিতা-সহ প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মনোজ্ঞ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
২০০৭ সাল থেকে ২০১৯, সময়ের হিসাবে এক যুগ পার করে পেছন ফিরে তাকালে মনে পড়ে ডাকবাংলোর ছোট পরিসর অতিক্রম করে বিপিন পাল সভাস্থলের বড় পরিসরে উত্তরণের সংগ্রামের কথা। ২০০৯ সালে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট (এনবিটি)-এর সহযোগী হয়ে জাতীয়স্তরের বইমেলার সফল আয়োজনের অভিজ্ঞতা এবং ২০১৯-এ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের প্রায় ১৫টি প্রকাশনার যোগদানে বইমেলার আন্তর্জাতিক চেহারা পাওয়ার পেছনে এই উপত্যকার সাহিত্য সংস্কৃতি প্রসারে আয়োজকদের দায়বদ্ধতাই প্রমাণিত। ৫০-এরও বেশি প্রকাশক / বই বিপণি সংস্থাকে নিয়ে অসমের এক প্রান্তিক জেলা শহরে বইমেলার আয়োজন অনেক বড় কথা। বরাক উপত্যকার নিজস্ব প্রকাশনার সম্ভার নিয়ে ব্যাতায়ন, সৃজন, বিন্ধিয়ারা ডালা সাজিয়েছিল। সমাপ্তি সভায় “বইকথা” নামক ক্রোড়পত্রের উন্মোচন করা হয়।
সমাপন সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সম্মানিত অতিথি শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, শিলচর এনআইটি-র ডিরেক্টর। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন সাংসদ ডা. রাজদীপ রায় ও শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। আয়োজক সংস্থা আশাবাদী আগামী বছরগুলোতে আরও বড় আকারের বইমেলা আয়োজন করতে সমর্থ হবেন তাঁরা।