সৃষ্টি রহস্য

2 - মিনিট |

ব্রহ্মা হলেন ভগবান দ্বারা সৃষ্ট প্রথম জীব। আমরা যে পৃথিবীপৃষ্ঠে রয়েছি এটি ব্রহ্মাণ্ডেরই একটি গ্রহলোক। এর নাম ভূর্লোক। এর উপর দিকে ছটি লোক বর্তমান। সর্বোচ্চ লোক সত্যলোক– যেখানে ব্রহ্মা অধিপতি

শ্রীজীব

প্রথমে জেনে নিই ব্রহ্মা কে? ব্রহ্মা হলেন ভগবান দ্বারা সৃষ্ট প্রথম জীব। আমরা যে পৃথিবীপৃষ্ঠে রয়েছি এটি ব্রহ্মাণ্ডেরই একটি গ্রহলোক। এর নাম ভূর্লোক। এর উপর দিকে ছটি লোক বর্তমান। সর্বোচ্চ লোক সত্যলোক– যেখানে ব্রহ্মা অধিপতি।

আবার নীচের দিকে সাতটি লোক– মোট চোদ্দোটি ভুবন নিয়ে আমাদের ব্রহ্মাণ্ড তৈরি। এমন অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড বর্তমান, এবং আমাদের ব্রহ্মাণ্ডটি সবচেয়ে ছোটো।

সৃষ্টির শুরুতে গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু ক্ষীরসাগরে শায়িত থেকে, নাভি থেকে একটি পদ্ম উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মার জন্ম হয়। বিষ্ণুও তিন রূপে আছে– গর্ভোদকশায়ী, কারনোদকশায়ী, ক্ষীরোদকশায়ী।

প্রলয়ের পরে নতুন করে সৃষ্টিকালে, ব্রহ্মা পদ্মের উপর বসে দেখলেন সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড জলে নিমগ্ন, চারিদিকে অন্ধকার। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন, কেউ তো কোথাও নেই, আমি কে? কোথা থেকে এলাম? কে পাঠাল আমাকে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি পদ্মের নাল বেয়ে বহু বর্ষ ধরে ঘুরেও, কোনও সূত্রের সন্ধান পেলেন না। তখন তিনি পদ্মের উপর বসে জপ করতে লাগলেন। এক কোটি জপ সম্পূর্ণ হলে, ভগবান তাকে দর্শন দিলেন।

ভগবান তাকে আদেশ দিলেন– হে ব্রহ্মা,এই দেখ চোদ্দো ভুবন। সমস্ত ভুবন জীবে পরিপূর্ণ করো। তিনি ব্রহ্মার মধ্যে সৃষ্টিশক্তিও সঞ্চার করলেন, এবং পালন ও সংহারের জন্য বিষ্ণু ও শিবকে সৃষ্টি করলেন। সুতরাং ব্রহ্মা ও শিব সকলেই ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা সৃষ্ট– তাঁরা দেবতা, ভগবান নন।

তাঁরা হলেন বারোজন মহাজনের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ব্রহ্মা হলেন সর্বপ্রথম মহাজন। ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথম পুরুষ। তাই সমস্ত জীব থেকে ব্রহ্মা বয়োবৃদ্ধ ও জ্ঞানবৃদ্ধও। মহাজন তারাই, যারা জড় ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থান করলেও জড়াপ্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হন না।

যেমন অজামিলকে যমরাজের নির্দেশে যমদূতেরা আনতে গেলে, বিষ্ণুদূতেরা তাদের ধর্মতত্বজ্ঞানহীন বলে সম্বোধন করেন, এবং তাদের বিতাড়িত করেন। যমরাজ একজন মহাজন হওয়া সত্ত্বেও তার আদেশ ভুল প্রতিপন্ন হয়। তাহলে দেখুন ধর্মতত্ত্ব কত সূক্ষ!যাঁরা এই সূক্ষতা সঠিকভাবে জানেন তাঁরাই মহাজন।

ধর্মকে প্রকৃত সঠিকভাবে বুঝতে গেলে, মহাজনদের থেকে সৃষ্ট গুরু পরম্পরার ধারায় আসতে হবে। মহাপ্রভুও জগতে চারটি গুরু পরম্পরার ধারাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন– ব্রহ্মা, শিব, চতুষ্কুমার ও লক্ষ্মী।

পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে– পরম্পরার ধারায় আশ্রিত না হলে, মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ সফলতা দেবে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষাগ্রহণ ভুল পথে পরিচালিত করবে। মানুষের প্রকৃত ধর্ম কী এবং জীবনের উদ্দেশ্য কী তা কখেনাই বুঝতে পারবে না।

যাই হোক, ব্রহ্মা সৃষ্টিকার্যের শুরুতে নিজ অঙ্গ থেকে বহু মুনি, ঋষি সৃষ্টি করে– কাউকে তপস্যার জন্য, আবার কাউকে সাংসারিক কাজে নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি চিন্তা করলেন– এভাবে নিজ দেহ থেকে সৃষ্টি না করে, নারী-পুরুষের মাধ্যমে সংসার সৃষ্টি হোক। তখন তিনি মানস পুত্ররূপে মনুকে এবং স্ত্রীদেহরূপে শতরূরাকে সৃষ্টি করলেন। তাদের থেকেই আজ মনুষ্য সমাজ ক্রমবর্দ্ধমান।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *