অবশেষে ট্র্যাংকুলাইজড হল গোয়ালপাড়ার সন্ত্রাস ‘লাডেন’, মাত্র আধঘণ্টার সফল অভিযান বিধায়ক পদ্ম বাহিনীর

2 - মিনিট |

সাতটি হাতি নিয়ে পরিচালিত অভিযানের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোয়ালপাড়ার ডিএফও জীবানন্দ হাজরিকা, ডিম্বেশ্বর দাস প্রমুখ

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

গোয়ালপাড়া জেলার রংজুলি এলাকায় নরঘাতক ‘লাদেন’ নামে পরিচিত প্রকাণ্ড বুনো হাতিকে অবশেষ ট্র্যাংকুলাইজড করা হয়েছে। শোণিতপুর জেলার অন্তর্গত সতিয়ার বিজেপি বিধায়ক পদ্ম হাজরিকার নেতৃত্বে সোমবার সকাল প্রায় দশটা নাগাদ লাদেন পাকড়াও অভিযান শুরু হয়েছিল। সাতটি হাতি নিয়ে পরিচালিত অভিযানের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোয়ালপাড়ার ডিএফও জীবানন্দ হাজরিকা, ডিম্বেশ্বর দাস প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, বুনো হাতি লাদেনের হামলায় গত ২৯ অক্টোবর ভোর থেকে মাত্র ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে এক বালক ও তিন মহিলা-সহ মোট পাঁচ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া গত দুবছরে পঞ্চাশের বেশি মানুষ তার হামলায় মৃত্যুবরণ করেছেন। লাদেন নামের হাতিটির আক্রমণে নিহত পাঁচজনের নিকট আত্মীয়দের তাৎক্ষণিকভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এককালীন চার লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে নরঘাতক লাদেনকে যে কোনও উপায়ে শীঘ্র ট্র্যাংকুলাইজড করতে বন দফতরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল।

খবর পেয়ে বুনো হাতিদের কাবু করতে পৈত্রিক সূত্রে অভিজ্ঞ সতিয়ার বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা ও তাঁর দাদা মৃদুল হাজরিকা (বাবা দা) ‘লাদেন’কে ধরতে ময়দানে নামেন। তাঁর নিজের শিকারি ‘রামু’ এবং অন্য ‘লক্ষ্মী’ ‘সরস্বতী’দের নিয়ে ‘লাদেন’ পাকড়াও অভিযান চালাতে গত শুক্রবার গোয়ালপাড়ার রংজুলিতে আসেন বিধায়ক পদ্ম। তিনি এসে প্ৰথমে ধূপধরায় বন দফতরের রেস্ট হাউসে বিভাগীয় পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর বিধায়ক হাজরিকা ‘লাদেন’-এর সন্ধানে তথ্য সংগ্ৰহ করতে কন্যাকুচি বনাঞ্চলে গিয়ে হাজির হন তিনি। ইতিমধ্যে ‘লাদেন’-এর অবস্থান জানতে ড্রোনের সাহায্য নেওয়া হয়। অত্যন্ত চতুর ‘লাদেন’ ঘন ঘন স্থান বদল করায় তার নির্দিষ্ট অবস্থান জানতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল বিধায়কের নেতৃত্বাধীন অভিযানকারী দলের।

অবশেষে আজ সোমবার সকালে তার নির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে গণেশ পূজার আয়োজন করে পিঠে দু-নলি বন্দুক ও খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে ‘রামু’র পিঠে চড়ে অন্য ছয়টি শিকারি হাতি ও অভিযানকারী সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করেন পদ্ম হাজরিকা। এদিকে সেখানে জমায়েত আশপাশের গ্রামের মানুষজনকে সুরক্ষার প্রতি খেয়াল রেখে কোনও হইহট্টগোল না করতে বন দফতরের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। এর পর মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে খবর আসে ‘লাদেন’কে ঘুম পাড়ানির গুলি ছুঁড়ে বশ করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসেন শিকারি-বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা।

জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে বিধায়ক পদ্ম অভিযান সম্পর্কে বলেন, তাঁর ইনফরমেশন সঠিক থাকায় লাদেনকে বশে আনতে সময় লাগেনি। একেবারে নির্দিষ্ট স্থানে তাঁরা গিয়ে পৌঁছলে শূঁড় উঁচিয়ে ‘রামু’র দিকে তেড়ে আসে দুর্ধর্ষ প্রকাণ্ড বুনো হাতি লাদেন। অগত্যা তিনি তাকে লক্ষ্য করে ঘুম পাড়ানির গুলি ছুঁড়েন। সঙ্গে সঙ্গে অন্য অভিযানকারী এক সদস্যও অনুরূপ গুলি ছুঁড়ে তাকে কাবু করেন। পর পর দুটি গুলিতে বিদ্ধ হয়ে থমকে যায় লাদেন। ধীরে ধীরে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে সে। তিনি জানান, মনে হয়েছে লাদেন কিছুটা অসুস্থ। বয়সের ভারে। এবার বন আধিকারিকরা তাকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করবেন। পরবর্তীতে তাকে সুস্থ করে তোলাই হবে প্রধান কাজ। লাদেন-কে ট্র্যাংককুলাজড করতে পশু দফতর থেকে পর্যাপ্ত ঘুম পাড়ানির ইঞ্জেকশন সংবলিত গুলি সরবরাহ করা হয়েছে। এই অভিযানে সহায়ককারী বন ও পশু দফতর এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা। বলেছেন, এখন থেকে এলাকার মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমতো পারবেন। প্রসঙ্গত, বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা এবং তাঁর বাপ-দাদারা নাকি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০টি বুনো হাতিকে ট্র্যাংকুলাইজড করে বশে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘লাদেন’কে পাকড়াও করা তাঁর কাছে কোনও বিশেষ অসুবিধা হবে না জেনেই অভিযানে নেমেছিলেন তিনি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news