গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর এবং স্নাতকের সমস্ত পরীক্ষা আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ২০১৯ পেশ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে উত্তাল প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গুয়াহাটি। সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু) আহূত গতকালের ১১ ঘণ্টার অসম বনধ-এর পর বুধবার বরাক উপত্যকা ও দুই পাহাড়ি জেলা ছেড়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কলেজ পড়ুয়ারা ক্যাব-এর বিরুদ্ধে উন্মত্ত প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। তিনসুকিয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে শূন্যে গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরানোর পাশাপাশি রাস্তায় পেট্রোল ঢেলেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। রাত পৌনে সাতটায় এই খবর লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
এদিকে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর এবং স্নাতকের সমস্ত পরীক্ষা আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ সকাল থেকে গোটা দিন গুয়াহাটি মহানগরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ক্যাব-এর বিরুদ্ধে বুধবার কটন বিশ্ববিদ্যালয়, সন্দিকৈ কলেজ এবং মেগালয়ের ইউএসটিএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দিশপুর চলো (রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্র জনতা ভবন) কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামেন। সকালের দিকে প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা দিশপুর অভিমুখে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জিএস রোডের এবিসিতে তাঁদের ব্যারিকেড গড়ে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন একাংশ প্রতিবাদকারী পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠির ঘা খেয়েও ছাত্রছাত্রীরা রাজপথ ছেড়ে যাচ্ছিল না। মিছিল থেকে ছোঁড়া হয় ইটপাটকেল। পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন ছাত্র ও ছাত্রী আহত হয়েছেন।
এদিকে দিশপুরে জনতা ভবন তথা সচিবালয়ের সামনে বিভিন্ন দিক থেকে কাতারে কাতারে পড়ুয়ারা আসতে থাকেন। সেখানেও ব্যারিকেড গড়ে পুলিশ। প্রতিবাদকারীরা সচিবালয়ের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে জ্বালিয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে পুলিশ কাঁদানো গ্যাস ও জল কামান ছুঁড়ে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পর রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। দিশপুরে সুপার মার্কেটে পুলিশ পয়েন্টেও অগ্নিসংযোগ করেছে প্রতিবাদীরা। মহানগরের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে কয়েকজন ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না পুলিশ। অন্যদিকে রাজ্যজুড়ে ক্যাব-বিরোধী প্রতিবাদের জেরে বহু ট্রেন বাতিল করেছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন বাতিল করার ফলে বিপাকে পড়েন যাত্রীকুল। তেজপুর থেকে হেলিকপ্টারে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীও বহু সময় বিমানবন্দরে আটকে পড়েন। প্রতিবাদকারীদের রাস্তা অবরোধের ফলে আটকে পড়ে অনেক স্কুলবাস। ট্রাফিক পুলিশ বহুক্ষণ জিএস রোডে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। অসমের সীমান্তঘেঁষা মেঘালয়ের ইউএসটিএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং খানাপাড়া পশু চিকিৎসালয় ও পলিটেকনিকের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদকারীরা বেশ কয়েকটি বাসেও অগ্নিসংযোগ করেছেন। কলেজের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও আজকের প্রতিবাদী কর্মসূচিতে রাজপথে নামেন বহু সাধারণ মানুষ। শুধু রাজধানী গুয়াহাটি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যাব-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন জনতা। তিনসুকিয়া জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে উন্মত্ত প্রতিবাদ করলে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালাতে হয়েছে।