খোয়াং নামের এক জায়গায় একটি চা বাগানের বাউন্ডারি দেওয়াল নিৰ্মাণের কাজে গত প্ৰায় তিন মাস ধরে এঁরা নিয়োজিত ছিলেন।
ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত পরিবারবর্গের লালন-পালনের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ শালমারা থেকে ৩৮ জন দিনহাজিরা করতে ডিব্ৰুগড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশি অভিযোগ তুলে তাদের শারীরিক নির্যাতন করেছে কতিপয় দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তের হামলায় আহতদের কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির কর্মকর্তারা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করেছেন।
জানা গেছে, নিম্ন অসমের ধুবড়ি, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ইত্যাদি জেলার দারিদ্ৰ্যসীমার নীচে নাগরিকরা মহাবাহু ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদের বন্যার কবলে পড়ে ঘর-দুয়ার হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। একমাত্ৰ আশ্ৰয়স্থল হারিয়ে এঁরা কাজের সন্ধানে উজান অসমের ডিব্ৰুগড়, যোরহাট, মধ্য অসমের শোণিতপুর, গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্ৰান্তে ঠিকাদারদের অধীনে কাজ করতে যান।
তাঁদের মধ্যে দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার সুখচর এবং দক্ষিণ শালমারা থানা এলাকার হাজিরহাট, গোটাবাড়ি ও মহুরীরচর গ্রাম পঞ্চায়তের ৩৮ জন গৃহহীন মানুষ জনৈক ঠিকাদারের অধীনে দিনহাজিরার কাজ করতে ডিব্ৰুগড়ে গিয়েছিলেন। খোয়াং নামের এক জায়গায় একটি চা বাগানের বাউন্ডারি দেওয়াল নিৰ্মাণের কাজে গত প্ৰায় তিন মাস ধরে এঁরা নিয়োজিত ছিলেন। তিন মাস মোটামুটি ভালোয় ভালোয় কাজ করলেও গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে দুৰ্বৃত্তের এক দল তাদের ওপর হামলা করে বসে। শ্রমিকদের কাছে তাদের ভোটার পরিচয়পত্ৰ এবং ভারতীয় বলে প্ৰামাণিক নথিপত্র দেখতে চায় দুর্বৃত্তরা। কোনও কিছু দেখার আগেই নাকি ৩৮ জন শ্রমিকের ওপর শারীরিক নিগ্রহ করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পর অবশ্য হামলাকারী দলটি ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
ঘটনা সম্পর্কে নিগৃহীত শ্ৰমিকরা গুয়াহাটি উচ্চ আদালতের আইনজীবী তথা দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলা কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতি মুখ্য উপদেষ্টা আনিসুর রহমানকে অবগত করেন। আনিসুর রহমান সব শোনে জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিগৃহীতদের খোয়াং থানায় গিয়ে সব জানাতে বলেন।
এদিকে ঘটনার পরেরদিন সকালের দিকে শ্রমিকরা একটি গাড়ি নিয়ে ডিব্ৰুগড় থানায় যাচ্ছিলেন। সে সময় তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে সঙ্গের সব নথিপত্ৰ কেড়ে নিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাদের হাতে মজুত মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট, নগদ টাকাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আইনজীবী আনিসুর রহমান এ-সব খবর জানিয়ে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে ডিব্ৰুগড় পুলিশের এক দল শ্ৰমিকদের উদ্ধার করে তাদের নিজের ঘরে পাঠিয়েছেন। রবিবার এই খবর দিয়ে আইনজীবী আনিসুর বলেন, আমিও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। ১৯৭১ সালের পর আগত কোনও বিদেশিকে আমরা কখনও মেনে নেব না। কিন্তু তা বলে ভারতীয় নাগরিকদের বিদেশির নামে হয়রান, মারধর করার ঘটনা ন্যায়সংগত নয়। বৰ্তমানে শ্ৰমিকরা চিকিৎসাধীন বলে জানিয়ে রহমান বলেন, যদি কেউ ৭১ সালের পর এসেছেন বলে উপযুক্ত প্ৰমাণ পাওয়া যায়, তা-হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু নিজে আইন হাতে নেওয়া কখনও মানতে পারেন না তিনি। এ ব্যাপারে সরকারকে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানান আইনজীবী আনিসুর রহমান।