ঘটনা শুক্রবার ভোররাতে নিম্ন অসমের দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার সদর হাটশিঙিমারি থেকে প্ৰায় চার কিলোমিটার দূরে আসামের-আলগা বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এক গরু পাচারকারীকে গুলি করে ধরাশায়ী করেছে বিএসএফ। ঘটনা শুক্রবার ভোররাতে নিম্ন অসমের দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার সদর হাটশিঙিমারি থেকে প্ৰায় চার কিলোমিটার দূরে আসামের-আলগা বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণ শালমারা থানান্তর্গত খারুয়াবান্ধা পুলিশ ফাঁড়ির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসামের-আলগা বিএসএফ ক্যাম্প এলাকার ১০৫২-২ এসএস নম্বর সীমান্তখুঁটির কাছে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ সূত্ৰে প্ৰকাশ, জেলার সুখচর থানা এলাকার চরকাঁসারিপাড়া-শান্তিপুর গ্রামের জনৈক মনসব ভুইয়াঁর বছর ২৫-এর ছেলে আব্দুল সবুর নামের যুবক নদী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার করে ভোররাতে তার ঘরে ফিরছিল। দা এবং সরঞ্জাম দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া কেটে বাংলাদেশ থেকে এ-পাড়ে আসার চেষ্টা করছিল সে। ভোর তখন প্রায় চারটা। আব্দুল যখন কাঁটাতারের বেড়া কাটছিল তখন সীমান্তে টহলদারী বিএসএফ-এর জওয়ানরা তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএসএফকে তোয়াক্কা না করে সে ওপার থেকে সমানে কাঁটাতারের বেড়া কাটছিল। তখন বিএসএফ ল্যাথেল গুলি চালায়। গুলি চালানোয় আব্দুল সবুর নাকি উদ্যত দা নিয়ে বিএসএফ-এর দিকে তেড়ে আসার চেষ্টা করে। বিএসএফ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরাশায়ী হয়ে ঘটনাস্থলেই সে প্রাণত্যাগ করে।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী কর্তৃপক্ষ জেলার পুলিশ সুপার কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়াকে বিষয়টি অবগত করেন। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের অন্য পদস্থ আধিকারিক এবং খারুয়াবান্ধা ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদীপ্ত চৌধুরী-সহ দলবল নিয়ে পুলিশ সুপার সকাল প্ৰায় আটটা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান। ছুটে যান প্ৰশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর নাথ এবং বিএসএফ-এর শীৰ্ষ আধিকারিকরা। তাঁদের সকলের সামনে কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে আব্দুলের মৃতদেহ উদ্ধার করেন বিএসএফ-এর জওয়ানরা। পরে দা ও কাঁটাতারের বেড়া কাটার সরঞ্জাম-সহ মৃতদেহটি খারুয়াবান্ধা পুলিশের হাতে সমঝে দেওয়া হয়েছে।
খারুয়াবান্ধা পুলিশ আব্দুল সবুরের মৃতদেহটি হেফাজতে নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য ধুবড়ি অসামরিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে, বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে এক মামলা রুজু করে যে রাইফেল দিয়ে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল তা পুলিশের কাছে সমঝে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর স্থানীয় একাংশ দাবি করছেন, আব্দুল সবুর একজন সাধারণ নাগরিক, নিরীহ যুবক। গরুর ঘাস কাটতে নাকি সীমান্তে সে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাতের অন্ধকারে নিজের গ্রাম ছেড়ে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ঘাস কাটতে যাওয়ার কারণ কী? তবে প্ৰকৃত ঘটনা পুলিশি তদন্তের পরই জানা যাবে বলে মনে করছেন বেশিরভাগ জনতা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ১৫ নভেম্বরও এই একই স্থানে কানাইমারা গ্রামের আশ্ৰাফুল ইসলাম (৩২) নামের এক গরু পাচারকারী বিএসএফ-এর গুলিতে মারা গিয়েছিল। সেদিন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে ঢেকির সাহায্যে বাংলাদেশে গরু পাচার করার সময় বিএসএফ তাদের বাধা দিয়েছিল। বাধা পেয়ে উলটে বিএসএফ-এর ওপর হামলা চালালে প্ৰত্যুত্তরে গুলি চালিয়েছিলেন জওয়ানরা। গুলিতে এক পাচারকারী নিহত হয়েছিল।