পরীক্ষা বাতিল করলে ছাত্রদের এমন ভাবে নম্বর প্রদান করা হোক যাতে তারা আগামীতে অন্যান্য এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন যদি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত কমে আসে তাহলে আগস্ট মাসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা পিছিয়ে যেতে যেতে প্রায় ছয় মাস দেরি হয়েছে। সারা কাছাড় করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি ছাত্র সংগঠন আকসা গতকাল রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী রনোজ পেগুর সঙ্গে দেখা করে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, সিবিএসসির পথ ধরে এই বছর পরীক্ষা বাতিল করা হোক। যদি পরীক্ষা নিতেই হয় তাহলে প্রত্যেক ছাত্র এবং শিক্ষককে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন প্রদান করা হোক। এবং পরীক্ষা বাতিল করলে ছাত্রদের এমন ভাবে নম্বর প্রদান করা হোক যাতে তারা আগামীতে অন্যান্য এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অসুবিধার সম্মুখীন না হয়।
শুক্রবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে আকসার সদস্য এবং উপদেষ্টারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি সুব্রত দাস, সম্পাদক সুকোমল দাস, সাধারণ সম্পাদক মধুমিতা দে, জয়শ্রী নাথ এবং সাইদুর রহমান, উপদেষ্টা তথা বরিষ্ঠ শিক্ষাবিদ নিরঞ্জন দত্ত এবং মুখ্য উপদেষ্টা রুপম নন্দী পুরকায়স্থ।
তারা জানান, গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিলচরে দেখা করে একটি স্মারকপত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী নিজে ঘোষণা করেছেন সিবিএসই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তার ঘোষণা অনুযায়ী দশম এবং দ্বাদশ ক্লাসের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। এই ধারা অবলম্বন করে উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গোয়া, হরিয়ানা, গুজরাট সহ প্রায় ১২ টি রাজ্য দশম এবং দ্বাদশ ক্লাসের পরীক্ষা বাতিল করেছে। অথচ অসম সরকার সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা আগস্ট মাসে পরীক্ষা গ্রহণের কথা ভাবছেন। এতে ছাত্রদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।
অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত বলেন, “১৯৮০’র দশকে অসম আন্দোলনের ফলে রাজ্য সরকার এক শিক্ষাবর্ষ পুরোপুরি বাতিল করেছিল। একটা আন্দোলনের খাতিরে যদি এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল, তাহলে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদেরদের জীবন নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত কেন? যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে কেন্দ্রীয় বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করেছেন এবং তার পথ ধরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অসম সরকার অতিরিক্ত বাহাদুরি দেখানোর জন্য ছাত্রদের জীবন যাতে বিপন্ন না করেন, এই দাবি আমরা রাখছি।”
সম্পাদক সুকোমল দাস বলেন, “আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি, যদি সম্ভব হয় পরীক্ষা বাতিল করতে। তবে তারা যদি মনে করেন পরীক্ষা নিতেই হবে তাহলে আগে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার জন্য যেটুকু সময় প্রয়োজন, সেটা তাদের দিয়ে তারপর পরীক্ষা নেওয়া হোক। তবে এই ক্ষেত্রেও বাধা রয়েছে কেননা এখন ১৮ বছরের নিচে কাউকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে না। দশম শ্রেণীতে থাকা ছাত্রছাত্রীরা এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। বিষয়টি জটিল, তাই শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন তারা আলোচনা করবেন। সম্প্রতি গুয়াহাটিতে একটি আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু সেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন আগামীতে এধরনের আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব যাতে থাকে সেদিকে তার নজর থাকবে।”
তবে পরীক্ষা বাতিল করলে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে ছাত্ররা যাতে যোগ্যতা অনুযায়ী নম্বর পায়। দ্বাদশ ক্লাসের পরীক্ষার পর অনেক এন্ট্রান্স থাকে সেখানে চূড়ান্ত বর্ষের নম্বর একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সিবিএস ই বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করার পর একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে এবং তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি পদ্ধতিতে ছাত্রদের নম্বর দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে আকসার সদস্যদের বয়ান, “আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হোক এবং সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। ছাত্রদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পরীক্ষা বাতিল করলেও তারা যাতে আগামীতে অসুবিধার সম্মুখীন না হয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। তাদের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে এমনভাবে মার্ক দেওয়া প্রয়োজন যাতে এন্ট্রান্স পরীক্ষাগুলোয় তারা পিছিয়ে না পরে।”
এপ্রিল মাসে স্নাতক স্তরের অড-সেমিস্টার পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় কাছাকাছি পরিস্থিতির সম্মুখীন ছিলেন পড়ুয়ারা। প্রায় তিন দিনব্যাপী আন্দোলন করার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়নি এবং অফলাইনে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং শেষমেষ পরিস্থিতির চাপে পরীক্ষা বাতিল করতেই হয়। এবার দেখার বিষয় হচ্ছে রাজ্য সরকার একই পথে হাঁটেন কিনা।