উত্তাল শাহবাগ, হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধের দাবিতে অবরোধ

2 - মিনিট |

সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ ৯ দফা দাবি বিএসপির

সমীরণ রায়

বাংলাদেশ : দ্বিতীয় দিনের মতো ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশেল রাজধানীর শাহবাগ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় হামলার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে।

শনিবার বিকাল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা; এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শাহবাগ হয়ে ফার্মগেট, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোড এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এরআগেও গত শুক্রবারও প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে এদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

শনিবার বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন কয়েকশ মানুষ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও চার দফা দাবি জানান বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-ব্যানার হাতে। ‘এ দেশে জন্ম আমার, দেশটা কোনো ধর্মের না’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘বাংলাদেশ কারো বাপের না’সহ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক সংগঠনের বিশ্বনাথ বলেন, “হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট চালানে করা হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আমরাতো এ দেশেই জন্মেছি, আমরা কোথায় যাবো। “ক্ষমতায় যেই আসুক আমাদের নিরাপত্তা চাই। আমরা আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই৷”

বিক্ষোভে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করার দাবি নিয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে-সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে।

Advertisement | InfoCom Solutions
Follow Us

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরেও হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে।

বিভিন্ন সংগঠন হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ফেইসবুকে নানা ছবি প্রচার করছে। তবে এতেও হামলা বন্ধ হয়নি।
এদিকে, শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি)।
সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা, দোকানপাট-বাড়িঘর লুটপাট, মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বন্ধে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি)।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায় বলেন, দেশ আজ নরকে পরিপূর্ণ হয়েছে। কোনও মানুষের নিরাপত্তা নেই। অতি দ্রুত এই অরাজকতা বন্ধে দেশবাসীকে বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক, সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বিএসপি’র দাবিগুলো হলো. চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারের একজন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি ব্যবস্থা করতে হবে এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

. ২০০১-২০২৪ সাল পর্যন্ত সব সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুনঃতদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, দায়িত্ব পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদান।

. অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে প্রকৃত মালিকদের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর।

. ১৯৭২ সালের সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন।

. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধে স্থায়ী সমাধাণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করা।

. রাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সংস্কার করে বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা।

বাংলাদেশ সনাতন পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনুপ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— গণতান্ত্রিক পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অশোক ধর, বাকশালের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জহিরুল কাইয়ুম, অ্যাড. লিটন বণিক প্রমুখ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news