গত সাত বছরে পেট্রোপণ্যে কর বাবদ কেন্দ্র আদায় করেছে ২২ লক্ষ কোটি টাকা
কলকাতা, ২৩জুনঃ-
মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পেট্রোলে ২৫ পয়সা আর ডিজেলে দাম বেড়েছে ২৮ পয়সা। এর ফলে দেশে পেট্রোপণ্যের দাম নতুন করে সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল। রাজস্থানের পর উড়িষ্যাতে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১০০টাকা পেরলো। এদিন লিটারে ২৮ পয়সা দাম বাড়ায় ওডিশার তিন জেলা কোরাপুট, মালকানগিরি ও নবরঙ্গপুরে ডিজেল ১০০টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর ও হনুমানগড় জেলায় ডিজেলের দাম ১০০টাকা পার করেছিল। এখনও তাই রয়েছে। এদিন কোরাপুটে ডিজেল ছিল ১০০ টাকা ৪৬ পয়সা, মালকানগিরিতে ছিল ১০১টাকা ১২ পয়সা এবং নবরঙ্গপুরে ১০০ টাকা ২২ পয়সা। শুধু ডিজেল নয় মোদী আমলে দেশে পেট্রোলও আকাশছোঁয়া দাম উঠে ১০০ পার করেছে।
ইতিমধ্যেই ৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল– রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, ওডিশা জম্মু– কাশ্মীর এবং লাদাখে পেট্রোল একশোর গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। মেট্রো শহরগুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ ও বেঙ্গালুরুতে পেট্রোল লিটার প্রতি ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ রাজ্যের ভোটের সময় কিছুদিন দাম বাড়া বন্ধ থাকলেও গত ৪ মে থেকে মঙ্গলবার নিয়ে ২৮ দিন দাম বাড়লো পেট্রোপণ্যের। এই ২৮ দিন পেট্রোল লিটারে ৭ টাকা ১০ পয়সা আর ডিজেল লিটারে ৭ টাকা ৫০ পয়সা মহার্ঘ হয়েছে।
এই হারে দাম বাড়তে থাকলে দিন কয়েকের মধ্যেই দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই পেট্রোল-ডিজেলের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাকি মেট্রো শহর নয়াদিল্লি, কলকাতা আর চেন্নাইতে পেট্রোল ১০০-র গণ্ডি ছুঁতে আর বেশি দূরে নেই। এদিন সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে দিল্লিতে পেট্রোল ছিল ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা আর ডিজেল ছিল ৮৮ টাকা ২৩পয়সা। আর কলকাতায় পেট্রোল পৌঁছে গেছে ৯৭ টাকা ৩৮ পয়সা, আর ডিজেল ৯১ টাকা ৮ পয়সা। চেন্নাইতে এদিন পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৯৮ টাকা ৬৫ পয়সা আর ডিজেল ছিল ৯২ টাকা ৮৩ পয়সা। এই গতি বজায় থাকলে এই মহানগরগুলির সঙ্গে পাটনা, ভুবনেশ্বর, তিরুবনন্তপুরমের মতো বেশ কিছু বড় শহরে পেট্রোল ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ওই শহরগুলিই নয়,
এই গতিতে দেশের আরো অনেক জেলাই সেঞ্চুরি করে ফেলবে পেট্রোলের দামে।
গত বছর লকডাউন ওঠার পর যখন আকাশ ছোঁয়া হচ্ছিল তখনই পেট্রোলের দাম একশো পেরিয়েছিল। এবার ফেব্রুয়ারি থেকে আবার দাম বাড়তে শুরু করে।
কিন্তু মাঝে পশ্চিমবঙ্গ সহ ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময় দাম বেশ কিছুদিন এক জায়গায় আটকে ছিল। মাঝে দু’দিন কমেওছিল। কিন্তু, ভোট মিটতেই ফের চড়তে শুরু করে জ্বালানির দাম। পেট্রোপণ্যের দামের সিংহভাগই মূলত কেন্দ্র ও রাজ্যের করের বোঝা। গত সাত বছরে পেট্রোলে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক ২৩.৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩২.৯৮ টাকা। মোদী ক্ষমতায় আসার সময় ডিজেলে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক ছিল লিটার প্রতি ৩.৫৬ টাকা। শুল্ক বাড়িয়ে পেট্রোল–ডিজেলের দামের ফারাক ঘুচিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী। এখন ডিজেল কেন্দ্রীয় কর বেড়ে হয়েছে ৩১.৮৩ টাকা।
ফলে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে দুই জ্বালানির দাম। ফলে দেশের বেশ কিছু শহরে ইতিমধ্যেই ডিজেলও ১০০ ছাড়িয়েছে। কেন্দ্র–রাজ্য দুই করের হিসাবে দেখা যায় পেট্রোলের ক্ষেত্রে এই করের বোঝা ৬০ শতাংশ আর ডিজেলে ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশিটাই কেন্দ্রের কর। মোদী আমলে সেই করের বোঝা লাগাতার বাড়ানোই হয়েছে। দেশে পেট্রোলে কেন্দ্রীয় শুল্ক সাত বছরে বেড়েছে শতাংশের হিসাবে ২৫৮শতাংশ। তেমনই ডিজেলে মোদী জমানায় উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে অর্থাৎ ৮২০ শতাংশ। কেন্দ্রের হিসাবেই, গত সাত বছরে পেট্রোপণ্যে কর বাবদ কেন্দ্র আদায় করেছে ২২ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু করোনা মহামারীর সময়েই আদায় হয়েছে ২.৭৪ লক্ষ কোটি। বারবারই এই কর কমিয়ে মানুষকে সুরাহার দাবি উঠছে বিরোধীদের তরফে। এদিনও সেই দাবিতে সরব হয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক টুইট বার্তায় ইয়েচুরি বলেছেন, ‘আবার আজ পেট্রোল-ডিজেলের একটা অপরাধমূলক মূল্যবৃদ্ধি। অবিলম্বে পেট্রোপণ্যের উপর উৎপাদন শুল্ক প্রত্যাহার করুন।’