বিদ্বজন এবং গবেষকদের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে এশিয়াটিক সোসাইটিকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিদ্বজন এবং গবেষকদের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে এশিয়াটিক সোসাইটিকে সাধারণ মানুষের আরও কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য তৈরি হয়েছে রূপরেখা। পর্যায়ক্রমে সেটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্তা, ঐতিহাসিক রামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সমমনা ৩০ জন উৎসাহী ইউরোপীয় ব্যক্তিত্ব কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের গ্রান্ড জুরি কক্ষে এক বৈঠকে মিলিত হন। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উইলিয়াম জোনসের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ১) প্রাচ্যবিদ্যা চর্চা এবং ২) ভারতের অতীত ইতিহাস চর্চা। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়, ‘দি এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল’। জোনস এর প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৭৯৪ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এর পর ওয়ারেন হেস্টিংসকে এই প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক করা হয়। তখন থেকে পৃষ্ঠপোষকের আসনটি গভর্নর জেনারেলের জন্য নির্ধারিত ছিল। পরে বাংলার গভর্নর এই আসন পান। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। ইতিমধ্যে ১৯৩৬-এ প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে রাখা হয় ‘দি রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল’। পরে, ফের প্রতিষ্ঠানের নাম বদল হয় ১৯৫১-তে।
সোসাইটির প্রথম সচিব নির্বাচিত হন জর্জ হিলারো। জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী যে কোনও ইউরোপীয় ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারতেন। শিক্ষিত দেশীয়দের জন্য এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যপদ দেওয়া হয় ১৮২৯ সালে। এই সময় তাঁদের মধ্যে ৫ জন সদস্য নির্বাচিত হন। এঁরা হলেন- প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, দ্বারকানাথ ঠাকুর, শিবচন্দ্র দাস, রসময় দত্ত এবং রাম কমল সেন। তখন থেকে ধর্ম, সম্প্রদায়, বর্ণ নির্বিশেষে সব জাতির লোকের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদের সুযোগ দেওয়া হয়।
সল্ট লেকে সি এল ব্লকে প্রতিষ্ঠানের নয়া ভবনে একটি গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরণের প্রদর্শনীর আয়োজন শুরু হয়েছে। এ কথা জানিয়ে রামকৃষ্ণবাবু বলেন, নিছক পুঁথি সংরক্ষণ ও গবেষণাই নয়, প্রতিষ্ঠানকে সংষ্কৃতির কর্মকান্ডকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত করা হচ্ছে। মার্চ মাসে অস্থিরোগে আক্রান্ত ছোটদের একটি শিল্প প্রদর্শনী করা হয়। শীঘ্রই সেখানে নামী শিল্পীদের আঁকা একটি প্রদর্শনী শুরু হবে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুসারী শিল্পীদের কিছু কীর্তি দেখানো হবে সেখানে।
প্রতিষ্ঠানকে আমজনতার আরও কাছাকাছি আনতে কিছু প্রকাশনার ব্যবস্থা করছে সোসাইটি। এর মধ্যে আছে সল্ট লেক-নিউ টাউন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া পাখির ওপর। পক্ষীবিশারদ এবং অপেশাদার পাখিপ্রেমিদের নানা পর্যবেক্ষণ ও ছবি নিয়ে তৈরি হবে ওই বিশেষ প্রকাশনা। এতে থাকবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বায়োডাইভার্সিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান অশোক সান্যাল, সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রমুখের সমীক্ষা। জেনোমিক্স এবং শিশুদের চোখের গ্লুকোমা নিয়েও হবে সেমিনার এবং প্রকাশনা। পার্কস্ট্রিটে প্রতিষ্ঠানের পুরনো ভবনে তৈরি হচ্ছে একটি বড় অডিটোরিয়াম। সেখানে নানা রকম আলোচনাসভার আয়োজন হবে।