আমরা চাইছি অসমকে বাংলাদেশি মুক্ত করব। অথচ সেই বাং লাদেশিরা যারা সত্র, থান দখল করছে তারা সিএএ-বিরোধী তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করছে, তা বিজেপি কিংবা সরকার কখনও মেনে নেবে না: হিমন্ত
চাচা-মামাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী নন। ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল তাঁদের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ৷ বরপেটা রোডে শহর মণ্ডলের উদ্যোগে ‘শান্তি ও বিরামহীন প্ৰগতির লক্ষ্যে মৌন মিছিল’-এর পর আয়োজিত সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন নেডা-র আহ্বায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
মৌন মিছিলে হাজারো দলীয় কার্যকর্তা ও সমর্থক এবং বিজেপি-র প্রদেশ সভাপতি সরভোগের বিধায়ক রঞ্জিতকুমার দাস, সাংসদ দীলিপ শইকিয়া, প্রদেশ সাংগঠনিক সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ শর্মা, প্রদেশ যুবমোর্চার সভাপতি অনুপ বর্মন, সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি মোক্তার হুসেন খানদের নিয়ে পদব্রজে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। আয়োজিত সভায় রাজ্যে চলমান নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অগপ নেতা প্রফুল্লকুমার মহন্তের ওপর বেজায় হামলা করেছেন ড. শর্মা।
প্রদত্ত উদাত্ত ভাষণে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, দেখা যাচ্ছে বরদোয়া থান দখলকারীরা সিএএ-র বিরোধিতায় নেমেছে। এটা কী করে মেনে নেওয়া যায়? আমরা চাইছি অসমকে বাংলাদেশি মুক্ত করব। অথচ সেই বাংলাদেশিরা যারা সত্র, থান দখল করছে তারা সিএএ-বিরোধী তীব্র আন্দোলন সংগঠিত করছে, তা বিজেপি কিংবা সরকার কখনও মেনে নেবে না৷
আক্ষেপের সঙ্গে হিমন্তবিশ্ব বলেন, অসম যখন উন্নয়নের দিকে দ্রতগতিতে যায়, তখনই কলামেঘ আচ্ছন্ন করে বসে৷ যতই আন্দোলন হোক, ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ১০০-এর বেশি আসনে জয়ী হয়ে ফের রাজ্যের ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। তিনি বলেন, ৮৩ সালে অসমের গণতান্ত্ৰিক আন্দোলনের বিরোধিতাকারী, ৮৫৫ জন শহিদের পরিবার এবং রাজ্যের জনসাধারণকে কংগ্ৰেসি নেতারা এখন বিপথে পরিচালিত করছেন৷ তাঁদের মধ্যে ভ্রম ছড়াচ্ছেন। এ এক প্রচ্ছন্ন বিড়ম্বনা। প্রসঙ্গক্রমে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরণ গগৈকে অসম আন্দোলনে শহিদদের বাবা-মায়ের পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্তের ওপরও হামলা চালিয়েছেন মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বলেন, গুপ্তহত্যার নায়ক ছিলেন মহন্ত৷ গুপ্তহত্যার0 বলি যাঁরা হয়েছিলেন, তাঁদের বাবা-মায়ের সামনে হাঁটু মোড়ে মহন্তকে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানান হিমন্তবিশ্ব৷ বলেন, রাজীব গান্ধী (তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী) এবং তদানীন্তন ছাত্রনেতা প্ৰফুল্ল মহন্ত ৮৭ সালে চুক্তি করে নাগরিকত্ব সংশোধনীর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের সন্তানসন্ততিদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন৷ এখন ডিগবাজি খেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উসকে দিচ্ছেন?
কংগ্ৰেসের ওপর ফের হামলা করে বলেন, এই দলের দুৰ্বল নেতৃত্বের জন্যই বাংলাদেশে হিন্দুরা নিৰ্যাতিত৷ বিজেপি সরকার যদি থাকত তা-হলে বাংলাদেশে কোনও হিন্দুর একগাছা লোমও নাড়ানোর সাহস পেত না কেউ। কংগ্রেসের যদি মজবুত নীতি থাকত, তা-হলে বাস্তুভিটে ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে কেউ আসতেন না। বলেন, বাংলাদেশে ১,৩০ কোটি হিন্দুই নেই৷ এত বাঙালি হিন্দু আনতে গেলে সাত লক্ষ ট্ৰাকের প্রয়োজন হবে। অথচ বিস্মকরভাবে মানুষের মধ্যে নানাভাবে ভ্রম ছড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কেউ বলছেন ১.৩০ কোটি, আবার কেউ ২.৫০ কোটি, কেউ ৯০ লক্ষ বাঙালি হিন্দু বাংলাদেশ থেকে সিএএ-র বলে অসমে নিয়ে আসবে বিজেপি সরকার। এটা বিড়ম্বনা নয়তো কী?
বরাবরের মতো আজও বলেন, সিএএ-র মাধ্যমে খুব বেশি হলে ৪ লক্ষ হিন্দু নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবেন। এবং যাঁরা আবেদন করবেন ইতিমধ্যে এঁরা অসমের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীভাবে বসবাস করছেন। সিএএ সম্পর্কে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা গিনিজ বুকে রেকর্ড হবে বলে কটাক্ষ করেন ড. শর্মা।
সিএএ-বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে হিমন্তের প্রশ্ন, সেদিন আন্দোলনের নামে শংকরদেব কলাক্ষেত্ৰ ধ্বংস করেছিল দুষ্কৃতীরা। এর বিরুদ্ধে অসমের শিল্পী ও নাগরিকসমাজ কেন অবস্থান ধরনা বা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন না? বলেন, এমন আন্দোলন যেন না হয়, যে আন্দোলন কলাক্ষেত্ৰ ধ্বংস করে৷ সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম হোতা সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু)-কে নমস্কার জানিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব৷ বলেন, আসু-র আন্দোলনের ‘প্ৰিন্সিপল’ আছে৷ আসু আন্দোলন করলে আপত্তি নেই৷ তারা আলোচনায় বসলে সমাধানসূত্র বেরোবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷ দেশকে ভালোবেসে আন্দোলন যাঁরা করছেন তাঁদের প্ৰণতি জানান তিনি৷ আন্দোলকারীদের সঙ্গে কোনও সংঘাত দল বা সরকারের নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে কংগ্রেসকে কখনও বিশ্বাস না করতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ বলেন, রাজ্যবাসীর সব রাগ, আবেগের জবাব একসময় তাঁরা পাবেন। সব প্ৰশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
উজান অসমের কংগ্রেস নেতা পৃথিবী মাঝির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মন্ত্রী। বলেন, পৃথিবী মাঝির নিৰ্দেশে চা বাগানগুলিতে শ্রমিকরা রাতে পাহারা দেন, হিন্দু বাঙালি এসে বাগানের জমি দখল করে নেবে আশঙ্কায়। চা বাগানের শ্রমিকরা শান্তি চান, তাঁদের মধ্যে অপপ্রচার চালিয়ে কংগ্রেসিরা অশান্তির সৃষ্টি করেছেন। কংগ্রেসিরা বলছেন, শ্রমিকদের তাড়িয়ে এখন হিন্দু বাঙালিরা বাগানের জমি দখল নেবেন। কী ভয়ংকর খেলায় মেতেছে কংগ্রেস, বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন মন্ত্রী। তিনি সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিজেপি কখনও জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাকতা করে না।
নলবাড়িতে গত দুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে সঙ্গে নিয়ে নলবাড়িতে অনুরূপ শান্তি ও প্রগতির বার্তা সংবলিত মৌন মিছিল করেছিলেন হিমন্তবিশ্ব শর্মারা। আজ বরপেটা রোডের পর একই উদ্দেশ্যে আগামী কয়েকদিন কোথায় কোথায় কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে তা জানান তিনি। জানান, আগামী ২৭ ডিসেম্বর জাগিরোড এবং ২৯ ডিসেম্বর শুয়ালকুচিতে মৌন মিছিল। ৫ জানুয়ারি গুয়াহাটির খানাপাড়ায় বুথ সভাপতিদের নিয়ে সভা৷ ৮ জানুয়ারিতে বিশ্বনাথ, ৯ জানুয়ারি ধেমাজিতে অনুষ্ঠিত হবে মৌন মিছিল।