কংগ্রেস সহ জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির অধিকাংশই রাজ্যের বিশেষ অধিকার ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন
ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া কার্যকর করার জন্যেই দিল্লিতে জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের ডেকেছিলেন মোদী-শাহরা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়ে গেল। সংবিধানের ৩৭০ ধারাকে কার্যত বাতিল করা এবং জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুইভাগে ভাগ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা সময়েই স্পষ্ট হয়েছিল ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান যে বিধানসভা ভিত্তিক এলাকা তার পরিবর্তন করার পরেই নতুন রাজ্য বা বিধানসভা গঠনের দিকে এগোবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তার আগে নয়। এদিনের বৈঠকেও কেন্দ্রের গতিবিধি সেই মোতাবেকই এগিয়েছে। বিজেপি ছাড়া সিপিআই (এম), কংগ্রেস সহ জম্মু–কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির অধিকাংশ রাজ্যের বিশেষ অধিকার ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন।
গেইটের দুই “পিলার” তৈরী করতে দশ লক্ষ !!
এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দুই জনেই বলেছেন, জম্মু–কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হবে ডিলিমিটেশন বা এলাকা পুনর্বিন্যাস পক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে। যথাসময়ে রাজ্যের পূর্ণ মর্যাদাও ফেরানো হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, স্বাভাবিকভাবেই সময় বলেননি। সূত্রের খবর, বৈঠকে সরকারের পক্ষ প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বিরোধী দলের নেতাদের বক্তব্য রাখতে বলেন। জবাবে বিরোধী দলের নেতারা বলেন, সরকার বৈঠক ডেকেছে ফলে সরকার যা বলতে চায় সেটা স্পষ্ট করে বলুক। কিন্তু মন্ত্রী জোর দিতে থাকেন, আপনারা জম্মু-কাশ্মীর থেকে এসেছেন সেখানের পরিস্থিতি আপনারাই ভালো জানেন। আপনারা আগে সেটা বলুন। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, সিপিআই (এম) নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি বলেন গুপকার জোটের পক্ষ থেকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলেন গুলাম নবি আজাদ। এছাড়াও সাজ্জাদ লোন সহ আরও কয়েকজন বক্তব্য রাখেন। এঁরা সকলেই তাঁদের বক্তব্যে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী অবস্থা ফেরানোর কথা বলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাঝে মাঝেই এইধরনের বৈঠক করতে তিনি আগ্রহী। বৈঠকে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, কংগ্রেস, বিজেপি’র জম্মু-কাশ্মীরের নেতারা ছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও ছিলেন বৈঠকে।
একনাগাড়ে বৃষ্টি,৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নেমে বন্ধ দার্জিলিঙ-শিলিগুড়ি সড়কপথ
সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি বলেন, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। সংবিধানের কাঠামোর বাইরে গিয়ে সরকার এই কাজ করেছে। ৩৭০ ধারা বাতিল করা অন্যায় হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের লোকেদের কেন বার বার সন্দেহের চোখে দেখা হয় এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। তারিগামি মনে করিয়ে দেন ভারতভুক্তির আগেও পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করেছে কাশ্মীরের মানুষ এবং সেই সময়ে তারা বলেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সঙ্গেই থাকবেন। এতদিন পরে আজও আমাদের ভরসা করা হয় না। সংবিধানের মাধ্যমে যা পাওয়া গিয়েছিল, তাও ছিনিয়ে নেওয়া হলো। সেটাও করা হলো কোনও আলোচনা, বিতর্ক ছাড়াই। জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের কোনও মতামতই নেওয়া হলো না। এরফলে সেখানের মানুষের ভাবনায় আঘাত লেগেছে। মানুষের বিশ্বাসের মাত্রা কম ছিল, তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। দেশের জন্যেও তা ঠিক হলো না। একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের অবনমন করা হলো। এটা যদি দেশের অন্য কোনও জায়গার সাথে করা হতো, তাহলে সেখানের লোকেরা কী করতেন?
আলোচনার মধ্যে কেউ কেউ জানান, আমরা তো এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছি। তখন বিজেপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তাহলে যেমন চলে চলুক, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত। তখন বিরোধী পক্ষের অনেকেই বলেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টকে বলুন এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। এরপরেই বক্তব্য রাখার সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ আসল কথাটি পাড়েন। তিনি বলেন, ডিলিমিটেশন কমিশন কাজ করছে। আপনারা তাদের সমর্থন করুন, সহযোগিতা করুন সেই কাজে। ডিলিমিটেশনের কাজ সম্পূর্ণ হলে বিধানসভার নির্বাচন করানো হবে। অমিত শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি সংসদে বলেছি পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো হবে জম্মু-কাশ্মীরের।
নাগাল্যাণ্ড পুলিশের ব্যতিক্রমী প্যারেড, নেট দুনিয়ায় ভাইরাল
প্রধানমন্ত্রীও আগে ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া শেষ করা এবং তারপর ভোটের দিকে যাওয়ার কথা বলেন। বৈঠকের পরেও প্রধানমন্ত্রী টুইট করে জানান, ডিলিমিটেশন হলে জম্মু-কাশ্মীরে ভোট হবে। নতুন নির্বাচিত সরকার হবে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেন, আমরা বলেছি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে। অবিলম্বে তা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণ মর্যাদা ফেরানোর জন্য কেন্দ্রের সরকারের পদক্ষেপ করা উচিৎ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টে তার দল সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে সাংবিধানিক এবং আইনগতভাবে যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে তা চলবে।
উল্লেখ্য, বিনা অ্যাজেন্ডায় ডাকা বৈঠকে শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল যে কেন্দ্র সরকার ডিলিমিটেশনের কথাই বলবে। ইতিমধ্যে ডিলিমিটেশন কমিশন কাজ করছে। তার এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে চলতি বছরেই। যদি জম্মু–কাশ্মীরের বিরোধী দলগুলি এই ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়াকে বয়কট করেছে। ভেঙে দেওয়া জম্মু–কাশ্মীর রাজ্যে মোট ৮৭ আসনের বিধানসভায় কাশ্মীরে ছিল ৪৬টি, জম্মুতে ৩৭টি এবং লাদাখে ৪টি আসন ছিল। এছাড়াও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জন্য ২৪টি আসন ছিল। হিন্দু প্রধান জম্মুতে অধিকাংশ আসনে জয় পায় বিজেপি।
একশোর কাছাকাছি পেট্রোল, উড়িষ্যাতেও ডিজেল একশো পার
যদিও তারপরেও অধরা থাকে রাজ্য। এখন লাদাখকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে মুসলিম নিবিড় কারগিলকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যেভাবে ডিলিমিটেশন করতে চাইছে, তাতে কাশ্মীরের আসন কমে যাবে এবং জম্মুর আসন বৃদ্ধি পাবে। ফলে হিন্দু-মুসলিম, জম্মু-কাশ্মীরের বিভাজন তুলে ভোট করলে বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই ডিলিমিটেশনই মোদী–শাহদের প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।