গুয়াহাটি মহানগরের জিএস রোডের উলুবাড়ি, খ্রিস্টানবস্তি এলাকায় উশৃঙ্খল প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠিচার্জ করা ছাড়াও কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুঁড়েছে। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী।
রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) ২০১৯ পাশ হওয়ার পর অসমের পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত দুদিনের পর আজ বৃহস্পতিবার কারফিউ কবলিত গুয়াহাটির পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্য রাজপথে ক্যাব-বিরোধী আন্দোলনকারীরা জ্বালিয়্ছেন পুলিশের গাড়ি। নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই প্রতিবাদকারী। হামলা করা হয়েছে রাজ্যের পুলিশ-প্রধানের গাড়ির ওপর। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়, কটন বিশ্ববিদ্যালয় ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুয়াহাটি এবং উজান অসমের কয়েকটি জেলায় বুধবার সন্ধ্যারাত থেকে বলবৎ করা হয়েছে কারফিউ। রাজপথে ফ্ল্যাগমার্চ করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুসজ্জিত বিশালাকার গাড়ি। এরই মধ্যে আজ গুয়াহাটি উচ্চ আদালত সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে কাতারে কাতারে ক্যাব-বিরোধী জনতা লতাশিল ময়দানে এসে জড়ো হন। এখানে আসু নেতৃত্ব, আলোচনাপন্থী আলফা নেতাগণ, কয়েকজন সাংবাদিক, অসমিয়া সুশীল ও শিল্পী সমাজের নেতারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-এর বিরুদ্ধে উদাত্ত ভাষণ দিয়েছেন।
এদিকে আজ সন্ধ্যা পাঁচটায় গুয়াহাটির প্রাণকেন্দ্র জিএস রোড সংলগ্ন লাচিতনগরে সিআরপিএফ-এর গুলিতে দুই আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজনকে দীপাঞ্জল দাস (১৮) বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। আধাসেনার গুলিতে আহত হলে দীপাঞ্জলকে নিয়ে যাওয়া হয় গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণত্যাগ করেন দীপাঞ্জল দাস। হাসপাতালে গুলিতে আহত তিনজনের চিকিৎসা চলছে। জানা গেছে, দীপাঞ্জনের বাড়ি ছয়গাঁওয়ে। রাজগড় রোডে অবস্থিত সৈনিক ভবন ক্যান্টিনের কৰ্মচারী ছিলেন নিহত দাস। অন্য জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এছাড়া হাতিগাঁওয় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে শংকরপথে উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়ে গুলি চালায় নিরাপত্তারক্ষীরা। এ ঘটনায় আরেকজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিনজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। নিহত বা আহতদের নামধাম এই খবর লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। মহানগরের গণেশগুড়ি, ছয়মাইল, ডাউন-টাউন, খ্ৰিস্টানবস্তি, উলুবাড়ি ইত্যাদি এলাকা এখনও অগ্নিগৰ্ভ। অন্যদিকে ক্যাব-বিরোধী জনতাদের চানমারি এলাকায় আটকাতে গিয়েছিল নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। তখন উত্তেজিত জনতা নিরাপত্তারক্ষীর একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
তাছাড়া গুয়াহাটি মহানগরের জিএস রোডের উলুবাড়ি, খ্রিস্টানবস্তি এলাকায় আজও উশৃঙ্খল প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠিচার্জ করা ছাড়াও কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছুঁড়েছে। পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী।
ডিব্ৰুগড়ের কুমারনিছিগা তিনআলিতে উন্মত্ত প্রতিবাদকারীদের নিয়ন্ত্রিত করতে গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
গত মঙ্গলবার থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় রাজ্য প্ৰশাসন বন্ধ করে দিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। সম্ভাব্য অশান্তি রুখতে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে বরাক উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।