চার অধ্যক্ষ সহ ৬২৫ জন চিকিৎসকের গণ ইস্তফা

3 - মিনিট |

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পদত্যাগী চিকিৎসকের সংখ্যা । রাজ্য জুড়ে বইছে ডাক্তারদের গণ ইস্তফার ঝড় । এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে ইস্তফা দিয়েছেন ৬২৫ চিকিৎসক

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পদত্যাগী চিকিৎসকের সংখ্যা । রাজ্য জুড়ে বইছে ডাক্তারদের গণ ইস্তফার ঝড় । এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে ইস্তফা দিয়েছেন ৬২৫ চিকিৎসক ।
জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ইস্তফায় সামিল সিনিয়র ডাক্তার, সরকারি হাসপাতালে আরএমও এবং প্রফেসরারও । এ বার সেই এসএসকেএম হাসপাতালেও গণইস্তফা দিলেন ১৭৫ জন চিকিৎসক । এরা ইতিমধ্যে ইস্তফাপত্রে সই করে দিয়েছেন । তাদের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে । এরমধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৮ জন সিনিয়র ডাক্তার আছেন । 
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চার জন অধ্যক্ষ চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন । নজিরবিহীন এই পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে । গোটা পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করছে চিকিৎসক মহল । সরাসরি না বললেও ইস্তফার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক অসহযোগিতাকেই কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা ।সারা রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৭০ জন প্রফেসর ডাক্তার ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর । পাশাপাশি এসএসকেএম হাসপাতালের  ১৭৫ জন ডাক্তার এবং এনআরএস হাসপাতালের  ১০০ জন ডাক্তার গণ ইস্তফা দিয়েছেন । এ ছাড়াও ইস্তফা দিয়েছেন আরজিকরের ১২৬ জন ডাক্তার । জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি এ বার গণ ইস্তফায় সামিল হয়েছেন সিনিয়র ডাক্তার এবং প্রফেসররাও । ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও ইস্তফা দিয়েছেন মেডিসিন বিভাগের ১৬ জন চিকিৎসক । ইস্তফা দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ১৮ জন চিকিৎসকও । কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০ জন সিনিয়র ডাক্তার ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন । সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে  ৬২৫ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিলেন । শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ দিন পথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল করেন । এদিনই ইস্তফা দিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজিকরের প্রিন্সিপালও ।   দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এবং নিরাপত্তার দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা ৷ ইস্তফা দিয়েছেন হাসপাতালের মনরোগ বিভাগের প্রধান নির্মল বেরা ৷ এবং ওই বিভাগেরই সহকারী প্রধান উত্তম মজুমদার ৷ ইস্তফা দেওয়ার কারণ হিসাবে নিরাপত্তার গাফিলতিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা ৷ জানিয়েছেন, তাঁরা পরিষেবা দিতে প্রস্তুত ৷ কিন্তু, এর আগে সরকারকে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ৷ প্রশাসনের উদ্দেশে তাঁদের প্রশ্ন, ‘যদি আমরাই না বাঁচি, তাহলে মানুষের প্রাণ বাঁচাব কীভাবে’? ইস্তফা দিয়ে নির্মল বেরা বলেন, ‘সরকারের এই অসহিষ্ণু মনোভাব, ডাক্তারদের নিরাপত্তার অভাব, জুনিয়র ডাক্তারদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ । এর পাশাপাশি এখন রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার যে পরিবেশ তাতে কাজ করা যায় না । তাই বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম । ইস্তফা পত্র অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছি’ । 
কেবল উত্তরবঙ্গ নয়, একই অচলাবস্থার ছবি ধরা পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও ৷ বর্ধমান মেডিক্যাল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে স্তব্ধ পরিষেবা ৷ যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন রোগীর বাড়ির লোকরা ৷ হাসপাতালের সামনে বসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন তাঁরা ৷ ‌
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি শুক্রবার ইস্তফা দিয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডক্টর প্রধান । সকলের একটাই বক্তব্য, ‘যে পরিকাঠামোয় আমাদের কাজ করতে হচ্ছে, তা কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে’।
শুরুটা হয়েছিল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ থেকেই। মুখ্যমন্ত্রীর ‘হুঁশিয়ারি’র পর আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা । বৃহস্পতিবারই ইস্তফা দিয়েছিলেন এনআরএসের প্রিন্সিপাল এবং সুপার । শুক্রবার ওই মেডিক্যাল কলেজের আরও প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক ইস্তফা দেআয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । নিজেদের মধ্যে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদে দাবি । তবে কী ভাবে, কাকে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, সেই সব বিষয়ে আলোচনা চলছে ।
বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । ৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে । আন্দোলনকারীদের হস্টেল ছাড়তে হবে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল ছাড়ার পর কার্যত জোর করে জরুরি পরিষেবা চালুর চেষ্টা হয়েছিল । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি এবং প্রশাসনিক এই ব্যবস্থার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা । 
এ ছাড়া চিত্তরঞ্জন, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ সহ প্রায় সব হাসপাতালেই চলছে ইস্তফার প্রক্রিয়া । এই পরিস্থিতির মধ্যে  গোটা রাজ্যেই  চিকিৎসা পরিষেবা এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন । মুমূর্ষ রোগী নিয়ে গেলেও ভর্তি করা হয়নি । মেলেনি প্রাথমিক চিকিৎসার মতো পরিষেবাও,এমন অভিযোগ রাজ্যের প্রায় সর্বত্র । আর জি কর, মেডিক্যাল কলেজে দেখা গিয়েছে হাসপাতালে এসেও রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের লোকজন । রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানোর ছবি রাজ্যের সর্বত্র । ফলে সব মিলিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই স্তব্দ হয়ে গেছে । অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গোটা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news