পানীয় জল সংক্রান্ত নানা সমস্যায় এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ
প্রায় চার বছর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত পাথারকান্দি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএইচই) সাব-ডিভিশনের অধীন কুকিতল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একমাত্র পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহকারী প্রকল্প। ফলে পানীয় জল সংক্রান্ত নানা সমস্যায় পড়েছেন এলাকার প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার জনগণের পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আদিম যুগের মতো মানুষকে খাল বিল পুকুর ও জলাশয় থেকে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে বিশুদ্ধ জলের অভাবে গোটা এলাকা জলবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে চলছে। বিষয়টি বার-কয়েক বিভাগীয় আধিকারিক-সহ বিধায়কের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সবাই নীরব।
এ ব্যাপারে কুকিতল গ্রাম পঞ্চায়েতের সভানেত্রী গাঙ্গোত্রী কুর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত সভানেত্রী গাঙ্গোত্রী জানান, পানীয় জল প্রকল্পটি স্থাপনের কয়েক মাস পর থেকে নানা কারণে বিকল হতে থাকে। বর্তমানে শুধুমাত্র প্রকল্পটির মূল ঘর অবশিষ্ট থাকলেও বাকি সামগ্রীগুলো উধাও হয়ে গেছে। বহু যন্ত্রপাতি চুরিও হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় মালার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিশেষ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অকেজো প্রকল্প সারাইয়ের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি। এতে স্বাভাবিকভাবে স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বেড়েই চলছে।
পঞ্চায়েত সভানেত্রীর কথায়, কমিটি গঠন করে পানীয় জল প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণ করা তো পরের কথা। প্রথমে একে জীবিত করে তুলতে হবে। এই দায়িত্ব সরকার না নিলে কখনও তাঁর গ্রাম পঞ্চায়েতে পানীয় জল প্রকল্পকে দাঁড় করানো যাবে না। এলাকার জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে ভুক্তভোগীরা বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এবং পাথারকান্দি তথা এলাকার বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পালের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাথারকান্দি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি ইঞ্জিনিয়ারিং সাব-ডিভিশনের অধীনে রয়েছে রাতাবাড়ি বিধানসভা নির্বাচন এলাকাও। বর্তমানে পাথারকান্দি ও রাতাবাড়ির সিংহভাগ পিএইচই প্রকল্পই বিকল হয়ে পড়ে আছে। গত কয়েকমাস আগে পাথারকান্দির ইচাবিলে একটি পিএইচই প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী রিহন দৈমারি এসেছিলেন। তখন তাঁকে এ-সব অভিযোগ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি শীঘ্র সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সব সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি, আর মানুষ নদী, নালা, জলাশয় ইত্যাদির নোংরা ও অপরিস্রুত জল খাচ্ছেন। ফলে বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে সমাগত নির্বাচনে শাসকদলকে এ-সবের কুফল ভোগ করতে হবে বলে সচেতন মহল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পাথারকান্দি পিএইচই সাব-ডিভিশনে কোনও স্থায়ী ইঞ্জিনিয়ার নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে ইনচার্জ এসডিই স্বপনকুমার রায়কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সরকারি সাহায্য ছাড়া মৃত কুকিতল পিএইচই প্ল্যান্টকে ফের স্বাভাবিক করে তোলা অসম্ভব। বিষয়টি বিভাগীয় কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে, জানান স্বপন রায়।