এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে কলকাতাও প্রবল জলকষ্টের মুখে পড়বে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দেশের একাধিক জায়গায় প্রবল জলসংকট দেখা দিয়েছে । এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে কলকাতাও প্রবল জলকষ্টের মুখে পড়বে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই অবস্থায় ১২ জুলাই দিনটি ‘জল বাঁচাও, জীবন বাঁচাও দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । শুক্রবার এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজ্যজুড়ে পালিত হয় দিনটি | সেখানে তুলে ধরা হয় জলের সমস্যা ও কীভাবে জল সংরক্ষণ করা যায় তা | এদিন ‘জল বাঁচাও, জীবন বাঁচাও দিবস’-এর মূল অনুষ্ঠান পালন করা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে | দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরতে শুক্রবার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সঙ্গী হন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, অভিনেতা শোহম সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা । সামিল হন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সূর, আবৃতিকার সুতপা চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক রাজ চক্রবর্তীরাও । শুধু পদযাত্রাই নয়, জল সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে নিজে গান রচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । এদিন কীভাবে জল সংরক্ষণ করা যায় তার জন্য সাধারণ নাগরিকদের পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী । জল সংরক্ষণের জন্য সাধারণ নাগরিকদের উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী । এদিকে, ভূগর্ভস্থ জল তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল কলকাতা পুরসভা।
দ্রুত নেমে চলেছে জলস্তর । এদিকে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহারের জেরে ক্রমাগত হচ্ছে জল অপচয়। সমস্যার সমাধান খুঁজতে এবার রাজ্যবাসীকে সচেতন করার জন্য প্রতি বছর ১২ জুলাই দিনটি ‘জল বাঁচাও, জীবন বাঁচাও দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরতে শুক্রবার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সঙ্গী হন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, অভিনেতা শোহম সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা । সামিল হন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সূর, আবৃতিকার সুতপা চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক রাজ চক্রবর্তীরাও ।
দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর কলকাতার বেশ কিছু অঞ্চলে গভীর নলকূপ ব্যবহার করা হয়। সেক্ষত্রে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা। পাশাপাশি আর নতুন করে কোথাও এই ভুগর্ভস্থ টিউবওয়েল বসানো যাবে না বলে কড়া নির্দেশ কলকাতা পুরসভার। যদি নির্দেশ না মানা হয় তাহলে পুরআইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে পুরাসভা। একইসাথে রাস্তার ধারে যে প্লাস্টিকের কলের মুখগুলি প্রায়শই চুরি হয়ে যায় বা ভেঙে যায়। সেক্ষত্রে এবার থেকে ইস্পাতের কলের মুখ লাগানোর ব্যবস্থা করছে পুরসভা। রাজাবাজার, মল্লিকবাজারে গঙ্গার পরিশোধিত জল দিয়ে গাড়ি ধোয়া হয়। কিন্তু এবার থেকে আর তা করা যাবে না। এই গঙ্গার জলকে পরিশোধিত করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করা হবে। জলের চাহিদা বেড়েছে। ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য সাব মার্সিবল পাম্পের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। শহরে প্রতিদিনই বাসিন্দাদের কারও না কারও বাড়িতে বসছে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে সবের তোয়াক্কা না করে সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে এহেন সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার ফুরিয়ে যাবে । এর জেরে চেন্নাই, হায়দরাবাদ, দিল্লি সহ একাধিক শহরে তীব্র জল সংকট দেখা দেবে । তালিকায় রয়েছে কলকাতাও । শহরের একাধিক ট্যাপ কলের মুখ খোলা থাকে । তা থেকে ক্রমাগত জল বেরিয়ে যায় । ফলে বিপুল পরিমাণ জল নষ্ট হয় । পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যেও জল অপচয়ের প্রবণতা রয়েছে । তা রুখতে টালা এলাকায় জলমিটারও বসিয়েছে কলকাতা পুরসভা । দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ, চেতলাতেও জলমিটার বসানোর পরিকল্পনা চলছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেভাগে সচেতন না হলে খুব শীঘ্রই ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার ফুরিয়ে যাবে । জলের জন্য হাহাকার হবে ।
দেশের দক্ষিণ অংশে এবার তীব্র জলসংকটে পড়েছেন মানুষ । প্রচুর দামে চেন্নাইয়ে কিনতে হচ্ছে পানীয় জল । এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত তেমন সমস্যা না হলেও, বিশ্বজুড়ে এই জলসংকটের প্রভাব পড়বেই সর্বত্র ৷ সেকথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের জন্য আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার । যদিও দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো কয়েকটি খরাপ্রবণ জেলায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে এরইমধ্যে ৷ রাস্তার কলে যেভাবে জলের অপচয় হয়, তা রুখতে জনপ্রতিনিধিদেরও উদ্যোগী হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
সেই কারনেই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে একইভাবে জল বাঁচাতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে । জলের অপচয় রুখতে সচেতনতায় জোর দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে । তিনি আবেদন করেছিলেন, জল অপচয় না করার । তৈরি হয়েছিল দুটি স্লোগান ৷ ‘সেভ ওয়াটার, সেভ এনভায়রনমেন্ট’ ও ‘সেভ ওয়াটার, সেভ লাইফ’। আজকের দিনটি ‘জল বাঁচাও দিবস’ হিসাবে পালন করছে রাজ্য সরকার ।