জাপানি এনেসেফেলাইটিস-এ আক্ৰান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি সংশ্লিষ্টরা সরকারের ১০২ বা ১০৮ জরুরি পরিষেবার গাড়ি না পান, তা-হলে অসম সরকারের তরফ থেকে প্রতি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার খরচ বাবদ ১,০০০ টাকা দেওয়া হবে
রাজ্যে জাপানি এনসেফেলাইটিস-এর মোকাবিলা করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। শনিবার সকালে জনতা ভবনের ই-ব্লকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এনসেফেলাইটিস সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সংবাদ মাধ্যমের সহায়তাও চেয়েছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যতদিন এনসেফেলাইটিস-এর প্রাদুর্ভাব থাকবে ততদিন কোনও সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স এবং সর্বস্তরের কৰ্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোনও অজুহাতে কেউ এই সময়কালে কোনও ছুটি পাবেন না। তাছাড়া কর্তব্যে গাফলতির অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করার কথাও শুনিয়েছেন মন্ত্রী ড. শর্মা।
রাজ্যে জাপানি এনসেফেলাইটিস-এর প্ৰাদুৰ্ভাব ক্রমশ বাড়ছে। উজান থেকে নিম্ন অসমে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারি তথ্যের খবর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের মধ্যে যে আতঙ্ক ছডিয়েছে তা দূর করতে সরকারের পক্ষ সচেতনতা বার্তা দিতে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা অনুরাগ গোয়েল এবং দুই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দু পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, জাপানি এনসেফেলাইটিস-এর লক্ষণ তিন পর্যায়ে ধরা পড়ে। প্রথম পৰ্যায়ে জ্বরের উপসর্গ ধরা পড়ে। প্রথমেই যদি এই জ্বর শনাক্ত করা যায় তা-হলে প্ৰাথমিক চিকিৎসায় রোগ নিরাময় করা যায়। পরবর্তীতে জ্বরের তীব্রতা বেড়ে যায় তখন রোগীকে সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। পরের ধাপে জ্বরের সঙ্গে থাকে মাথাব্যাথা, বমির ভাব। এর মধ্যে দেখা দেয় শরীরে কম্পন বা খিঁচুনি, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, মাংসপেশীগুলো অসার হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইসিইউতেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে বেশি আইসিইউ-এর ব্যবস্থাও নেই। তাই যখনই জ্বরের লক্ষণ ধরা পড়বে, তখন নিকটবর্তী হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা যে কোনও ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব।
মন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ক্রমবর্ধমান জাপানি এনসেফেলাইটিস আক্রান্ত রোগীর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার অসমের সব হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউগুলিকে সক্রিয় রাখার পাশাপাশি এই মশাবাহক রোগের চিকিৎসা এবং এ সংক্রান্ত ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বিনামূল্যের ওষুধও ইতিমধ্যে সরকারিভাবে সরবরাহ শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ড. শর্মা আরও জানান, জাপানি এনেসেফেলাইটিস-এ আক্ৰান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি সংশ্লিষ্টরা সরকারের ১০২ বা ১০৮ জরুরি পরিষেবার গাড়ি না পান, তা-হলে অসম সরকারের তরফ থেকে প্রতি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার খরচ বাবদ ১,০০০ টাকা দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে এই টাকা আক্ৰান্তের পরিবারবর্গের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কেবল সরকারি হাসপাতালই নয়, ব্যক্তিগত অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভরতি রোগীদেরও অসম সরকার এক লক্ষ টাকার সাহায্য প্ৰদান করবে বলে ঘোষণা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার একটি হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করবে। এই নম্বরে যোগাযোগ করলেই রোগীর পরিবার সরকারি সাহায্য লাভ করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে ডাক্তার, নার্স, এমপিডব্লিউ কৰ্মচারী তথা সর্বস্তরের কৰ্মচারীর প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, আজ ৬ জুলাই থেকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এই সময়কালে চিকিৎসক বা চিকিৎসা কৰ্মচারীদের নিজের নিজের কৰ্মস্থলে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ-ক্ষেত্ৰে কেউ যদি কৰ্তব্যস্থলে কর্মরত চিকিৎসক, কৰ্মচারী উপস্থিত নেই বলে অভিযোগ তুলেন, তা-হলে অসম সরকার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, কৰ্মচারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করবে।
এছাড়া, আজ থেকে নার্স, এমপিডব্লিউ কৰ্মচারী, আশাকৰ্মীদের সংগৃহীত প্ৰত্যেক রক্তের নমুনার বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে ৫ টাকা করে সাহায্য প্রদান করা হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন মন্ত্রী।
মন্রীলে হিমন্তবিশ্ব শর্মা বার বার এ-ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে জাপানি এনসেফেলাইটিস রোগকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক না ছড়িয়ে, বরং সজাগতা অবলম্বন করে এই ব্যাধি নিৰ্মূল করার ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।