১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীত্ব পদে আসীন হন জ্যোতি বসু | ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা তেইশ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । তিনিই ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী
আজ ৮ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী | সোমবার এই বিশেষ দিনে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | এদিন টুইটের মাধ্যমে এই শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী |
এদিন টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকীতে জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য |” একই সঙ্গে এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি পোস্ট করে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিন বিধানসভাতেও জ্যোতি বসুর ১০৪ তম জন্মদিন পালন করা হয় । প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানান কংগ্রেসের বিরোধীদল নেতা আবদুল মান্নান, সিপিএমের বরিষ্ঠ নেতা সুজন চক্রবর্তী সহ সব দলের বিধায়করা ।
১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীত্ব পদে আসীন হন জ্যোতি বসু | ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা তেইশ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । তিনিই ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী । এছাড়াও ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিপিআই(এম) দলের পলিটব্যুরো সদস্য ছিলেন।
ছাত্রাবস্থায় উচ্চশিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে গিয়ে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন বসু । ১৯৪০ সালে গ্রহণ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ । ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি রূপে নির্বাচিত হন । দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি । ড. বিধানচন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে তিনি হন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা ।
১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের পর জ্যোতি বসু যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) দলে । ১৯৬৭ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি । এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ জুন শপথ নেন পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে । ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম বিবেচিত হলেও, তিনি পার্টির সিদ্ধান্তে সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন । টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করে অবসর নেন বসু ।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসুর শাসনকাল সাফল্য ও ব্যর্থতায় মিশ্রিত । তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, ভূমি সংস্কার ও কৃষকসমাজ উন্নতির মুখ দেখেছিল । মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পরও সক্রিয় রাজনীতি করেছেন তিনি । এরপর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে, ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি, ৯৬ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় কমরেড জ্যোতি বসুর ৷ তবে বিলেত-ফেরত বাঙালি ভদ্রলোক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে জ্যোতি বসু ছিলেন এক অবিসংবাদী জননেতা | তাই বর্তমানেও তিনি নিজের দল এবং দলের বাইরেও এক বিশিষ্ট সম্মানের অধিকারী ।