নির্বাচন কমিশন ডিলিমিটিশনের যে প্রস্তাব পেস করেছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট
শিলচর : ডিলিমিটেশনের খসড়া তালিকায় বরাকের রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত স্পষ্ট, ২৬ মে সর্বদলীয় বৈঠক -পুনর্বিবেচনা না হলে বরাক বনধ সহ পৃথকীকরণের রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হবে বিডিএফ – প্রদীপ দত্তরায়।
গত পরশু নির্বাচন আয়োগ আসামের বিধানসভা ও লোকসভা আসনের ডিলিমিটেশনের যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বরাক তথা হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে রাজ্যের বাঙালিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কেড়ে নেবার চক্রান্ত স্পষ্ট। আজ বিডিএফ এর কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভাশেষে এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রদীপ বাবু বলেন যে এই খসড়া মেনে নেবার কোন প্রশ্নই উঠে না। তিনি বলেন যে বোড়োল্যান্ডের বর্তমান জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ । সেখানকার বিধানসভা আসন ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৯ করা হয়েছে। অথচ রাজ্যের বাঙালাভাষীদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এই খসড়া তালিকায় বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার আসন সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে ১২ করা হয়েছে। এমনকি যে বরাক উপত্যকায় ৪০ লক্ষ লোক বসবাস করেন সেখানেও দুটি আসন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন এই খসড়া নির্বাচন আয়োগের নয় এটি বিজেপির খসড়া।
তিনি বলেন যে ভুমিপুত্রের সংজ্ঞা এখন অব্দি ঠিক করতে পারেনি সরকার, তাঁদেরই দোহাই দিয়ে ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে বরাক তথা বাঙালিদের নিঃশেষ করার চক্রান্ত করছে এই সরকার। তিনি বলেন যেহেতু যে কোন এলাকার জনসংখ্যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় তাই পরিবর্তিত জনসংখ্যার অনুপাতে আসন নির্ধারণই ডিলিমিটেশনের উদ্দেশ্য।
বরাকের জনসংখ্যা গত দুই দশকে যেভাবে বর্ধিত হয়েছে তাতে একটি ধারণা করা যায় যে সত্যিকার অর্থে ডিলিমিটেশন হলে এখানকার বিধানসভার আসন সংখ্যা বর্তমানে কুড়ি ও লোকসভার আসন সংখ্যা তিনটি হওয়ার কথা। তিনি বলেন ২০০১ সালের আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে এখন খসড়া প্রকাশ করা অর্থহীন ও দুরভিসন্ধিমূলক কারণ এরপর ২০১১ তে সেন্সাস হয়েছে এবং তারপরও পেরিয়ে গেছে এক দশক।
তাই তিনি সরকারকে আবেদন জানিয়েছেন যে বরাকের পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে অন্তত কুড়িটি বিধানসভা ও তিনটি লোকসভা আসনের প্রস্তাব নির্বাচন আয়োগের কাছে পাঠাক সরকার। তিনি বলেন এই ডিলিমিটেশনে বরাকের হিন্দু সম্প্রদায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এই ব্যাপারে সরকারকে ৭২ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। প্রদীপ বাবু বলেন অন্যথা আগামী ২৬ মে অন্যান্য সমভাবাপন্ন দল সংগঠনকে নিয়ে যৌথসভা হবে।
এবং সেই সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামীতে বরাক বনধ সহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি নেবেন তাঁরা। তিনি আরো বলেন যে যদি সবকিছুর পরও এই খসড়া পুনর্বিবেচিত না হয় তবে বরাক পৃথকীকরণের রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হবেন তাঁরা। এবং তেমন হলে এরজন্য সরকারপক্ষই সম্পুর্ন দায়ী থাকবেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে ১৪ জুলাই এর আগে নির্বাচন আয়োগের কাছে একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হবে তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে। এরজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনার কাজ অবিলম্বে শুরু করা হবে। তিনি বলেন বরাকের অবস্থান এমনই যে ভৌগলিক ভাবে এটি একটি স্বতন্ত্র ভুখন্ড।
যেহেতু গত কয়েক দশকে এখানকার জনসংখ্যার বেড়েছে তাই আসন সংখ্যা কমার কোন প্রশ্নই উঠে না বরং এটি অনেক বাড়ার কথা। তিনি বলেন দুটি আসন কমে যাওয়া মানে জনগণের কন্ঠস্বর শাসকের কাছে পৌঁছানোর কাজ আরো সীমিত হবে। বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের টাকা আসবে না। এবং উপত্যকা হিসেবে দিশপুরে বরাকের রাজনৈতিক ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তিনি বলেন ঠিক এটাই চাইছে বর্তমান সরকার।এইজন্যই সর্বাত্মক প্রতিবাদ জরুরী ।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের অপর আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে ডিলিমিটেশনের ক্ষেত্রে ভৌগলিক নৈকট্য,এডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লকের সাযুজ্য, এবং জনগনের যাতায়াতের সুবিধাকে প্রাধান্য দেবার কথা এই সংক্রান্ত আইনে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে। কিন্তু এই খসড়া তালিকায় এই তিনটি বিষয়কেই নস্যাৎ করা হয়েছে। যেভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে এক জিপিকে অন্য জিপির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাতে ভৌগলিক যোগাযোগ নেই এবং তাই এই তালিকা বাস্তবায়িত হলে বাসিন্দারা মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন।
বিভিন্ন কাজে শিলচরের নাগরিককেও উধারবন্দ, করিমগঞ্জের নাগরিককে বদরপুর,বড়জালেঙ্গার লোককে বড়খলা ছুটতে হবে। এতে যেমন সময়ের অপচয় হবে তেমনি সবাইকে আর্থিক, শারীরিক ক্ষতির শিকার হতে হবে। তিনি তাই উপত্যাকার সমস্ত সংগঠনকে এই তালিকার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন আয়োগের কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন ।