সরলা মেডগল ও ভারত সরকারের মধ্যে মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছিল তাতেও ইউনিফর্ম সিভিল কোড এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে
শিলচর : অভিন্ন দেওয়ানি আইন বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে মজবুত করবে। সারাদেশে এই আইন চালু করার যৌক্তিকতা দেখিয়ে এই কথা বলল হিন্দু লিগেল সেল। ল কমিশনকে দেওয়া একটি চিঠিতে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সংস্থার অহ্বায়ক এডভোকেট ধর্মানন্দ দেব ও যুগ্ম অহ্বায়ক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলেছেন, এই আইন তৈরি হলে সারা দেশের প্রত্যেকটি জনগণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রকাশ করতে পারবেন।
এতে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা আরো গতিশীল হবে। বিবাহ বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ক আইন গুলি সহজ হবে। এমনকি একটি শিশুও অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে আইনগুলি বুঝতে পারবে। জটিলতা থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ সঠিক বিচার পাবেন। স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিফর্ম সিভিল কোড আসলে এতদিন থেকে কার্যকর করতে চায়নি কোন সরকার। ব্যক্তিগত আইনে কোন হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলেছিল ব্রিটিশরা।
পরবর্তীতেও এই ধারা বজায় থাকে। অথচ সংবিধানের ৪৪ (২) ধারার চতুর্থ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটাকে আইনের পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ বিয়ে ,বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পত্তির উত্তরাধিকার অভিভাবকত্ব এসব ক্ষেত্রে আইন সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। না হলে বিচারে অনেক অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই প্রকৃত বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
দেশের প্রায় অর্ধেক নাগরিক শুধুমাত্র এই কারণে ন্যায্য বিচার পাচ্ছেন না। তাই এইসব আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে হিন্দু সে ল।এক্ষেত্রে কয়েকটি বিখ্যাত রায়ের উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন রায়ে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা ইউনিফর্ম সিভিল কো ডের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট আলিয়া বৈষ্ণবী বনাম শিব শিকায় মামলায় বিচারপতি পরিষ্কারভাবে বলেছেন ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রয়োজন রয়েছে। দেখা গেছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইন থাকায় বিচারের ক্ষেত্রে অনেক সময় অসুবিধা দাঁড়ায়। অনেক সময়ই সঠিক বিচারে একটা প্রতিবন্ধকতা হয়। এক্ষেত্রে গোয়াতে অভিন্ন দেওয়া নিয়ে আইনের প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া কমন সিভিল কোড ও পার্সোনাল ল ‘এর মধ্যে দূরত্বটা কমিয়ে আনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এই রায়ে। আর এটা সম্ভব একমাত্র অভিন্ন দেওয়ানি আইনের মাধ্যমে।
এই অবস্থায় একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় সমাজ গড়ে তুলতে হলে ইউনিফর্ম সিভিল কোড খুবই জরুরি। এই এনিয়ে শাহবানু মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আদালত সবসময়ই ইউনিফর্ম সিভিল কোর্টের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের এবং সংসদের উচিত এতে সহযোগিতা করা। কিন্তু শাহবানু মামলায় সংসদ অন্য পথে হেটেছে।
সংখ্যালঘু সমাজকেই কমন সিভিল কোড এর ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। সরলা মেডগল ও ভারত সরকারের মধ্যে মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছিল তাতেও ইউনিফর্ম সিভিল কোড এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। প্রথম স্ত্রীকে খরপোশের ক্ষেত্রে বাধ্য করা যাচ্ছিল না স্বামীকে কারণ স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন মুসলিম হিসাবে। যার জন্য সঠিক বিচার আদালত দিতে পারছিল না।
এভাবে অনেক সময় বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগত আইনের সঙ্গে সাধারণ আইনের একটা সংঘাত লেগে থাকে। এর থেকে নিস্তার পেতে হলে অভিন্ন দেওয়ানি আইন খুবই প্রয়োজন । এই আইন প্রয়োগ করার জন্য ল কমিশনারের কাছে আবেদন রেখেছে হিন্দু লিগ্যাল সেল।
ল কমিশন ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে সারা দেশে মতামত জানতে চেয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এই মতামত জানানো হয়েছে বলে জানান ধর্মানন্দ দেব। তিনি বলেন সারাদেশ একটি আইন চালু হলে ভারতীয় সমাজ অনেক এগিয়ে যাবে এবং আধুনিক হবে। বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের সংঘাতে বিচার প্রক্রিয়ায় যে বিলম্ব হয় এবং মানুষ সুবিচার পান না। সেটারও অবসান ঘটবে।