নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, ‘এই বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন না করতো, তাহলে এই বিলের প্রয়োজন হত না। কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করেছিল।’
ধ্বনি ভোটে লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। ৩৭৫-এর মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর পক্ষে ভোট পড়েছে ২৯৩। বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৮২। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক-প্রতিবাদ চলছে গোটা দেশজুড়ে। ক্ষোভে ফুঁসছে উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসম। প্রবল বিতর্কের মধ্যেই সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার পরই ক্ষোভ উগড়ে দেন লোকসভার কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস সাংসদ বলেছেন, ‘দেশের সংখ্যালঘু মানুষদের টার্গেট করা ছাড়া আর কিছুই নয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।’ বিলটির বিরোধিতা করেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ও। সৌগত রায় বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিভাজন সৃষ্টিকারী এবং অসাংবিধানিক, ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে এই বিল। এই বিল ডা. আম্বেদকর-সহ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জনকদের কল্পনা ও চিন্তাধারার বিরুদ্ধে।’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ‘ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়েছেন আরএসপি সাংসদ এম কে প্রেমাচন্দ্রন। স্পিকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ‘এই ধরনের আইন থেকে দেশকে বাঁচান…তা না হলে হিটলার এবং ডেভিড বেন-গুরিওনের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম তুলনা করা হবে।’
অধীর-সহ বিরোধীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘এই বিল দেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ০.০১ শতাংশও নয়। এই বিলের স্বপক্ষে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেব আমি, তখন আবার ওয়াকআউট করবেন না আপনারা।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, ‘এই বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন না করতো, তাহলে এই বিলের প্রয়োজন হত না। কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করেছিল।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘এই তিনটি দেশের (আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) কোনও মুসলিম যদি আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন, তবে আমরা তা বিচার করব। কিন্তু, ওই ব্যক্তি সংশোধনীর (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) সুবিধা পাবেন না, কারণ তিনি ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হননি।’ এরপরই ধ্বনি ভোটে লোকসভায় পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
শুধুমাত্র কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও আরএসপিই নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিপক্ষে সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টিও। সংসদের বাইরে সপা সাংসদ (উত্তর প্রদেশ, আজমগড়) অখিলেশ যাদব এদিন জানান, ‘আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিপক্ষে। এই বিলকে যে কোনও মূল্যে বিরোধিতা করবে সপা।’ অসমের ধুবরির সাংসদ (লোকসভা) বদরুদ্দিন আজমল জানিয়েছেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধান এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিরুদ্ধে। আমরা কখনই এই বিল পাশ হতে দেব না।’ যদিও, লোকসভায় এদিন ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এবার রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার অপেক্ষা। কিছুদিন আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ছাড়পত্র দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এরপর সোমবার আলোচনার জন্য লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যাঁরা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হব। বিলটিতে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালকে ধরা হয়েছে। কিন্তু, প্রতিবেশী তিনটি মুসলিম দেশ থেকে ভারতে আসা মুসলিমরা এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন না।