ধুলোর আস্তরন জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পত্ররন্ধ্র | এবার থেকে সেই পাঁচতলা সমান উচুঁ গাছগুলির পাতার জমা ধুলো জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার অভিযান শুরু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা
গাছ লাগানো সত্ত্বেও দূষণের পরিমান ততটা কমছে না শহরে | ধুলোর আস্তরন জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পত্ররন্ধ্র | ফলে গাছ লাগিয়েও লাভ হচ্ছেনা কিছু | এবার থেকে সেই পাঁচতলা সমান উচুঁ গাছগুলির পাতার জমা ধুলো জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার অভিযান শুরু করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা | পুরমন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে শহরজুড়ে কাঁদুনে দেবদারু ও নিমগাছ বসানোর পাশাপাশি তিলোত্তমার বুক থেকে দুষিত বায়ু টেনে নিতে দুই ওয়ার্ড পিছু একটি করে বিশ্বমানের ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ যন্ত্র বসানোর ভাবনাও শুরু হয়েছে পুরভবনে। নবান্ন থেকে অনুমতি ও আর্থিক মঞ্জুরি পেলেই পাশ্চাত্যের শহরের মতো যন্ত্রেই কলকাতার বায়ু পরিশোধন হবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে পুরসভার তরফে।
যে পরিমান গাড়ি কলকাতায় বর্তমানে চলছে সেই পরিমান উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে | এর সাথেই বাতাসে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কালো ধোঁয়া-ধুলো এবং কার্বন কণার হার। এর ফলে এই ধোঁয়া ও ধুলো গাছের পাতায় গিয়ে জমে মোটা আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। আগে বৃষ্টির জলে এইসব ধুলো ধুয়ে যেত কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে প্রকৃতিও বিরূপ হয়েছে | গাছ কেটে ফেলার ফলে বৃষ্টির পরিমান কমেছে | এই কারণেই গাছের সবুজ পাতার রন্ধ্রপথ দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেকটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে দ্রুতই পাতা তার সবুজ রঙ হারিয়ে হয়ে পরছে বিবর্ণ |
পার্ক ও উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “গাছের পাতার জমা মোটা ধুলোর স্তর সরাতে আপাতত দশটি বিশেষ গাড়ি নামানো হচ্ছে। এই গাড়ি দিয়ে পাঁচতলা উচ্চতা পর্যন্ত শহরের সমস্ত গাছের পাতা ধুয়ে ফেলা যাবে। পুজোর আগে আরও দশটি গাড়ি আসবে। তখন ২০টি গাড়ি একসঙ্গে ভোরের আলোয় শহরের সবুজ পাতাকে স্নান করিয়ে মালিন্য মুক্ত করবে।” দেবাশীষবাবু আরও জানান, “গাড়ি ছাড়াও রাস্তার মাঝের ডিভাইডার ও পার্কে যে সমস্ত ছোট গাছ এবং গুল্ম আছে সেখানেও পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলার কাজ চলবে। শহরে গাছের সবুজ পাতা যত বেশি পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে ততই বাতাস বেশি পরিশুদ্ধ হবে”।
দিন কয়েক আগে পুরসভার সদর দফতরে বহুজাতিক সংস্থার তৈরি এমন একটি বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছে। নয়া যন্ত্রটি একদিকে যেমন বাতাস থেকে বিপুলহারে কার্বন শুষে নিচ্ছে অন্যদিকে তেমনই বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকা দূষণের কণার পরিমাণও পরিমাপ করছে। আপাতত একমাস ধরে ওই যন্ত্রের তথ্য সংগ্রহ করার পর পুরো পরিস্থিতি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মেয়র পারিষদ উদ্যান দেবাশিস কুমার জানান। একটি এয়ার পিউরিফায়ারের যন্ত্রের দাম প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। কমপক্ষে ৭২টি যন্ত্র দরকার শহরের বায়ু পরিশোধন করতে হলে। এর ফলে খরচও হবে বিপুল অঙ্কের টাকা। কিন্তু পুরসভার পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব না। তাই আর্থিক দিক চিন্তা করে প্রস্তাবটি রাজ্য সরকার তথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে গ্রীন সিগন্যাল মিললেই শুরু হবে পিউরিফায়ার বসানোর কাজ |