অবিরাম বৃষ্টির কারণে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ভেঙে পড়ছে দেওয়াল ও বহু পুরানো বাড়ি। গত শনিবারই পুণের কোন্ধওয়াল এলাকায় আবাসনের বিশালাকার দেওয়াল ভেঙে ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল চারটি শিশু ও দু’জন মহিলা-সহ ১৫ জনের
প্রবল বৃষ্টির জেরে নাজেহাল পুণে, মুম্বই ও থানে-সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত। দেওয়াল চাপা পড়ে মহারাষ্ট্র, থানে, পুনেতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৫। মুম্বইয়ের বেহাল অবস্থার জন্য শিবসেনা পরিচালিত বৃহন্মুম্বই পৌরনিগমকে দায়ী করেছে কংগ্রেস এবং এনসিপি। অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে শিবসেনা। পৌরনিগমের তরফ থেকে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নিহতদের পরিবারবর্গকে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি আহতদের চিকিৎসার খরচও বইবে রাজ্য সরকার।
অবিরাম বৃষ্টির কারণে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ভেঙে পড়ছে দেওয়াল ও বহু পুরানো বাড়ি। গত শনিবারই পুণের কোন্ধওয়াল এলাকায় আবাসনের বিশালাকার দেওয়াল ভেঙে ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল চারটি শিশু ও দু’জন মহিলা-সহ ১৫ জনের। তাছাড়া মঙ্গলবার ভোররাতেই উত্তর মুম্বইয়ের শহরতলি পূর্ব মালাদ-এ দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। পরে সেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২১। নিহতদের পরিবারবর্গকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা রাজ্য সরকারের।পূর্ব মালাদ-এর বিয়োগান্তক ঘটনার কয়েকঘন্টা আগেই পুণের আম্বেগাঁও-এ ভেঙে পড়ল সিংহগড় কলেজের দেওয়াল। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জন শ্রমিকের। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার গভীররাত ১.১৫ মিনিট নাগাদ আচমকাই সিংহগড় কলেজের দেওয়াল ভেঙে পড়ে। সেই সময় দেওয়ালের পাশেই ঝুপড়িতে ছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জন শ্রমিকের। এছাড়াও ৩ জন আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, অবিরাম বর্ষণের কারণেই ভেঙে পড়েছে সিংহগড় কলেজের দেওয়াল। এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক এন কিশোর রাম জানিয়েছেন, ‘বিল্ডিং নির্মাতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২৮৭টি সাইটের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়েছে, এই সাইটটির মূল্যায়ন করা যায়নি, কারণ অনুমতি ছিল না।’ জেলাশাসকের কথায়, প্রবল বৃষ্টির জেরে একটি গাছ ভেঙে পড়ে সিংহগড় কলেজের দেওয়ালে। এরপরই দেওয়াল ভেঙে পড়ে ঝুপড়িতে। মৃত শ্রমিকদের নাম হল-মমতা রাধেলাল প্যাটেল (২২), রাধেলাল প্যাটেল (২৫), জেঠুলাল প্যাটেল (৫০), তাঁর স্ত্রী, জিতু রাবতে এবং প্রহ্লাদ রাবতে। মৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশে। অন্যদিকে, সোমবার গভীররাতেই মহারাষ্ট্রের থানে জেলার কল্যাণ শহরে ভেঙে পড়ে ন্যাশনাল উর্দু স্কুলের দেওয়াল। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের, এছাড়াও আহত হয়েছেন একজন। পুলিশ সূত্রের খবর, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবার রাত ১২.৩০ মিনিট নাগাদ কল্যাণ শহরে ভেঙে পড়ে ন্যাশনাল উর্দু স্কুলের দেওয়াল। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত বৃষ্টির জেরে দেশের বাণিকজ্য নগরী মুম্বইতে বেহাল অবস্থা। শহরের একাধিক জায়গায় জল জমে যাওয়ার ফলে জনজীবন ব্যাহত গোটা মুম্বইতে। এমন পরিস্থিতির জন্য মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিবসেনা জোটকে দায়ী করল কংগ্রেস। একই ইস্যুতে নিন্দায় সরব এনসিপি।শিবসেনা শাসিত বৃহন্মুম্বই পৌরনিগমকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চবন বলেন, মুম্বইকে ডুবিয়ে দেওয়ার শহরবাসীর কাছে ক্ষমতা চাওয়া উচিত শিবসেনার। প্রাকবর্ষার সময় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা উচিত ছিল উদ্ভব ঠাকরের। লোকসভা নির্বাচনের পর মন্দির থেকে সাংসদদের বের করে এনে বর্ষায় জল যাতে না জমে তার জন্য কাজে লাগানো উচিত ছিল। এমন করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হত না। অন্যদিকে দেওয়াল ধসে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মৃত্যু ঘটনায় রাজ্য সরকারকে দায়ী করে এনসিপি নেতা ধনঞ্জয় মুণ্ডে বলেন, একাধিক দেওয়াল ধসে পড়ার ঘটনার পরে সড়ক, সেতু, আবাসনগুলি কেমন অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ অডিট হওয়া উচিত। মালাড, কল্যাণ, পুনেতে দেওয়াল ধসে ২৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে মুম্বইয়ের রাস্তা। বৃষ্টি ছাড়া এই বিষয়ে দুর্নীতিও সমান ভাবে জড়িত। দুর্নীতিতে যারা মত্ত তাদের হয়তো ক্লিনচিট দিতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু যারা মারা গিয়েছে তাদের কি ফিরিয়ে আনা যাবে। জল জমে যাওয়ার ফলে বহু মানুষ আটকে পড়েছে। রেল পরিষেবাও কার্যত ভেঙে পড়েছে। কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওয়া বলেন, দেওয়া ধসে গিয়ে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মুম্বই-আহমেদাবাদ বুলেট ট্রেনের জন্য ৫৪০০০ গাছ কাটা হয়েছে। এই গাছগুলিই এতদিন পর্যন্ত ঝড়, বৃষ্টি থেকে দেশের বাণিজ্য নগরীকে রক্ষা করে চলত।জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার বৃহন্মুম্বই পৌরনিগমের বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণের কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে এমনই জানালেন শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জেরে বেহাল অবস্থা মুম্বাই সহ গোটা মহারাষ্ট্রের। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এবং এনসিপি দায়ী করেছে শিবসেনা শাসিত বৃহন্মুম্বই পৌরনিগমকে। অন্যদিকে বিরোধীদের যাবতীয় দাবিকে খণ্ডন করে দিয়ে আদিত্য ঠাকরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এমন বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরিস্থিতি জটিল। অযথা বিতর্ক তৈরি করা উচিত নয়। একদিনে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে মুম্বইতে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে মুম্বইতে। সোমবার থেকে গত ২৪ ঘন্টায় বিপুল বৃষ্টিপাত হয়েছে মুম্বইতে। ২০০৫ সালের পর যা সর্বাধিক বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহন্মুম্বই তরফে ট্যুইট বার্তায়, এমন বৃষ্টিপাত আগে কখনও হয়নি। গত এক দশকে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে এখানে। গোটা জুন মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে সেই পরিমাণ বৃষ্টিগত ২৪ ঘন্টায় হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য যথা্যথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।