বরাকের ভাষা আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন জাতিধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যের দলিল, পৃথকীকরণের আন্দোলনও সেভাবেই সফল হবে

4 - মিনিট |

সাম্প্রদায়িক জুজু দেখিয়ে এই আন্দোলনকে রোখা যাবেনা -বরাক বিজেপির নেতাদের অহেতুক বিভাজনের প্রচেষ্টা ধিক্কারযোগ্য – বিডিএফ

কেআরসি টাইমস বারাক ভ্যালি ব্যুরো

শিলচর : বরাক পৃথকীকরণ নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কাছাড় ও হাইলাকান্দির বিজেপি নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন যে বরাককে ইসলামিক রাস্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে এসব বিজেপি দলের পুরোনো খেলা। যখনই তারা কোন রাজনৈতিক হুমকির মুখে পড়েন তখনই হিন্দু মুসলিম কার্ড খেলতে শুরু করেন। এবারও সেটাই দেখা গেল। প্রদীপ বাবু বলেন অথচ বরাকের চাকরি বঞ্চনা, ডি সমস্যা ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি না দেওয়া ,অনুন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে যখন বিডিএফ সরব হয় তখন এসব নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন।

তিনি বলেন যে বিজেপি দলেরও তো সংখ্যালঘু বিভাগ রয়েছে এবং দেশের মুসলমানদের উদ্দেশ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। তাহলে কেন একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বারবার অপমান করা হচ্ছে, তাঁদের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে ? তিনি বলেন এই উপত্যাকা থেকে মন্ত্রী হয়েছেন মঈনুল হক চৌধুরী। কাছাড় কাগজ কল, চিনি কল, বদরপুর টেক্সটাইল, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদি স্থাপনে তাঁর অন্যতম ভূমিকা রয়েছে।

Register your business, organisation, and services in ‘InfoCom Silchar Diary’
e-mail: infocom.krc@gmail.com
Know More | Apply Here

প্রদীপ বাবু বলেন এসব কি বরাকের উন্নয়নের জন্য করা হয়নি ? তিনি বলেন আনোয়ারা তাইমুর যখন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন কি সুশাসন পাওয়া যায়নি ? প্রদীপ বাবু বলেন বিজেপি দলের দলদাসরা বস্তাপচা কিছু পুরোনো কাসুন্দি টেনে শুধু নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে উদগ্রীব, রাজ্যের বাঙালি হিন্দুদের প্রতি তাঁদের অবদান শূন্য। তিনি বলেন রাজ্যের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে খোদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরও গোয়ালপাড়ায় তৈরি হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প।

তাঁর প্রশ্ন এই ক্যাম্পে কি বাঙালি হিন্দুদের আটকে রাখা হচ্ছে না ? এন আর সি করে যখন ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হল, আধার কার্ড অকেজো করে রাখা হল, তখন এসব নেতারা কোথায় ছিলেন ? নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে রাষ্ট্রপতি সাক্ষর করার পর তিন বছর হয়ে গেল শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে আজও এই বিল বাস্তবায়ন হলনা। এসব নিয়ে এইসব নেতারা নিশ্চুপ কেন ? প্রদীপ বাবু বলেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বরাকে এখন অতীতের বিষয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যখন সারা দেশে দাঙ্গা হয়েছে বরাকের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায় তখন সাম্প্রদায়িক উস্কানীতে কান না দিয়ে শুভবুদ্ধি ও সম্প্রীতি বজায় রেখেছেন।

বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক বলেন যে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে ভাষা আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনকেও বানচাল করার জন্য উভয় সম্প্রদায়ের এমন কিছু অর্বাচীন নেতা ও দালালরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বরাক বাসী এসব ফাঁদে পা দেননি। এই দুই বৃহৎ আন্দোলনের সময় বরাকের স্বার্থে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই একজোট হয়েছেন, প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন। তাই যদি পৃথকীকরণের আন্দলনও দানা বাঁধে তখনও একই ভাবে বরাকের হিন্দু, মুসলিম ,ডিমাসা,চা জনজাতি, মনিপুরী সহ সমস্ত গোষ্ঠী এতে সামিল হবেন। তাই তিনি বরাকের বিজেপি নেতাদের এসব অহেতুক উস্কানি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রদীপ দত্তরায় এদিন আরো বলেন যে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের এক প্রশ্নের জবাবে সরকার জানিয়েছে যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বরাক থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১ লক্ষ পনের হাজার উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৭০০ এবং হয়তো প্রকৃত নিয়োগ পেয়েছেন তার অর্ধেক। অর্থাৎ শেষ ২৬০০০ পদের বিপরীতে বরাক থেকে নিযুক্তি পেয়েছেন ৮০০ জন। তাই এতে যেমন মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাচার প্রমানিত হয়েছে তেমনি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বরাকের প্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাত যে চলছে তাও পরিস্কার।

Advertisement | InfoCom Solutions
Follow Us

তিনি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে শুধু কয়েকজন বামপন্থী পৃথকীকরণের আওয়াজ তুলছেন। তিনি বলেন চাকরি বঞ্চনা নিয়ে বিডিএফ যখন বনধ ডেকেছিল তখন বরাকের ৪২ লক্ষ নাগরিক তা স্বতস্ফুর্তভাবে সফল করেছিলেন। একই ভাবে ডিলিমিটেশন করে বরাকের রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণের বিরুদ্ধে বিডিএফ ও অন্যান্য দল সংগঠন এর ডাকা বনধ সম্পুর্ন সফল হয়েছে।

তার প্রশ্ন দু তিনজন মিলে কি এসব কর্মসূচি সফল করতে পারেন ? তিনি আরো বলেন যে বামপন্থীরা সারা বিশ্বের শ্রমজীবীদের ক্ষমতায়ন ও ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করে।তাই তারা আদর্শগতভাবে সর্বদাই পৃথকীকরণের বিপক্ষে। তিনি বলেন বোঝা যাচ্ছে বরাক বিজেপির নেতারা মুখ্যমন্ত্রীকে বরাকের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। সেজন্যই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী ডিলিমিটেশন নিয়ে বরাক বাসীর ক্ষোভ সম্যক উপলব্ধি করতে পারছেন না।

বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিন আবার তাঁদের দাবিসমূহ নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন যে খবরে প্রকাশ যে আগামী পুজোর সময় মুখ্যমন্ত্রী হাইলাকান্দি আসছেন। যদি বিহু কমিটিগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী একলাখ টাকা করে অনুদান দিতে পারেন তবে পুজো কমিটিকে নয় কেন ? অন্ততঃ ২৫,০০০ টাকা করে অনুদান তো অবশ্যই দেওয়া উচিত। তিনি বলেন ১ লক্ষ নিয়োগের বিপরীতে জনসংখ্যার অনুপাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে বরাক থেকে ১৫০০০ নিযুক্তি হওয়ার কথা।

অবিলম্বে এসব পদে বরাক থেকে অন্তত পাঁচ হাজার নিযুক্তি দিতে হবে। এছাড়া ভাষা শহিদ স্টেশন নামকরণ,ভাষা শহিদদের সরকারি স্বীকৃতি এসবকে অনর্থক ঝুলিয়ে রাখা যাবেনা। অসম সাহিত্য সভা সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সংগঠনকে যেভাবে অনুদান দেওয়া হচ্ছে সেভাবে অনুদান দিতে হবে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনকে।রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর ভাষাকে অবিলম্বে সরকারি সহযোগী ভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে। এবং বরাকের বিধানসভা আসনের ক্ষেত্রে পূর্ববস্থা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন অন্যথা ১৩ নয় ৬০ আসনের পৃথক বরাক বিধানসভা আসনের জন্য নির্বাচন হবে আগামী ২০২৬ সালে। এবং এটি নিশ্চিত।

এদিন সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সজল দেবরায়, বাহার আহমেদ চৌধুরী, রিপন দাস প্রমুখ। বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক দেবায়ন দেব ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *