বিশ্বের বিনিয়োগ কর্তাদের এখন আমরা লাল ফিতের ফাঁসে বেঁধে রাখতে আগ্রহী নই, বরং উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে তাঁদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত

4 - মিনিট |

‘ইনভেস্ট কর্ণাটক, ২০২২’ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনকালে বললেন প্রধানমন্ত্রী

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

কর্ণাটক হল প্রযুক্তি ও ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও সংস্কৃতি, অনুপম স্থাপত্য ও প্রাণবন্ত স্টার্ট-আপ-এর এক মহামিলন ক্ষেত্র। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যখনই আমরা মেধার কথা উল্লেখ করি তখনই যে নামটি আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে তা হল ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গালুরু’। বেঙ্গালুরু নামটি শুধু ভারতেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই আজ সুপরিচিত।

আজ ‘ইনভেস্ট কর্ণাটক, ২০২২’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক এক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। কর্ণাটকে আয়োজিত এই সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখেন ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কর্ণাটক সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে এক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে ভারত আজ আর পেছন ফিরে তাকাতে রাজি নয়। তার সামনে এখন আগামীদিনের যাত্রাপথ অনেক সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে অপেক্ষমান। গত বছরই ভারতে ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এখন ভারতের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের এই অনিশ্চিত সময়েও ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে আস্থা ও বিশ্বাসের মনোভাব গড়ে উঠেছে অধিকাংশ দেশেই। সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারত যে একইসাথে এগিয়ে চলেছে তাই নয়, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গেই কাজ করে যেতে সে এখন সমান আগ্রহী।

বিশ্বের অন্যত্র যেখানে যোগান শৃঙ্খল আজ বিপর্যস্ত, সেখানে একমাত্র ভারতই পারে ওষুধ ও ভ্যাক্সিন সরবরাহ করতে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি যেখানে রুদ্ধ প্রায়, ভারতে তখন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা শুধুমাত্র উজ্জ্বলই নয়, বাণিজ্যিক উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টাও যথেষ্ট শক্তিশালী।

শ্রী মোদী বলেন, প্রায় প্রতিটি দিনই ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও এবং আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে আমরা পূর্ণোদ্যমে ছুটে চলেছি। বিনিয়োগকারীদের লাল ফিতের ফাঁসে বেঁধে রাখতে আমরা এখন আগ্রহী নই বরং, বিনিয়োগ কর্তাদের স্বাগত জানাতে রেড কার্পেট নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলতে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে সংশ্লিষ্ট জটিল আইনগুলিকে আরও বাস্তবমুখী করে তুলছি।

কারণ, বলিষ্ঠ সংস্কার প্রচেষ্টা, পরিকাঠামোর ব্যাপক প্রসার এবং সেরা মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক নতুন ভারত গড়ে তোলা সম্ভব। সরকারের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্তমানে বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, জিএসটি, আইবিসি, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সংস্কার, ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেন এবং দেড় হাজারের মতো অতি প্রাচীন আইন-কানুন ও ৪০ হাজারের মতো অপ্রয়োজনীয় জটিলতা পরিহারের মাধ্যমে আমরা বাণিজ্যিক প্রচেষ্টাকে উত্তরোত্তর সফল করে তুলছি।

‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সুসংহত পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে জোরদার করে তুলতেই এই মাস্টার প্ল্যানটি রচিত হয়েছে। এমন একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে যাতে শুধু নতুন নতুন পরিকাঠামোরই প্রসার ঘটবে না, সেইসঙ্গে বর্তমান পরিকাঠামোগুলিও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

দেশের শেষ সীমা পর্যন্ত সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শ্রী মোদী বলেন, ভারতের এই প্রচেষ্টায় যুবশক্তির মেধা ও উৎসাহ যথেষ্ট অবদানের স্বাক্ষর রেখেছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ খুব সহজেই সম্ভব হয়ে উঠতে পারে বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে।

এইভাবেই স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতে বিনিয়োগের প্রসার ঘটেছে উল্লেখ করার মতো। একইসঙ্গে, আমাদের লক্ষ্য হল দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদের বিকাশ। মানবসম্পদকে একটি বিশেষ মূলধন বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টা আরও বেশি করে আকর্ষণ করছে বিশ্বের বিনিয়োগ কর্তাদের। আমাদের এই প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে দুটি বিষয় – পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন ও নিরন্তর জ্বালানির উৎস উদ্ভাবন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ কর্তারা মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে আসেন বিনিয়োগ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে। ভারতেও তেমনই রয়েছে বহু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা। ন্যানো-ইউরিয়া, হাইড্রোজেন এনার্জি, গ্রিন অ্যামোনিয়া এবং মহাকাশ উপগ্রহের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারতের উন্নয়ন ও কর্মপ্রচেষ্টার কিছু খণ্ডচিত্রও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, বর্তমান সময় হল ভারতের অমৃতকাল। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে এক নতুন ভারত গঠনে সঙ্কল্পবদ্ধ দেশবাসী।

বিজ্ঞাপন

আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে এক উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ভারতের। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের উৎসাহ উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বিশ্বের উন্নয়ন প্রচেষ্টাতেও গতি সঞ্চার করতে পারে। কারণ, ভারতে বিনিয়োগের অর্থ অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপ্রচেষ্টায় বিনিয়োগ তথা গণতান্ত্রিক পন্থাপদ্ধতি ও ব্যবস্থায় বিনিয়োগ।

শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ কর্তাদের স্মরণে রাখতে হবে যে ভারতে বিনিয়োগের অর্থ হল সমগ্র বিশ্বের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ। পৃথিবীকে এক উন্নততর, দূষণমুক্ত এবং নিরাপদ বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে গড়ে তুলতে এই প্রচেষ্টার কোনো তুলনা নেই।

কর্ণাটকে এই ধরনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজিত হওয়ায় বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক তথা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর এ হল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অসংখ্য বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে যা ভবিষ্যতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকেও আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান যুগ সন্ধিক্ষণের বিষয়টি তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির এক বিশেষ পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ, এক সময় নীতি নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়নের মধ্যে বহু ফারাক আমরা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু এখন আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা, তা হল – এগিয়ে যাওয়া। ‘চরৈবেতি’ মন্ত্রকে সম্বল করে সেই লক্ষ্যেই আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

Register your business, organisation, and services in ‘InfoCom Silchar Diary’
e-mail: infocom.krc@gmail.com
Know More | Apply Here

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news