কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে
মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন এবং ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য মূল কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় তাদের। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজন সেরে নয়াদিল্লিতে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করলেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিকেলে এই যৌথ বৈঠক করেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এবং মার্কিন বিদেশ সচিব।
মঙ্গলবার রাতেই ভারত সফরে নয়াদিল্লি এসে পৌঁছেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও। এদিন মধ্যাহ্নভোজে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বলাই বাহুল্য, মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কোনও দেশ থেকে এত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এলেন ভারতে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী ২৮-২৯ জুন জাপানে ‘জি-২০ ওসাকা সামিট’-এ অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মাইক পম্পিও-র বৈঠকের একটি ছবি টুইট করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়েছেন, “আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একত্রে কাজ করে চলেছি। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মতামত বিনিময় করার জন্য মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। আগামী ‘জি-২০ ওসাকা সামিট’-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী।” কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার পর কূটনৈতিক সূত্র এদিন জানিয়েছে, এস-৪০০ ইস্যুতে ভারতকে নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারত। এদিন সাউথ ব্লকে জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও দেখা করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব। জাপানের ওসাকায় জি-২০ সামিটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের আগে পম্পিওর এই সফর যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ। আগামী ২৮-২৯ জুন জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা।
বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এদিনের বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি, সন্ত্রাসবাদ, এইচ -১ বি ভিসা, ইরান থেকে তেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকের শুরুতেই জানান, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে এবং এটি আসলে গভীর ও বিস্তৃত এবং গত কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে এদিনের বৈঠক থেকে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সন্ত্রাসবাদ দমনে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে যে শক্তিশালী সমর্থন আমরা পেয়েছি তার প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করেছি মার্কিন বিদেশ সচিবের কাছে। সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য প্রকৃতপক্ষে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতেই আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী। উভয় দেশের স্বার্থ ও দুই বিদেশমন্ত্রীর মতামতের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলা উভয়ই কূটনীতির কাজ। স্পষ্টতই যে কোনও সম্পর্কের মধ্যে নির্দিষ্ট কতগুলি বিষয় উপস্থিত হয় এবং এর বেশিরভাগ বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি।” দিল্লিতে প্রচার মাধ্যমকে সম্বোধনকালে আমরা একে অপরকে শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক অংশীদার হিসাবেই নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও। প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেছেন, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উভয় দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং মুক্ত এবং খোলা ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য দুই দেশের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি সহ মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব ইতিমধ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা শক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছি।” ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে বিষয়ে এস জয়শঙ্কর বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক কারও বিরুদ্ধে নয় এবং শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা এমন একটি ছবি দেখছি যেখানে স্বাধীন দেশগুলি বিশ্বব্যাপী উন্নতির জন্য একত্রে কাজ করবে।” আমেরিকার অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট ইস্যুর বিরোধিতা করে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই আমাদের অনেক সম্পর্ক রয়েছে, এদের অনেকগুলিই স্থায়ী। তাদের প্রত্যেকের এক-একটি পৃথক ইতিহাস আছে। জাতীয় স্বার্থের জন্য যা সবথেকে ভাল, আমরা সেটাই করব।” ‘ইউএস-ইরান উত্তেজনা’ নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা উপসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি, শক্তির নিরাপত্তা এর একটি অংশ, তবে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য ইত্যাদিও রয়েছে। আমরা ইরানের উপর একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছি, স্পষ্টতই যেখানে আমরা ভিত্তি করে আছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট ইরান সম্পর্কে আমেরিকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশই অবশ্যই এই বিষয়ে একে অপরের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছে।” অন্যদিকে, ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক যথেষ্ট শক্তিশালী এবং ভারত আমেকিকার স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স পার্টনার হওয়া সত্ত্বেও মস্কো যে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা-বন্ধু, সেটা অস্বীকার করা যায় না। একথাই স্পষ্ট করে এদিন রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের চুক্তি বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের সঙ্গে বহু দেশের সম্পর্ক রয়েছে। আর ভারত-রুশ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাতীয় স্বার্থের জন্য যা সবথেকে ভাল, আমরা সেটাই করব। জাতীয় স্বার্থরক্ষায় যা যা প্রয়োজন, তা করবে ভারত। ভারত হল আমেরিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী এবং দুদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।