বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত এদিন মনিপুরের চূড়ান্ত হিংসা ও বর্বোরোচিত ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাস্ট্র মন্ত্রককে দায়ী করে সমস্যা সমাধানে ব্যার্থতার জন্য তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।
গত আঠারো মাস ধরে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য মনিপুরে চূড়ান্ত অশান্তি ও জাতিদাঙ্গা চলছে। এখন অব্দি প্রায় ২৫০টি প্রাণ গেছে। প্রকৃত সমাধান এখনো বিশবাও জলে। মনিপুরের এই দাঙ্গার জেরে অশান্তি ছড়াচ্ছে বরাকেও। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
বিডিএফ অস্থায়ী কার্যালয়ে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে কোন রহস্যজনক কারণে মনিপুরে শান্তি ফেরানোর যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন যে তাঁরা মূলতঃ মনিপুরের বাঙালি বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদিও মনিপুরের বাঙালিরা কোনধরনের দাঙ্গা বা হিংসার সাথে জড়িত নন তবুও বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে তাঁরা চরম দুর্ভোগে ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন জিরিবাম অঞ্চলে যেসব বাঙালিরা রয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী। দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলতে থাকায় তাঁদের কৃষিকাজ বা অন্যান্য জীবিকা চূড়ান্তভাবে ব্যাহত হচ্ছে।এই জেলার বাংলাভাষীদের প্রায় আশি শতাংশ পেটের তাগিদে জমিজমা ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে গেছেন,দিনমজুরি বা এই জাতীয় কাজ করছেন। তাঁদের জমিজমা অবৈধ দখল হবার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া যারা এখনও ছোটখাটো ব্যাবসা চালাচ্ছেন নিত্যদিন তাঁদের উপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের চাঁদার জুলুম অব্যাহত। জয়দীপ বলেন তাঁরা বিডিএফ এর পক্ষ থেকে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে মনিপুরে বসবাসরত বাঙালিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন নিতান্ত নিরীহ এবং জীবিকার তাগিদে এই রাজ্যে বসবাসরত বাঙালিদের নিরাপত্তা তাঁদের গনতান্ত্রিক অধিকার, যার দায় অবশ্যই রাস্ট্রকে নিতে হবে।
জয়দীপ এদিন আরো বলেন যে মনিপুরের এই দীর্ঘ জাতিদাঙ্গার ফলে অশান্ত হচ্ছে বরাক উপত্যকা যা নিয়ে তাঁরা আশঙ্কিত। তিনি মূলত তিনটি ব্যাপারে এদিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রথমতঃ মনিপুরের জেরে এবার বরাকে গোষ্ঠীগত রেষারেষির প্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে,যা এই উপত্যকার জন্য অশনিসংকেত বলে এদিন মন্তব্য করেন তিনি। জয়দীপ বলেন বরাক উপত্যকা শান্তির দ্বীপ। বাঙালি ছাড়াও এখানে মেইতেই,হমার, কুকি, ডিমাসা, বিষ্ণুপ্রিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে মিলেমিশে একসাথে রয়েছেন। কিন্তু ইদানীং তাঁদের কাছে খবর আসছে যে মনিপুরের গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের প্রভাবে এখানেও গোষ্ঠীগত রেষারেষি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন এর প্রভাবে সাধারণ নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ এই খরবও এসেছে যে লক্ষীপুর ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় মনিপুরের একটি সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় কর্মকাণ্ড শুরু করেছে, সদস্য ভর্তি অভিযান অব্দি চলছে। জয়দীপ বলেন এভাবে যদি স্থানীয় যুবকদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়া হয় তবে তা শুধু গোষ্ঠীগত রেষারেষিতে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। সাধারণ মানুষরাও হুমকির মুখে পড়বেন। তৃতীয়তঃ পার্শ্ববর্তী রাজ্যে এই জাতিদাঙ্গার জেরে অনেকেই এসে এই উপত্যকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। যদি এরা আবার নিজ রাজ্যে ফিরে না যান তবে এতে বরাক উপত্যকার জনবিন্যাস পরিবর্তিত হবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এদিন তিনি বলেন যে সরকার উক্ত ব্যাপারে অবিলম্বে প্রতিরোধী ব্যাবস্থা নিক। তিনি বলেন উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়া অবশ্যই উচিত কিন্তু অশান্তি কমলে যাতে তারা নিজ রাজ্যে ফিরে যান তার নিশ্চয়তা দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
বরাক ডেমোক্রেটিক যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত এদিন মনিপুরের চূড়ান্ত হিংসা ও বর্বোরোচিত ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাস্ট্র মন্ত্রককে দায়ী করে সমস্যা সমাধানে ব্যার্থতার জন্য তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন যে জিরিবাম বা বরাকের সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলে কোন মৃতদেহ উদ্ধার হলে তা ময়নাতদন্তের জন্য বারবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হচ্ছে। তিনি বলেন বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি সম্প্রীতির যে বাতাবরণ রয়েছে এভাবে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের ঝামেলাকে বরাকে টেনে এনে তাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। এখানে সংঘাতের প্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত তবুও ভবিষ্যতে এভাবে মৃতদেহ উদ্ধার হলে ইম্ফলে ময়নাতদন্তের ব্যাপারটি সারার ব্যাবস্থা করুক মনিপুর সরকার। এছাড়া তিনি আরো বলেন যে তাঁদের কাছে খবর আছে লক্ষ্মীপুর ,শিবপুর ইত্যাদি অঞ্চলে কিছু অজ্ঞাতপরিচয় যুবক বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইছেন। কল্পার্ণব বলেন এগুলো সম্পুর্ন আইনবহির্ভূত কাজ এবং এসব বন্ধে অবিলম্বে ব্যাবস্থা নিতে হবে জেলা প্রশাসনকে।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।
Promotional | BARAK FESTIVAL 2025