শিলচর | ডিলিমিটশনের এই খসড়া চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিলে বরাক উপত্যকাকে এর আওতা থেকে বাদ রাখার প্রস্তাব দিক সরকার

2 - মিনিট |

নতুবা আসাম থেকে পৃথক হবে এই উপত্যকা – বিডিএফ

কেআরসি টাইমস বারাক ভ্যালি ব্যুরো

শিলচর : ডিলিমিটিশনের খসড়া নিয়ে পুরো বরাক জুড়ে প্রতিবাদ ধ্বনিত হলেও এখন অব্দি সরকারের তরফে কোন প্রতিক্রিয়া নেই । যদি এই খসড়াকে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবে বরাক উপত্যকাকে এর আওতা থেকে বাদ রাখতে হবে বলে দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এক প্রেস বার্তায় বিডিএফ মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে ডিলিমিটেশনের এই খসড়া প্রস্তাব কোন অবস্থায় মেনে নেবেনা বরাক বাসী। কারণ এই খসড়া কার্যকর হলে আগামী ৩০ বছরের জন্য রাজনৈতিক অধিকার হারাবে এই উপত্যকা। যেভাবে এই খসড়ায় বরাকের দুটি বিধানসভা আসন কর্তন করা হয়েছে,যেভাবে ডিলিমিটেশনের সমস্ত নিয়ম নীতিকে অগ্রাহ্য করে এক সমষ্ঠির জনপদকে যোগাযোগ হীন অন্য সমষ্ঠিতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বরাকের অস্তিত্বই সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠবে। তাই বরাকের ৪৫ লক্ষ মানুষ কোন অবস্থায় এই খসড়া মেনে নেবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে সরকার থেকে একদিকে বলা হচ্ছে এই খসড়া নির্বাচন আয়োগ তৈরি করেছে, এতে তাদের কোন হাত নেই। আবার অন্যদিকে সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রীই বলে বেড়াচ্ছেন যে এই খসড়ার মাধ্যমে রাজ্যের ‘খিলঞ্জিয়া ‘ দের অধিকার সুরক্ষিত হবে।

এতে আগামী ৩০ বছরের জন্য ১০২ টি বিধানসভা আসনে খিলঞ্জিয়াদের আধিপত্য বজায় থাকবে। প্রদীপ বাবু বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী যখন তাঁর মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছেন তখন রাজ্যের সব জাতি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব। তিনি খিলঞ্জিয়ার নন, রাজ্যের অসমিয়াভাষী, বাংলা ভাষী,বোড়ো,ডিমাসা,কোচ, মনিপুরী,চা জনজাতি সমস্ত জনগোষ্ঠীর তিনি মুখ্যমন্ত্রী। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য সম্পুর্ন অসাংবিধানিক।‌

এছাড়া রাজ্যে খিলঞ্জিয়া কারা এখনো সেই সংজ্ঞাই নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার। প্রদীপ বাবু বলেন যে আসাম একটি বহুভাষিক রাজ্য। তাই ডিলিমিটেশন করে একটি গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেবার তত্ত্ব কোন অবস্থায় মেনে নেবেনা বরাকের জনগন। তিনি বলেন যদি সরকার এই খসড়াকে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে বরাক উপত্যকাকে এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখতে হবে। অন্যথা এই উপত্যকা আসামের সাথে থাকবে না, পৃথকীকরণের রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হবে এখানকার জনগন। তিনি বলেন তেমন হলে এই ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিক সরকার ।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে এই খসড়া নিয়ে সমগ্র উপত্যকা জুড়ে জনগনের স্বতস্ফুর্ত ক্ষোভ ব্যক্ত হচ্ছে। পুলিশ,প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর হয়েও এই ক্ষোভকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন প্রশাসনের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে বরাকের জনগন বনধ পালন করেছেন, মিছিল করেছেন। জয়দীপ এদিন বলেন যে শাসকদলের যে সমস্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের জনগনের এই ক্ষোভ ও অনুভূতিকে সম্মান জানানো অবশ্য কর্তব্য।

তিনি বলেন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের এই ব্যাপারে এগিয়ে আসা,এই খসড়ার বিরুদ্ধে সরব হওয়া সময়ের দাবি। তিনি তাঁদের আহ্বান জানিয়ে বলেন যে তাঁরা এগিয়ে আসুন, বিডিএফ তথা আপামর বরাক বাসী তাঁদের সাদরে বরণ করে নেবেন এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পুর্ন সুরক্ষিত থাকবে। তবে জনগন তাদের উপর যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্পন করেছেন তা যেন তাঁরা কোন অবস্থায় বিস্মৃত না হন।

বিডিএফ মিডিয়া সেলের আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এদিন বলেন যে ২০০২ ডিলিমিটেশন আইন অনুযায়ী ডিলিমিটেশন কমিশনের মাধ্যমে সমীক্ষা ও খসড়া তৈরির কাজ না করিয়ে এই দায়িত্ব নির্বাচন আয়োগের হাতে তুলে দেওয়া আইন সংগত নয় কারণ নির্বাচন আয়োগের কাজ এটা নয় এবং এরজন্য প্রয়োজনীয় কোন পরিকাঠামো তাঁদের নেই।

এই সমীক্ষা এবং পরিকল্পনা সম্পুর্ন ভাবে সরকারের মস্তিষ্ক প্রসূত এবং নির্বাচন আয়োগ তাঁতে শুধু সম্মতিসূচক সাক্ষর দিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাই এই খসড়া বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হলে বরাক উপত্যকা আসাম থেকে পৃথক হতে বাধ্য হবে বলে এদিন মন্তব্য করেন তিনি।

বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *