অবরোধকারী ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০জন
শিলচর: শিলচর হাইলাকান্দি রোড মদনমোহন পার্ক এলাকার বাসিন্দা নিখোঁজ যুবতী পিঙ্কি রায় (১৮)-এর দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হলো ধোয়ারবন্দ থেকে। অনুমান করা হচ্ছে তাকে হত্যার পর কেউ যাতে চিনতে না পারে এর জন্য মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এদিকে ভয়ংকর এই ঘটনাকে ঘিরে রাতে শহরের রাঙ্গিরখাড়ি এলাকায় ঘটে যায় ধুন্দুমার কান্ড। রাত আটটা নাগাদ সেখানে মৃতদেহ নিয়ে পথ অবরোধ শুরু হয়।
এতে দুদিকে আটকা পড়ে যায় প্রচুর যানবাহন। এসবের মাঝে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পুলিশ মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় পাথর বর্ষণ। বাধ্য হয়ে পুলিশকে লাঠিচার্জ সহ শূন্যে গুলি চালাতে হয়। সব মিলিয়ে অবরোধকারী ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০জন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিরাজ করছে তীব্র উত্তেজনা।
পিঙ্কি কাজ করতেন শহরের প্রেমতলা এলাকায় “বুনকর” নামে এক কাপড়ের দোকানে। তার বাবা নৃপেন্দ্র রায় ও মা উমা রায় জানিয়েছেন, গত শনিবার রাত থেকে নাপাত্তা ছিলেন পিংকি। এরপর মঙ্গলবার ধোয়ারবন্দ পোস্ট অফিসের কাছে এক নির্মীয়মান ত্রিতল ভবন থেকে উদ্ধার হয় তার মৃতদেহ। জানা গেছে, ওই ভবনের ত্রিতলে পড়েছিল পিঙ্কির দগ্ধ মৃতদেহ। পুড়ে গিয়ে শরীরের এমন অবস্থা হয় যে তাকে ঠিক চেনা যাচ্ছিল না।
এর মধ্যে দেখা যায় তার জিহ্বা রয়েছে বেরিয়ে আসা অবস্থায়। এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে প্রথমত শ্বাসরূদ্ধ করে তাকে হত্যার পর কেউ যাতে চিনতে না পারে এর জন্য পুড়িয়ে দেওয়া হয় মৃতদেহ। এদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর, তা ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্তের পর রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ মৃতদেহ সমঝে দেওয়া হয় পরিবারের লোকেদের হাতে। এরপর রাত আটটা নাগাদ মৃতদেহ নিয়ে এসে রাঙ্গিরখাড়ি মোড়ে শুরু হয় পথ অবরোধ।
সময় যত গড়াতে থাকে ততই বাড়তে থাকে অবরোধকারীদের সংখ্যা। এতে দেখা যায় বিভিন্ন গেরুয়া সংগঠনের অনেককেও। অবরোধকারীরা ঘটনায় যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হন। এই দাবি তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে একাংশ অবরোধকারীকে দেখা যায় উশৃংখল হয়ে উঠতে।
পুলিশ বারবার অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও অবরোধকারীরা তা শুনতে রাজি ছিলেন না। এই অবস্থায় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পুলিশ জোর করে মৃতদেহ উঠিয়ে শ্মশানে নিয়ে যায়। পুলিশ মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যেতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একাংশ অবরোধকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন।
এতে আহত হন কয়েকজন পুলিশ কর্মী ও সিআরপিএফ জওয়ান। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি শূন্যে গুলিও চালায়। এতে দৌড়ে পালিয়ে যান অবরোধকারীরা। যদিও পালানোর মধ্যে পুলিশের লাঠির গায়ে আহত হন বেশ কয়েকজন। ঘটনার পর পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলেও জানা গেছে । বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি রয়েছে নিয়ন্ত্রণে।
এদিকে পিঙ্কির নাপাত্তা হওয়া এবং তার মৃত্যু নিয়ে বাবা নৃপেন্দ্র রায় ও মা উমা রায় জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের মতো শনিবারও পিংকি যথারীতি কাজে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে নটা নাগাদ ফোন করে বাড়িতে জানান, দোকান বন্ধ করে শ্মশান রোডে মালিকের বাড়িতে চাবি সমঝে দিতে যাচ্ছেন। চাবি সমঝে দিয়ে সেখান থেকে একটি কাজে যাবেন লিংকরোডে। বাড়ি ফিরবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। মেয়ে একথা জানানোর পর তারা বসে ছিলেন স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু অনেকক্ষণ মেয়ে না ফেরায় তাকে ফোন করলে প্রথম কয়েকবার রিং হয়, তবে মেয়ে ফোন রিসিভ করেনি। এরপর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তার মোবাইল “সুইচ অফ” হয়ে যায়।
ধোয়ারবন্দের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, নির্মীয়মান ভবনটির ত্রিতলে পড়েছিল পিঙ্কির মৃতদেহ। গত কয়েকদিন কাজে আসেননি মিস্ত্রিরা। এদিন তারা কাজে আসতেই দেখতে পান এই দৃশ্য। এরপর ব্যাপারটা জানানো হয় পুলিশকে। এদিকে পিংকির বাবা নৃপেন্দ্র রায় ও মা উমা রায়রা জানান, পুলিশ মৃতদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তারা গিয়ে সনাক্ত করেন। যদিও দগ্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন তাকে ঠিক চেনা যাচ্ছিল না, তার পরনের কাপড় দেখে তারা নিশ্চিত হন জানা গেছে পিংকির দগ্ধ মৃতদেহে, পচন ধরে গিয়েছিল।
এ থেকে অনুমান করা হচ্ছে খুব সম্ভবত শনিবার রাতেই তাকে হত্যা করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে আগুন দিয়ে না এসিড দিলে তার শরীর পুড়ানো হয়েছে, এ নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো জানিয়েছেন, ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর তদন্ত শুরু হয়েছে। যে বা যারাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শীঘ্র সনাক্ত করে পাকড়াও করা সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী এলাকাবাসীকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার অনুরোধ জানিয়ে ঘটনার পেছনে যে বা যারা জড়িত তাদের শীঘ্র পাকড়াও করার জন্য কথা বলেছেন পুলিশ সুপারের সঙ্গে।
দীপায়ন সঙ্গে এ-ও জানান, পিংকির পরিবারকে যথা সম্ভব সাহায্যের জন্য তিনি সব ধরনের চেষ্টা চালাবেন। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন জেলা কংলগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পালও। সঙ্গে তিনি ঘটনাকে যাতে সাম্প্রদায়িক রূপ না দেওয়া হয় এই আহ্বানও জানিয়েছেন।