সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে
বাংলাদেশ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে এই সংসদ বিলুপ্ত করা হলো।
সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করে দেশ ত্যাগ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে যে, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনও পরামর্শদান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে কী পরামর্শ দান করেছেন, কোনও আদালত সেই সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তার সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের কোনও সুযোগ নেই।
তাই সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা, জনস্বার্থ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন যাতে বিপদের সম্মুখীন না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের অধীন তার বিচক্ষণতা (ডিসক্রিশনারি পাওয়ার) /সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।
রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর এর অধীন জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন সংসদ সচিবালয়ের কর্মপরিধিভুক্ত। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন, সেহেতু রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর রুল ৩৩ (সংলাগ-৩) এর আওতায় জনস্বার্থে, রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ৩-এ বর্ণিত অবস্থাধীনে সমীচীন বিবেচনায় সেহেতু রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর এর ব্যতিক্রম সদয় অনুমোদনপূর্বক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন।
এর আগে বেলা তিনটার মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে দুটো জিনিস দেখতে হবে। একটি হলো সংবিধান, অন্যটি হলো গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান কোনো আইন না। সংবিধানের কোথাও গণঅভ্যুত্থান নেই। সংবিধানে এরকম কিছু নেই।
তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়লাভ করে, তাদের ইচ্ছা মতোই সবকিছু হবে। যে ইচ্ছা তারা করবে, সেটা আইনে যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে বলা যাবে না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে করলাম। গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ীরা করতে পারেন, সেটা পরে আইনে রেডিফাই করতে হবে। সেটি সংবিধান অনুযায়ী ফ্রম করতে হবে।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে ১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তেমনিভাবেই এখন সারা বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের প্রতিনিধির মাধ্যমে ১৯৯১ সালের রূপরেখা অনুযায়ী, ওই কনসেসাসের ভিত্তিতে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হতে পারে।