কিন্নর-সন্ন্যাসী দলের হোমযজ্ঞ, নৃত্য
প্রখর রোদ, তাপমাত্রা ছত্রিশ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। মানুষের ঢলে থইথই গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়। ভক্তিরসে আপ্লুত পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত। শনিবার (২২ জুন) মধ্যরাত ১-টা ৪০ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে মা কামাখ্যার প্রবৃত্তি হয়েছে। সে থেকে শুরু হয়ে গেছে কামাখ্যায় অম্বুবাচির যোগ। অম্বুবাচিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ ভক্ত, পর্যটক, সাধক-তান্ত্রিকের দলের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে নীলাচল। যে দিকে চোখ যায় সে দিকে দৃশ্যমান হচ্ছে সশরীরে নানা দেব-দেবীর পদচারণা। এরই মধ্যে বিচরণ করছেন সন্ন্যাসিনী-কিন্নরের দলও । তাঁদের সংখ্যাও এবার নেহাত কম নয়। তাদের কেউ ভক্তদের মাথা স্পর্শ করে, আবার কেউ কেউ নানা ভঙ্গিমায় নৃত্যের তালে তালে হাতের ত্রিশূল উঁচু করে আশিস দিচ্ছেন। আবার দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের নিরালায় ধ্যানাসনে মগ্ন বহু তন্ত্রসাধক।
গত কয়েকদিন ধরে কামাখ্য মন্দির চত্বরের আনাচে-কানাচে যোগাসনে বসে ধ্যান করছেন অসংখ্য তন্ত্রসাধক। তাঁদের কেউ তাবু খাটিয়ে বিশ্বকল্যাণে হোমযজ্ঞে ব্যস্ত। আবার কেউ যোগমুদ্রায়, কেউ শীর্ষাসন বা বৃক্ষাসন, তো কেউ পদ্মাসনে বসে ঘণ্টার পর তাঁদের আরাধ্যের সাধনায় ব্রত। অম্বুবাচি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শনিবার রাত থেকে নাগা সন্ন্যাসীরা হোমযজ্ঞ করছেন বিশ্বকল্যাণে।
অম্বুবাচিতে পুণ্যার্জন করতে এসেছেন সুদূর ইউরোপ, মস্কো, বাংলাদেশ, নেপাল থেকে বহু ভক্ত। তাঁদের কেউ পরেছেন সাদা কুর্তা-পাজামা, আবার কেউ গৈরিক বসন। এসেছেন হিমালয় ও সংলগ্ন এলাকার বহু সন্ন্যাসীও। মন্দির চত্বরে এসে ধ্যানাসনে বসেছেন ১৩০ বছর বয়সি ড. বাবাসন্ন্যাসী। মোদ্দা কথায়, দেশ-বিদেশ থেকে আগত সাধুসন্তরা বিধি অনুযায়ী ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন থাকবেন এই কয়দিন। সময় সময় তাঁরা মন্দির প্রদক্ষিণও করছেন।
প্রতিবারের মতো এবারও পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশ কয়েকটি বহুরূপী শিল্পীর দল কামাখ্যাধামে অম্বুবাচি মেলায় এসেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ঠাকুর-দেবতার সাজে সজ্জিত হয়ে নাচে-গানে মানুষের মন জয় করেছেন। তাঁরা পালা করে পাহাড়ের নানা জায়গায় বাউল গানের উদাসী সুরে অসংখ্য দর্শনার্থীর মন জয় করেছেন।
এদিকে অম্বুবাচি মেলা উপলক্ষ্যে কামাখ্যা দেবালয় চত্বরে বসেছে নানা সামগ্রীর বিশাল এক বাজার। মণিমুক্তা, নানা ধাতুর আংটি, মাদুলি, চুড়ি, মৃগনাভি, নানা রঙের হার মালা, নানা মুখি রুদ্রাক্ষ, পাথর-পিতল-কাঁসা-তামার বাসন ইত্যাদি কী নেই মেলার বাজারে। এখানে নানা সামগ্রীর পসার সাজিয়ে বসেছেন দেশের ভিন্ন প্রান্তের মানুষ। সূদূর মহারাষ্ট্র থেকে ৫০০-এর বেশি যুবক-যুবতীর এক দল পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছে তাদের ব্যবসা। এই দলের সদস্য অঞ্জুবতী, লিলি, প্রিয়াঙ্কারা বলেছেন, মেলায় এখন পর্যন্ত তাঁদের ব্যবসা ভালোই চলছে। মায়ের আশীর্বাদ তাঁদের ওপর বর্ষিত হচ্ছে। লাভের মুখ দেখবেন, আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছেন অঞ্জুবতী। অম্বুবাচি মেলায় এবার বহু সন্ন্যাসী-কিন্নরকে দেখা গেছে। তাঁরা নানা ভঙ্গিমায় নৃত্য করে পুণ্যার্থীদের আকর্ষণ করে চলেছেন। জনৈক সন্ন্যাসী-কিন্নরের কাছে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাঁরা এসেছেন প্রায় সাত হাজার জন। এখানে খুব স্বাচ্ছ্বন্দ্যেই অবস্থান করছেন তাঁরা। এসেছেন শনি থেকে গতকাল রবিবার। থাকবেন মায়ের নিবৃত্তি, ২৬ তারিখ পর্যন্ত। তাঁরাও বিধি মেনে মা কামাখ্যার পুজোর্চনা করছেন। বাইরে তাবু খাটিয়ে শিবিরে তাঁদের যজ্ঞস্থলে বহু পুণ্যার্থী আসছেন আশীর্বাদ নিতে। গতকাল তাঁরা কামাখ্যা দেবালয় চত্বরে একটি শোভাযাত্রাও বের করেছিলেন, জানান নিলীমা নামের সন্ন্যাসিনী।