সুন্দরবনের প্রাণী জগতের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

< 1 - মিনিট |

বিশ্বে বাঘের যে কয়টি বৃহৎ আবাসস্থল এখনও টিকে আছে, তার মধ্যে সুন্দরবন একটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনও সমুদ্রসীমার উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সেটিও ধ্বংসের সম্মুখীন।

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

বিশ্বে বাঘের যে কয়টি বৃহৎ আবাসস্থল এখনও টিকে আছে, তার মধ্যে সুন্দরবন একটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনও সমুদ্রসীমার উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সেটিও ধ্বংসের সম্মুখীন। নতুন এক গবেষণায় এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।এ খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

সোমবার রাষ্ট্রসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক আবাসস্থল ঝুঁকিতে পড়ায় বিশ্বের স্থলভাগের ৫ লাখ প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব বিপদের মুখে।

এদের মধ্যে বাঘ অন্যতম। বাংলাদেশ ও ভারতে ৪ হাজার বর্গমাইলের সুন্দরবনে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। বনের সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্রে টিকে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ কয়েকশ প্রজাতির প্রাণী। কিন্তু বনের ৭০ শতাংশ ভূমিই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক ফুট উঁচুতে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে অনায়াসেই প্লাবিত হবে এই বনের সিংহভাগ এলাকা। সায়েন্স অব দ্য টোট্যাল এনভারণমেন্ট জার্নালে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের গবেষকরা এই তথ্য দিয়েছেন।এতে বলা হয়, বিশ্বে উষ্ণায়নের ফলে যে পরিবর্তন আসবে পৃথিবীতে তা সুন্দরবনে থাকা কয়েকশ বাঘকে নির্মূল করতে যথেষ্ট।১০ গবেষকের করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৭০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের উপযোগী কোনও  বাসস্থল থাকবে না।

২০১০ সালে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর ন্যাচার-এর নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা আগামি কয়েক দশকে ৯৬ শতাংশ হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণিদের অর্ধেক আক্রান্ত হয়েছে।

সুন্দরবন নিয়ে হওয়া নতুন গবেষণার প্রধান লেখক শরিফ এ. মুকুল। মুকুল ও তার সহকর্মীরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বাইরেও বাঘের ওপর অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও অন্যান্য আরও বিষয়ও বাঘের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে খুঁজে পেয়েছেন তারা। বাঘের সংখ্যা ১ লাখ থেকে কমে ৪ হাজারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক ড. মুকুল বলেন, অনেক কিছু ঘটতে পারে।সাইক্লোন বা ওই এলাকায় কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বা খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও করুণ হতে পারে।

গত অক্টোবরে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিজ্ঞান প্যানেল একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে বলা হয়, যদি গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বর্তমান হারে অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ বায়ুমন্ডল প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ হয়ে উঠবে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধি খাদ্যশৃঙ্খল, কোরাল রিফ ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও ঘনবসতির দেশগুলোতে এর প্রভাব থাকবে আরও বেশি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news