স্বাস্থ্যের অবনতি, অনশন ভঙ্গ দেশদ্রোহী মামলায় গ্রেফতার অখিল গগৈয়ের মা প্ৰিয়দার

2 - মিনিট |

‘প্ররোচনামূলক’ উদাত্ত ভাষণের পরই মরান থানায় অখিলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০ (বি)/১২১/১২৪ (এ)/১০৯/১৫৩/১৫২ (এ)/৩৪ ধারা বলবৎ করে ১৮৮/১৭ নম্বরে এক মামলা রুজু করা হয়েছিল। এই মামলার বলে পরের দিন গোলাঘাট সার্কিট হাউস সংলগ্ন এক বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে ডিব্রুগড় জেলার মরান থানার পুলিশ।

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তিনদিনের অনশন ভঙ্গ করলেন মাওবাদী অভিযোগে দেশদ্রোহী মামলায় গ্রেফতার অখিল গগৈয়ের ৮৬ বছরের মা প্রিয়দা গগৈ। গত তিনদিন ধরে ছেলের মুক্তির দাবিতে অনশনকারী মা প্ৰিয়দাকে রবিবার স্থানীয় বিভিন্ন নাগরিক এবং সংগঠনের কর্মকর্তারা অনশন ভঙ্গ করিয়েছেন। 

ডায়াবাটিস এবং উচ্চরক্তচাপজনিত রোগে আক্ৰান্ত কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের মা প্রিয়দা ছেলের মুক্তির দাবিতে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে মরিয়নির সেলেংহাট এলাকার লুসুরাখনে তাঁদের নিজস্ব বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকলে চিকিৎসরা তাঁকে অনশন ভঙ্গ করে চিকিৎসা করাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে তিনি রাজি হননি। যার ফলে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্ৰুত অবনতি ঘটতে থাকে। 

অনেক অনুনয়ের পর আজ বেলা ২-টায় স্থানীয় জনতা, উজান অসম মুসলিম কল্যাণ পরিষদ, অসমপ্ৰেমী যুব-ছাত্ৰ পরিষদ, সুদীপ্ত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্ৰতিনিধিদের হাতে দুধ ও ফলাদি খেয়ে রোগাক্ৰান্ত প্ৰিয়দা গগৈ তাঁর আমরণ অনশন ভঙ্গ করেন। অনশন ভঙ্গের মহূর্তে প্ৰিয়দা গগৈ তাঁর ছেলে অখিল গগৈ এবং তাঁর সঙ্গে গ্ৰেফতার কৃষক মুক্তি ও ছাত্ৰ মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির অন্যান্য কৰ্মীদের বিনা শৰ্তে মুক্ত করতে দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত মাওবাদী অভিযোগে দেশদ্রোহী মামলায় গত ১৬ ডিসেম্বর অখিল গগৈকে এনআইএ গ্ৰেফতার করেছে। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর অখিলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীর মামলা রুজু করেছিল এনআইএ। ১৭ ডিসেম্বর গুয়াহাটিতে অবস্থিত এনআইএ আদালতে অখিলকে হাজির করিয়ে রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল। আদালত ১০ দিনের জন্য এনআইএ জিম্মায় পাঠায় কৃষকনেতা গগৈকে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির উপদেষ্টা তথা বামপন্থী অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর ‘দেশদ্রোহিতা’র মামলা চালানোর রায় দিয়েছিল ডিব্ৰুগড় জেলা ও দায়রা আদালত। ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির দেশদ্ৰোহী সংক্রান্ত ধারা ১২৪(এ)-এর অধীনে চলানোর জন্য বলেছিলেন জেলা ও দায়রা জজ। 

এর আগে দেশদ্রোহিতার এক মামলায় গত ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গোলাঘাট থেকে অখিল গগৈকে গ্রেফতার করেছিল ডিব্রুগড় পুলিশ। এর আগের দিন ১২ সেপ্টেম্বর ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত মরানের বামুনবাড়িতে এক সমাবেশে বাংলাদেশি (হিন্দু বাংলাদেশি)-দের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের ‘ষড়যন্ত্র’ রুখতে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের অসম-বিরোধী চক্রান্ত রুখতে প্রয়োজনে হাতে হাতে একে ৪৭ জাতীয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকতে রাজ্যের জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বলে অখিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।  সেদিনের ‘প্ররোচনামূলক’ উদাত্ত ভাষণের পরই মরান থানায় অখিলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০ (বি)/১২১/১২৪ (এ)/১০৯/১৫৩/১৫২ (এ)/৩৪ ধারা বলবৎ করে ১৮৮/১৭ নম্বরে এক মামলা রুজু করা হয়েছিল। এই মামলার বলে পরের দিন গোলাঘাট সার্কিট হাউস সংলগ্ন এক বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে ডিব্রুগড় জেলার মরান থানার পুলিশ। ডিব্রুগড়ের তদানীন্তন পুলিশ সুপার গৌতম বরা সেদিন বলেছিলেন, বামুনবাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যে ধরনের প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়ে জনতাকে উসকে দিয়েছেন, যা পরিচ্ছন্ন দেশদ্রোহিতা। পরবর্তীতে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে তাকে খালাস করেছিল আদালত। 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news