গত দশ বছরে জুলাই মাসের একটিও দিন তিলোত্তমার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছোঁয়নি। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে একমাত্র এর কাছাকাছি পৌঁছেছিল তাপমাত্রা। উষ্ণতা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও সূদূর অতীতে এর থেকেও বেশি গরম ভোগ করেছে কল্লোলিনী। ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই শহরের রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আষাঢ়ের শেষ। শ্রাবণ মাস প্রায় ঢুকব ঢুকব। তা সত্ত্বেও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ছিঁটেফোটা নেই। এরই মধ্যে সোমবার ছিল জুলাই মাসে শহর কলকাতার উষ্ণতম দিন। গত দশ বছরে জুলাই মাসে এমন গরম ভোগ করেনি শহরবাসী। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে যা ৫ ডিগ্রি বেশি।
গত দশ বছরে জুলাই মাসের একটিও দিন তিলোত্তমার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছোঁয়নি। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে একমাত্র এর কাছাকাছি পৌঁছেছিল তাপমাত্রা। উষ্ণতা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও সূদূর অতীতে এর থেকেও বেশি গরম ভোগ করেছে কল্লোলিনী। ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই শহরের রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু তাপমাত্রাই নয়, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে গরমের সঙ্গে প্যাচপ্যাচে ঘামও জর্জরিত করেছে শহরবাসীকে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর্দ্রতা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৪.৫তে। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বাতাসের দিকের ওপর নির্ভর করে অস্বস্তিসূচক নিশ্চিত করা হয়। ৫৫-এর ওপরে এই সূচক চলে গেলে তা মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তবে এই জুলাইয়েও বৃষ্টির তেমন দেখা না পাওয়ায় আবহাওয়া দফতর বেশ চিন্তিত। আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের মতে স্বল্প বা মাঝারি পরিমাণের বৃষ্টি এই বাড়তে থাকা তাপমাত্রাকে খুব একটা কমাতে পারবে না। এই বিষয়ে কলকাতার রিজিওনাল মেটেরোলজিক্যাল সেন্টারের ডিরেক্টর জি কে দাসের বক্তব্য, ‘তাপমাত্রার হালকা হেরফের হতে পারে। কারণ স্বল্প বা মাঝারি মাপের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেই পরিমাণ বৃষ্টিতে তাপমাত্রার বড়সড় কোনও পার্থক্য ঘটবে বলে মনে হয় না।‘ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। জুলাই মাসের অবিরত বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা সচরাচর ৩৭ ডিগ্রি পার করতে পারে না। সোমবারের ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল গত কয়েক বছরে জুলাই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।‘
বর্তমানে উপকূলবর্তী অঞ্চলে আর্দ্রতার কারণে মেঘ জমছে। যদিও ভারী বৃষ্টি ঘটাতে তা সক্ষম নয়। আবহাওয়া দফতর বলছে, আগামী বেশ কয়েকটি দিন শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে কয়েক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।গত ২১ জুন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু শহরে ঢুকেছে, প্রায় ১৩ দিন দেরিতে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর দেরিতে আগমনের জন্য জুনের শেষে শহরে ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। জুলাই আগস্ট মাসের মতো ঘোর বর্ষার দুটো মাস এই অভাব পূরণ করে দেবে এমন সম্ভাবনাও কম। কারণ বিনা ভারি বৃষ্টিতেই অর্ধেক জুলাই মাস পার হয়ে গিয়েছে। শহর কলকাতা এখনও শুকনো খটখটে। ‘এখন যদি কোনও কারণে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তাহলেই শহরে ভিজতে পারে’, বলছেন আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিক।
জুন মাসে মূলত এমনটা হয়েই থাকে। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে সেই অভাব পূরণ হয়ে যায়। ‘কিন্তু এ-বছর জুলাইয়েও তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় শহরের অনাবৃষ্টির হার বেড়েছে ৭২ শতাংশ’, জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এবছর জুনে শহরে রেকর্ড ৯১.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতবছর জুনে এই পরিমাণ ছিল ৪১৯ মিলিমিটার। চলতি বছরের জুলাইয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৯.৯ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩০৭.৯ মিলিমিটার।