দিল্লির ৪০০ পড়ুয়াকে বেসরকারি থেকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে নজির গড়লেন অতিশি

2 - মিনিট |

৩৮ বছরের শিক্ষাবিদের এই কাজে পৃষ্ঠপোষক দিল্লি সরকার

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

বর্তমান যুগে নামী প্রাইভেট স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করা বাবা-মাদের কাছে রীতিমতো স্ট্যাটাস সিম্বল। খরচের কথা না ভেবেই অভিভাবকরা সন্তানকে সুপ্রিতিষ্ঠত করার লক্ষে প্রাইভেট স্কুলে ছুটছেন। আর এই স্কুলগুলোও শিশুদের শিক্ষার নামে ইঁদুর দৌড়ে সামিল করে ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন খাতে টাকার হরিলুটের ব্যবস্থা করেছে নিজেদের মুনাফার জন্য। সরকার পোষিত মিড ডে মিল স্কুলে নয়, নিজের সন্তান কত বেশি খরচ সাপেক্ষ বেসরকারি স্কুলে পড়ছে, তার ওপরই নাকি সামাজিক স্ট্যাটাস নির্ভর করছে এখনকার দিনে! কিন্তু এই সামাজিক অবস্থার মধ্যেই যখন শুনতে পাই এই দেশেই এমন একজন রয়েছেন, যাঁর উদ্যোগে বেসরকারি স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে ৪০০ পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে সরকারি বিদ্যালয়ে, তখন বিস্ময়ের সীমা থাকে না। বাস্তবিকই এরকমই ঘটনা ঘটিয়ে গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়েছেন আতিশি মার্লেনা। আর দেশের রাজধানীর ৩৮ বছরের এই রাজনৈতিক কর্মী তথা শিক্ষাবিদের এই অবিশ্বাস্য নজির সৃষ্টির ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় রয়েছে দিল্লি সরকার।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ভিজয় সিং তাঁর কন্যার নাম রেখেছিলেন অতিশি মার্লেনা সিং। তিনি মেয়ের ‘মিডল নেম’ মার্লেন রেখেছিলেন কার্ল মার্কস ও লেনিনের নামানুসারে। পরবর্তীকালে মার্লেনাই হয়ে দাঁড়ায় অতিশির পদবি। ২০০১ সালে দিল্লি ইউনিভার্সিটির টপার হিসাবে সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হন অতিশি। এরপর ২০০৩ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার’স। এরপর ২০০৫ সালে অক্সফোর্ডের ম্যাগডালেন কলেজে যোগদান করেন ‘রোডস স্কলার হিসাবে’।

অতিশি মার্লেনার পেশাদারী জীবন শুরু হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের ঋষি ভ্যালি স্কুলের ইতিহাস ও ইংরাজির শিক্ষক হিসাবে। সেখানে একবছর কাটানোর পর ২০০৬ সালে ভোপালের একিট ছোট্ট গ্রামে গিয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন অর্গানিক ফার্মিং ও শিক্ষা ব্যবস্থার অধুনিকীকরণে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আম আদমি পার্টির বেশ কিছু নেতার সঙ্গে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবরই ছিল। ২০১১ দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলেনর পাশে সরাসরি না দাঁড়ালেও সমর্থক ছিলেন অতিশি। এরপর ২০১৩ জানুয়ারি আপ-এর ‘পলিসি ফর্মেশন কমিটি’-র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি দলের রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির ‘অ্যাপেক্স এক্সিকিউটিভ বডি’-র সদস্য হন।  

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি দিল্লির ক্ষমতায় এসে অতিশি মার্লেনাকে করে শিক্ষা উপদেষ্টা। পাশাপাশি জুলাই ২০১৫ থেকে ১৭ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত অতিশি দিল্লির তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী মনিশ শিশোদিয়ার পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেছেন। প্রধানত শিক্ষা দফতরের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি। আর এই কাজটি তিনি করেছেন ১ টাকা মাসিক বেতনে। এই দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দিল্লির সরকারি স্কুলের ভোল পাল্টে দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শেই দিল্লি সরকার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে করে ২৪%। বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয় স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে। চালু হয় মিশন বুনিয়াদ, যোগাযোগ বাড়ে স্কুল- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে। ৫০০০০ শিক্ষক শিক্ষিকা মিলে তৈরী করেন ‘হ্যাপিনেস কারিকুলাম’। রেজাল্টে সরকারি স্কুল পেছনে ফেলে প্রাইভেট স্কুলগুলিকে। দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন মনিশ শিশোদিয়া বলেছিলেন, দিল্লির শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে অতিসি হলেন আসল স্থপতি।   

এভাবেই শিক্ষার সরকারিকরণ হোক। উন্নত হোক স্কুলের পরিকাঠামো। প্রকৃত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় না অর্থের। দিল্লির পথ অনুসরণ করুক বাকি রাজ্যগুলিও। সেই সঙ্গে শিক্ষার মান হোক উন্নত থেকে উন্নততর।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news