মন্ত্রী বলেন, ‘আগে উত্তরপূর্বের পরিচয় ছিল সন্ত্ৰাসবাদ, সীমা বিবাদে জর্জরিত এক অঞ্চল। আজ সেই পরিচয় বিস্মৃত হয়েছেন দেশের মানুষ। উত্তরপূর্ব এখন বিকাশিত অঞ্চল বলে পরিচিত’
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বলবৎ বিশেষ ক্ষমতা বহনকারী ৩৭১ এবং এর সব উপধারা যথারীতি বহাল থাকবে। এই ধারাকে বিজেপি সরকার সম্মান করে। তাই এই অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রশ্নই ওঠে না। দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘মহাভারতের যুগে বভ্রুবাহনই হোন বা ঘোটৎকচ, দুজনেই ছিলেন উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের বাসিন্দা। অৰ্জুনের বিয়েও হয়েছিল মণিপুরে। শ্ৰীকৃষ্ণের নাতিও বিয়ে করেছিলেন উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের মেয়েকে। তাই এই অঞ্চলকে বিকশিত করা মোদী নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম লক্ষ্য।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আগে উত্তরপূর্বের পরিচয় ছিল সন্ত্ৰাসবাদ, সীমা বিবাদে জর্জরিত এক অঞ্চল। আজ সেই পরিচয় বিস্মৃত হয়েছেন দেশের মানুষ। উত্তরপূর্ব এখন বিকাশিত অঞ্চল বলে পরিচিত।’ বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির অসম প্রশাসনিক পদাধিকারী মহাবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে উত্তরপূর্ব পরিষদ (নর্থ-ইস্ট কাউন্সিল বা এনইসি)-এর ৬৮-তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে (প্ল্যানারি সেশন) ভাষণ দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শাহ।
অমিত শাহ ঘোষণা করেন, এনইসি বরাদ্দকৃত মোট তহবিলের ৩০ শতাংশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অগ্রাধিকার এলাকা এবং সমাজের পশ্চাদপদ শ্রেণিভুক্ত মানুষের উন্নয়নে খরচ করা হবে। ভারতরত্ন ভূপেন হাজরিকার প্রসঙ্গ টেনে ২০২২ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের রূপরেখা নির্ণয় করতে আঞ্চলিক পরিকল্পনা গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে রোডম্যাপ প্রস্তুত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভাষণ প্রদান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে জম্মু-কাশ্মীরের ওপর বলবৎ ৩৭০ ধারা বাতিল করাষ় উদ্ভূত শঙ্কার প্ৰসঙ্গ টেনে শাহ বলেন, ‘৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। এই ধারা বাতিল করে দেওয়ায় জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন তেজি ঘোড়ার মতো ছুটবে,’ বলেন শাহ। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৭১-এ (নাগাল্যান্ড), ৩৭১-বি (অসম), ৩৭১-সি (মণিপুর), ৩৭১-এফ (সিকিম), ৩৭১-জি (মিজোরাম), ৩৭১-এইচ (অরুণাচল প্ৰদেশ) ধারাগুলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে জম্মু ও কাশ্মীরের মতোই বিশেষ অধিকার দিয়ে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সুরক্ষার জন্য এই অঞ্চল অতি গুরুত্বপূৰ্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চল একটি মিনি ভারতও বটে। সত্যিকারের অর্থে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের ইঞ্জিন, ভাষণে বলেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ছাড়া ভারতের বিকাশ কখনও সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৭০ বছরের চেয়ে গত পাঁচ বছরে উত্তরপূর্বের বেশি উন্নয়ন হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে সমগ্ৰ উত্তরপূর্বের সব রাজ্যকে রেলের এক সূত্রে বেঁধে দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অমিত শাহ আজ তাঁর ভাষণ শুরু করেছেন ভারতরত্ন প্ৰয়াত ভূপেন হাজরিকাকে স্মরণ করে। প্রয়াত ভূপেন হাজরিকার আজ জন্মদিন। এমন একটি শুভ দিনে এনইসি-র অধিবেশন চলছে বলে ভূপেন হাজরিকাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতির অ্যাম্ব্যাসাডর আখ্যা দিয়ে তিনি অমিত শাহ বলেন, ‘নরেন্দ্ৰ মোদী তাঁকে প্ৰকৃত সম্মান দিয়েছেন।’
অসমের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, ডোনারমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালদের সঙ্গে নিয়ে নির্ধারিত সময়ে প্রদীপ প্রজ্বলন করে অধিবেশনের সূচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অধিবেশনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আট রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সনোয়াল-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পুলিশ-প্ৰধান, অসমের সাংসদরা অংশগ্ৰহণ করেছেন। প্রসঙ্গত, পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তরপূর্ব পরিষদের চেয়ারম্যান।
ডেভেলপমেন্ট অব নর্থইস্ট রিজিওন (ডোনার) দফতরের স্বতন্ত্র প্রতিমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং এবং সংশ্লিষ্ট শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বেলা ১১:৪৫ মিনিটে গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সোজা চলে যান অসম প্রশাসনিক পদাধিকারী মহাবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে। বড়ঝাড় বিমানবন্দরে অমিত শাহকে উষ্ণ স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, অর্থ-স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী তথা নেডা-র আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা, শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচাৰ্য, বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিজেপি-র অসম প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস, দলের কয়েকজন নেতা এবং প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকরা।