উন্নয়নের বিরোধিতা করি না। তবে উন্নয়নের নামে যত্রতত্র গাছ কাটার বিরোধিতা করি: পায়েং
ভরলুমুখে উত্তর গুয়াহাটি সংযোগী সেতু নির্মাণের জন্য ১০০ বছরের পুরনো গাছ কেটে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এর বিরোধিতায় নেমেছেন ‘অরণ্যমানব’ পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত যাদব পায়েং। গাছ সংরক্ষণের দাবিতে গুয়াহাটির ভরলুমুখে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে অবস্থিত শংকরদেব উদ্যানে মঙ্গলবার সকালে এসে উপস্থিত হন তিনি। তাঁর সঙ্গে দেন এলাকার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
উল্লেখ্য উত্তর গুয়াহাটির সঙ্গে গুয়াহাটি মহানগরের সংযোগরক্ষায় সেতু তৈরি করার জন্য রাজ্যের পূর্ত দফতর ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে প্রায় ৩০০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই গাছগুলি প্রায় ৭০ থেকে ১০০ বছরের পুরনো। গুয়াহাটিরে বহু পরিবর্তনের নীরব সাক্ষী এই গাছগুলি এতদিন দিয়ে এসেছে ছায়া ও অক্সিজেন। আজ প্রগতি ও উন্নয়নের স্বার্থে গাছগুলিকে হত্যা করা হবে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের আয়োজনকে সহজে মেনে নিতে পারছেন না যাদব পায়েং।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি উন্নয়নের বিরোধিতা করি না। তবে উন্নয়নের নামে যত্রতত্র গাছ কাটার বিরোধিতা করি।’ এদিন পায়েঙের সঙ্গে ছিলেন অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, স্কুলের ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন সচেতন নাগরিক এবং কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের কর্মকর্তারা। সকলের উপস্থিতিতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে গাছ সুরক্ষার খাতিরে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি জানান পায়েং। ‘সেভ ট্রি সেভ এনভায়রনমেন্ট’ স্লোগান সংবলিত হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে পায়েঙের সঙ্গে প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বহু ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীরা ছিল।
বিভিন্ন উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়ে যাদব বলেন, সে-সব দেশের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে প্রতিকূল কোনও উন্নয়নমূলক কার্যসূচি গ্রহণ করা হয়নি। বরং প্রকৃতির সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি সরকারকে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রয়োজন সাপেক্ষে উচ্চ কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহৎ সংখ্যক গাছ না কেটে সেতু নির্মাণের আহ্বান জানান। তিনি ছাত্রছাত্রীদের যত সম্ভব গাছের চারা রোপণ করা ও তাদের প্রতিপালন করার আহ্বানও জানান।
উল্লেখ্য, কংক্রিটের মহানগরে গড়ে ওঠা শঙ্করদেব শিশুউদ্যানে কচিকাঁচা থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা, অনেকেই কিছু সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটানোর জন্য আসেন। এর আগে ১০ নভেম্বর গুয়াহাটির ভরলুতে অবস্থিত শংকরদেব পার্ক এবং আজানপীর পার্কের প্রায় তিনশো গাছ কেটে গুয়াহাটি-উত্তর গুয়াহাটি সংযোগী সেতু নিৰ্মাণের প্রতিবাদে মানবশৃঙ্খল গড়েছিলেন পশ্চিম গুয়াহাটি নাগরিক সজাগতা মঞ্চ-এর কর্মকর্তারা। সচেতন নাগরিকরা গাছগুলিকে সুরক্ষিতে রাখার দাবিতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে মানবশৃংখল তৈরি করে প্রতিবাদ করেছিলেন। এদিকে নবপ্রজন্মের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীও গাছ কাটার প্রতিবাদ করে গাছ বাঁচানোর জন্য নীরব আন্দোলন করে চলেছে। ফিউচার গুয়াহাটি টিম নামের এক সংগঠন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে চলছে। তারাও সরকারের গাছ কাটার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।